১০০ টাকা এবং পরাজিত স্বপ্ন
----- মোঃ আবদুল বাতেন
মুহিতের অনেক দিনের স্বপ্ন দামী এক জোড়া এ্যাপেক্স জুতা কিনবে। একসাথে অনেক টাকা জমানো হয় না তাই তার স্বপ্ন স্বপ্নেই খেলা করে। সাথের বন্ধুদের পায়ে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে আমিও কিনবো এ রকম জুতা। গত মাসের মুহিতের একবন্ধু শহর থেকে গ্রামে এসেছে। জিন্স প্যান্টের সাথে কি সুন্দর খয়রী রং এর এক জোড়া জুতা পারে আছে। বার বার মুহিত সেই জুতার দিকে তাকাচ্ছে দেখে শহরের বন্ধু বলল- এটা এ্যাপেক্স ব্যান্ডের শো-রুম থেকে কিনা, বাজারে নতুন এসেছে। মুহিত দাম জিজ্ঞেস করেনি। ভাবলো বেশি হলে ৮০০-৯০০ টাকা হবে। মুহিত ৩০০-৪০০ টাকার বেশি দামের জুতা কখনোই পরেনি। বন্ধুর পায়ে এত সুন্দর জুতা দেখে মনে মনে সাজাতে লাগলো ঐ রকম এক জোড়া জুতা কিনবে। তারপর গ্রামে পায়ে দিয়ে হাটবে সাথে জিন্স প্যান্ট আর টি-শার্ট। কি দারুন না লাগবে দেখতে। গ্রামের সহ বন্ধুরা পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে- এ্যাপেক্স ব্যান্ডের, বাজারে নতুন অনেক দামী। সে কি আনন্দময় স্বপ্ন। বাবাকে বলে রেখেছে আগামী মাসে জুতা কিনবে। এটা আর পরা যায় না, পুরানো তা আবার তালি দেওয়া। মুহিত জানে বাবার সীমিত আয় বেশি হলে ৩০০ টাকা দিবে। মায়ের কাছে বলে ১০০ টাকা নেওয়া যাবে। পাশের বাড়ির এক চাচাত ভাইকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেছে মুহিত। চাচী কম দিলেও ৩০০ টাকা দিবে। আরো ১০০ টাকা এদিক ওদিক থেকে জোগাড় হয়ে যাবে। প্রতিদিন প্রাইভেট, নিজের পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে সংসারের কাছে সহযোগিতা করে মুহিত। ক্যালেন্ডারে দিন গুনে আর ভাবে কিছুদিন পরে আমিও দামী জুতা পরে হাঁটবো। মাস শেষে বাবা দিলো ৩০০ টাকা, মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা আর চাচী দিলো ৪০০ টাকা। এক বন্ধুর কাছ থেকে ঋণ করলো ৫০ টাকা। মোট ৮০০ টাকা নিয়ে অন্য এক চাচাতো ভাই সহ থানা সদরে গেলো দামী জুতা কিনতে। দুই জন এই দোকান ঐ দোকানে যায় কিন্তু কোন জুতা কেনার মিল করতে পাচ্ছে না। অনেক খোঁজার পর এ্যাপেক্স এর দোকান দেখে মুহিতের চোখ বড় হয়ে গেলো। জুতা কিনতে এতো বড় দোকানে কখনো যায়নি মুহিত। মুহিত ভাবতো ঐ সব বড় বড় দোকান বড় লোকদের জন্য। বড় লোকের অনেক টাকা আছে তাই তারা দামী জুতা পরে। আজ মুহিতের নিজের কাছে কেন যেন বড় লাগছে। এতো বড় দোকানে এসেছে জুতা কিনতে। খুঁজতে গিয়ে পেয়ে যায় ঐ স্বপ্নের প্রিয় জুতা। এটাই কিনবে মুহিত। জুতার গায়ে দাম লিখা আছে ৮৫০ টাকা। মুহিতের চোখ খুশিতে বড় হয়ে উঠলো। মনের ভেতর আনন্দের ভরে গেলো। ৮৫০ টাকার জুতা দোকানীকে বলে ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারবে। বাড়ি থেকে আসতে ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। যেতে লাগবে ৫০। আর ৭০০ টাকা জুতা। দোকানী মুহিত কে নরম ছোপায় বসিয়ে নিজ হাতে পায়ে জুতা লাগিয়ে বলল, আয়নায় দেখেন কেমন দেখাচ্ছে। মুহিত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, দাম কত? দোকানী বলল, ৮৫০ টাকা। মুহিত দোকানীর চোখে তাকিয়ে বলল, ৭০০ টাকা দেওয়া যাবে না ? দোকানী- এগুলো সব একদামের জুতা। এখানে কেউ দামাদামী করে না। গায়ের দামে যা আছে তাই দিয়ে কিনে। মুহিত মনে মনে ভাবে আরো ৫০ টাকা বলি, প্রয়োজনে দু’জন হেঁটে বাড়ি যাব। মুহিত বলল, ভাই আরো ৫০ টাকা দিব। দোকানী কিছুটা বিরক্ত হলো এবং বলল, না হবে না, একদাম, অন্যটা দেখেন। হঠাৎ করে মুহিতের মনটা বিষন্ন হয়ে গেলে। যদি আর ১০০ টাকা থাকতো তাহলে জুতা কিনতে পারত। চাচাত ভাইকে জিজ্ঞেস করল, তোর কাছে কত আছে। সে বলল ৩০ টাকা। মুহিতের থানা সদরের পরিচিত কেউ নেই যে, তার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেবে। এ্যাপেক্স শো-রুম থেকে বের হয়ে মুহিত বলল, চল বাড়ি যাই, আজ আর জুতা কিনবো না। চাচাত ভাই বলল, চল অন্য দোকানে ৭০০ টাকার মধ্যে একজোড়া কিনে নেই। মুহিত গম্ভির হয়ে বলল, আজ আর জুতাই কিনবো না, বাড়ি চল। দু’জন বাড়ির পথে পা বাড়ালো। মুহিতের অজান্তেই মুহিতের চোখে ১০০ টাকার জন্য জুতা কেনার স্বপ্ন অশ্রু হয়ে ঝরতে পড়তে লাগল।