ফাতেমা জাহান লুবনা

নারী জাতিকে মূল্যায়ন করুন 

ফাতেমা জাহান লুবনা

1)লেখাতে বা প্রফাইলে নারী ছবি ব্যবহার বর্জন করুন ।আসলে এতে আপনি নারী জাতিকে সম্মান নয়;অসম্মানিতই করছেন।বস্তু কিনতে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য বিজ্ঞাপন ব্যবস্থাপনার আয়োজন করা হয়।নারী ভোগের সামগ্রী নয় যে যত্রতত্র তার ছবি ব্যবহার করবেন ।নারীর রূপ -লাবণ্য নয়;নারীর মন-মননের মূল্যায়ন করুন।
2)অনেকেই এই কথাটা বুলির মতোই ব্যবহার করেন যে ,নারী ছলনাময়ী।আসলে ছলনায় পুরুষরাও কম কিসে?তবে একজনের অপরাধে সারা পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করা যেমন অন্যায়, তেমনই কিছু নারীদের জন্য পুরো নারী জাতিকে এধরণের উপমা দেওয়া অবৈধ ।
3)নারীরা অধিক হারে জাহান্নামে যাবে ---এই হাদিসটি যারা নারীদের হেন করতে বলেন তাদের জন্য জানিয়ে রাখছি কিছু কথা ।দুনিয়ার শেষের দিকে পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যাধিক্য এতটাই হবে যে হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি একজন পুরুষের তত্ত্বাবধানে প্রায় চল্লিশ জন নারী থাকবেন ।আর অন্য একটি বিষয়ও আমাদের জানা প্রয়োজন ।তাহল জান্নাতে প্রতিটি পুরুষ দুনিয়ার নারীদের থেকে দুটি নারীকে স্ত্রী হিসেবে পাবে।অতএব নারীরা জাহান্নামেই কেবল অধিক নয়;জান্নাতেও অধিক হবেন ।
4)আপনি পুরুষ হলেই ভাববেন না যে আপনি নারীর তুলনায় শ্রেষ্ঠ হয়ে গেছেন।সব নারীর মর্যাদা যেমন সমান নয় ;তেমনই সব পুরুষ ও সম মর্যাদার নয়।প্রত্যেকের মর্যাদা আল্লাহ্ র কাছে ভিন্ন ভিন্ন ।অনেক পুরুষ হতে ও একজন পুণ্যবতী নারীর মর্যাদা অধিক।
5) মেয়েশিশুকে ছেলেশিশুর তুলনায় অধিক স্নেহ ,অধিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে জীবনের সূচনা লগ্ন থেকেই বঞ্চিত করবেন না।তাদের সমান সুযোগ সুবিধা দিয়ে জীবনে সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দিন ।তবে কিছু কিছু ব্যবধান আছে যেটা করতেই হয়।যেমন ছেলেকে আপনি রাতে একা পাঠালেও মেয়েকে ছাড়বেন না।দূরে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বয়সটাকে নজরে রাখবেন ইত্যাদি ।
6)আপনার ছেলে নেই বলে কি আপনার বংশ রক্ষা হবে না?ছেলেরাই কি বংশের প্রদীপ? আমাদের নবীজীর বংশধর কিন্তু আজও পৃথিবীতে আছেন এবং হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন কেয়ামত পর্যন্ত থাকবেন যাঁরা তাঁর মেয়ে হযরত ফাতেমা (র) এর উত্তর সূরী।সন্তান ছেলে বা মেয়ে বড় কথা নয় আসল কথা হল তাকে ইসলামিক শিক্ষা এবং ইসলামের সৌন্দর্য দিয়ে মানুষ করতে পারা। তবেই তা হবে আপনার জন্য দুনিয়ার শান্তি এবং পরকালের জান্নাত স্বরূপ ।
7)সন্তান পালনের দায়িত্ব কেবল মায়ের আর আয় রোজগারের দায়িত্ব বাবার ----এই কথা যারা মনে করেন তাদের জন্য বলে রাখি আসলে সন্তান পালনের দায়িত্ব বাবা -মা উভয়েরই।সন্তান যখন ভালো ফলাফল করে আপনি যেমন গর্ব করে বলেন আমার ছেলে বা আমার মেয়ে, তেমনই এই ছেলে বা মেয়েকে লেখাপড়া সহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে সঠিকভাবে মানুষ করার দায়িত্ব ও কিন্তু আপনার আছে ।সন্তান পালনে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুন এই কথাটা যতটা বলব তার চেয়ে অধিক বলতে চাই আপনি সন্তান পালনে নিজ দায়িত্ব পালন করুন ।
8)ঘরের কাজকর্ম স্ত্রীর দায়িত্ব ---এটা অনস্বীকার্য ।তবে সহযোগিতা করুন তাকে ।অনেক সময় গৃহকর্মে সহযোগিতা করার মতো কেউ থাকে না।তখন আপনি ও যদি নিজ কাজকর্ম শেষে বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা করেন তবে স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব কিন্তু পুরোপুরি পালন করা হবে না।আমাদের নবীজী(স)এর জীবনী পড়লে আমরা জানতে পারি তিনি অবসরে গৃহকর্মে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতেন ।পৃথিবীর বীর পুরুষ হয়ে ও যদি তিনি লজ্জা না পেয়ে থাকেন তবে আপনি কেন লজ্জা পাবেন?
9)পর্দায় রাখুন আপনার স্ত্রী ও মেয়েকে,পর্দায় রাখুন আপনার বোনকে ।সে যদি পর্দা করতে না চায় তবে তাকে বিভিন্ন কৌশলে বুঝানোর চেষ্টা করুন ।হয়ত একদিন আপনি সফল হবেন ।
10)আপনার স্ত্রীকে সময় দিন ।তাকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিরিবিলি নদীর ধারে।অথবা কোনও পার্কে সময় কাটাতে পারেন ।ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন কোনো আত্মীয় বা বন্ধু বাড়ি ।সেটা আপনার আত্মীয়ই হতে হবে এমন নয়।তার ও হতে পারে ।এতে করে তার মন সজীব হবে ।আর আপনি ও ফিরে পাবেন পুনরায় কাজের উদ্দাম ।
 
Top