গল্প ও একটি গান...বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেদনাদয়ক মর্মান্তিক হত্যাকান্ড //গল্প ও হৃদয় বিদারক একটি গান// এই পোষ্ট মানবতাবোধ জাগ্রত করার জন্য/ শেয়ার করুন।
-----------------------------------
------------মো. আব্দুল বাতেন
তাজু মোলা দুপুরের পর থেকে আর কোন কথা বলছেনা। কিছুক্ষন পর পর বাড়িতে একজন আসে আর এক খবর দিয়ে যায়। সাবিনা কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বারান্দায় বসে বসে মোবাইল দিয়ে কাকে যেন কল করছে। আর তাজু মোলার স্ত্রী শামছুন্নাহার রান্না ঘরে বসে বসে কাঁদছে। তাজু মোলার ছেলেকে আজ সকাল থেকে বার বার টিভিতে দেখাচ্ছে একটা চাপাতি হতে নিয়ে একটা ছেলেকে মারছে। তাজু মোল্লার ঘরেও টিভি আছে কিন্তু ডিস লাইন নাই,সাবিনা তারপরও উঠে গিয়ে কয়েকবার দেখেছে টিভিতে কিছু দেখায় কিনা , টিভিতে সারাদিন দেশের উন্নয়ন আর শেখ মুজিব, শেখ হাছিনা ছাড়া কিছু নাই, গ্রামে bazar a ডিস লাইন আছে সেখানে সারা গ্রামের মানুষ এক সাথে খবর দেখে, আজ কয়েক দিন ধরে ঢাকার হরতাল, অবরোধ তাই খবরের সময় হলেই আলমগীর ভূইয়ার চায়ের দোকানে মানুষ ধরে না।
তাজু মোলা গ্রামের সম্মানী লোক। এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেকে অনেক কষ্টে গ্রাম থেকে H.এস,সি পাশ করিয়ে ঢাকা Jaবিতে ভর্তি করিয়েছে। প্রতি মাসে পুকুরের মাছ বিক্রি,গরুর দুধ বিক্রি নিজে ভাল কিছু না খেয়ে ছেলেকে টাকা পাঠায়। ছেলে যেন মানুষের মত মানুষ হয়। কয়েক দিন আগে শাকিল বাড়ি আসছিল। তাজু মোলা ছেলের চলাফেরা দেখে স্ত্রীকে বলেছিল পোলা মনে হয় অমানুষ হইবো। শামছুন্নাহার তাজু মোলার কথাকে পাত্তা দিলনা।
সকাল থেকে শাকিলের মোবাইল বন্ধ। দুপুরের দিকে শাকিলের গ্রামের বন্ধু আতিক এসে তাজু মোল্লাকে ডেকে বাড়ির বাহিরে নিয়ে গেলো, আতিক বলল, চাচা শাকিল যারে মারছে, ছেলেটা মারা গেছে। আর ছেলেটা হিন্দু,ঢাকার পরিস্থিতি ভাল না। শাকিল যে কোন সময় গ্রেফতার হইতে পারে, আর সাংবাদিক পুলিশ আজ আপনার বাড়িতে আসাতে পারে কি কইবেন ভাইবা লন। তাজু মোলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। বুকের ভিতর হঠাৎ করে নতুন করে একটা চাপ অনুভব করলো যেন কেউ একটা পাথর চাপা দিয়ে আছে। তাজু মোলা চোখের সামনে ছায়াছবির মত অনেক গুলো sopno কেপে উঠল। শাকিল শিক্ষা জীবন বিদায় নিয়ে গ্রামে ফিরবে,চাকুরী করে সংসারের হাল ধরবে, কিন্তু চোখের জলের সাথে সাথে স্বপ্নগুলো উদাও হয়ে গেলো।
এতক্ষনে সারা গ্রাম জুড়ে আলোচনা হতে লাগলো তাজু মোলার ছেলে শাকিল খুনি। পাশের বাড়ির মমতাজের মা প্রায়ই তাজু মোল্লার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে ,আজ মুখের উপর অনেকগুলো কথা বলে গেলো। ও মা কি ডাকাত পোলা জন্ম দিলো। দিনের বেলায় সবার সামনে একটা ছেলেরে কিভাবে কোপাইয়া মারছে। এমন ছেলের মা হওয়ার চাইতে মরণ অনেক ভাল। তাজু মোল্লার স্ত্রী কোন কথার জবাব দিতে পারেনি । কিছুক্ষণ আগে সাবিনার বান্ধবী তাবাসসুম এসেছে। সাবিনা তাবাসসুমকে সব সময় বলতো আমার ভাবি বানাবো তোকে। সেই তাবাসসুম আজ এসে বলল তোর ভাই নাকি অনেক ভাল, ঢাকায় পড়ে, ঢাকায় না পড়ে ডাকাতি সন্ত্রাসী করে। আজ আমি টিভিতে নিজ চোখে দেখলাম, ও আল্লাহ এমন ভাই পৃথিবীতে আর যেন কাউকে না দেয়।
তাজু মোল্লার বাড়িতে উঠানে এক পাশে গাটের ঘরের সামনে ভাঙ্গা চেয়ারের উপর বসে বসে সব শুনছে। ইতোমধ্যে গ্রামের মানুষ এসে তাজু মোলার বাড়িতে ভিড় করেছে। কারন থানা থেকে এক গাড়ি পুলিশ এসেছে। কয়েকজন সাংবাদিক তাজু মোল্লাকে প্রশ্ন করছে, তাজু মোল্লা কোন কথা বলছে না। আতিক বলল চাচা কিছু বলেন তা না হলে আরো সমস্যা হতে পারে, তাজু মোল্লা মুখ খুলল, আমি কি কমু, এটা আমার ভাগ্য,এক সাংবাদিক বলল ,শাকিল যে ছাত্রলীগ করতো আপনি জানতেন ? তাজু মোল্লা সত্যি বলল : হ্যা, আমি জানতাম , মধ্যখানে সে একবার বাড়ি আইছিল, তার চলাফেরা কথাবার্তা আমার ভাল লাগে নাই। পরে খবর নিলাম সে ছাত্রলীগ করে ,মদ খায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি করে, আমি সবি জানতাম, কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। অন্য আরেক জন বলল, এখন আপনার বক্তব্য কি? তাজু মোল্লা সবার দিকে একবার তাকালো তার পর বলল, মানুষের সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় পড়লে গর্ব করে ,আর আমি এমন এক বাবা যার গর্ব করার কিছু নাই,আমার মত কেউ যেন ছাত্রলীগের বাপ না হয়। তাজু মোল্লা সাক্ষাৎকারে আর কোন কথা বলতে পারলো না। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো।
সন্ধ্যার পর তাজু মোল্লা বারান্ধায় বসে আছে, সাবিনা আর তার মা ঘরের ভেতর কাঁদছে।
পরদিন সকালবেলা তাজু মোল্লা নিজেই বাজারে এসে আলমগীরের চায়ের দোকানে বসে আছে। বিদ্যুৎ নেই তাই খবর দেখা যাচ্ছেনা। বাজারে তেমন মানুষ নেই ,যারাই আছে হয়তো বিদ্যুৎ আসলে খবর দেখে বাড়ি যাবে। আলমগীরের দোকানে বিদ্যুৎ না আসলেও অনেক ভিড় ,তাজু মোল্লাকে সবাই দেখছে যেন আর কখনো দেখেনি, ৯টার খবরে দু‘মিনিট আগে বিদ্যুৎ আসলো, বাজারের সবাই আলমগীর এর দোকান ঘিরে আছে, সংবাদ শিরোনাম যখন বলল, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী চাপাতী শাকিল গ্রেফতার, রক্তমাখা চাপাতী উদ্ধার, এই কথা শুনে মাত্র তাজু মোলা উঠে দাড়ালো আবার দোকানের গরম চায়ের কেতলীর উপর ধপ করে ঘুরে পড়ে গেলো, সবাই তাজু মোল্লাকে টেবিলের উপর ধরে শুইয়েছিল। স্থানীয় ডাক্তার সেখানেই ছিল তিনি হাতের শিরা ছেড়ে বলল, মারা গেছে। আর তখন টিভিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশের মধ্যে শাকিল(V)ভি চি দেখিয়ে হাসছে। গ্রামের সবাই খবর দেখা শেষ না করেই তাজু মোল্লার লাশ নিয়ে তার বাড়িতে রওনা হলো।
বিঃ দ্রঃ
২০১৩ সালে সমস্ত পৃথিবীতে যত গুলো হত্যাকান্ড হয়েছে মিডিয়ার সামনে তার মধ্যে নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড হলো “বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড” ।
সেই হত্যা মামলার প্রধান আসামী চাপাতি শাকিল এর বাবা মারা যায় ঐ ঘটনার পরপরই।
আদালত চাপাতি শাকিলের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে।
বাস্তবায়ন হবে কিনা জানি না, আদৌ কি কার্যকর হবে এ রায়.......?
==================
গানটি শুনতে এখানে ক্লিক করুন
বিশ্বজিৎ কে নিয়ে একটি গান