প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন? তাতে কি?:

হয়তো আপনার প্রেমিক /প্রেমিকা আপনাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করেছে অথবা বিয়ে করেছে ।অথবা হতে পারে আপনি প্রথমেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন অযোগ্য বা অসুন্দর বা আনস্মার্ট হওয়ার দরুন বা অন্য কোন কারণে।বয়েই গেল ।আপনি কি ভাবছেন আপনার জীবন ব্যর্থ? আপনার কি মাঝে মাঝে আত্মহত্যা করতে মনে চায় বা কাউকে খুন করতে ইচ্ছে হয়? তবে আমার কিছু কথা শুনে রাখুন । আমি অনেক জ্ঞানী নই তবু কথা গুলি হয়তো আপনার জীবনে কাজে লাগবে; আপনার জীবনকে হয়তোবা বদলে দিতে পারে ।
প্রথম কথা হল আপনি ব্যর্থ এই চিন্তাকে মন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।ব্যর্থতা ও সফলতা কি জিনিস তা আগে আমাদের জানতে হবে ।আর তা জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে কি কারণে পৃথিবীতে আমাদের আগমন ঘটেছে?প্রেম কি ও কেন? ইত্যাদি সহ কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আল্লাহ্ পবিত্র কোরআন এ উল্লেখ করেছেন:"আমি জীন ও মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।" (সূরা যারিয়াত)।
সুতরাং আমাদের জীবন সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ্ র ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা।সুতরাং আল্লাহ্ র ইবাদত করতে না পারলেই আমাদের জীবন ব্যর্থ; প্রেমে ব্যর্থ হলেই জীবন ব্যর্থ নয়।এখন জানা যাক আল্লাহ্ র ইবাদতটা কি ও তা কিভাবে করা যায়? রান্নার পদ্ধতি না জেনে রান্না করলে যেমন রান্না সুস্বাদু হয় না তেমনই ইবাদত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলেও ইবাদত ঠিক ভাবে করা যায় না ও ইবাদতের মাঝে আনন্দ আসে না।
ইবাদত বলতে আমরা অনেকে মনে করি নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাতকেই।আসলে এগুলো ইবাদতের আওতায় পড়ে তবে কেবল এসবের অর্থ ই ইবাদত নয়।ইবাদত বা দাসত্ব করা শব্দটি তার চেয়েও ব্যাপক।এক আল্লাহ্ র উপর বিশ্বাস রাখতে হবে এটা হল ইবাদতের প্রথম কথা ।আগের কালে প্রচলিত দাস প্রথা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি।দাস যদি একাধিক মুনীবের বাড়ি বাড়ি কাজ করে তবে কিন্তু সে একনিষ্ঠভাবে এক মুনীবের হতে পারে না।আর আমাদের ক্ষেত্রে কথা হল আমাদের সবার সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ্ এক ;বহু নয়।তাই ইবাদতের প্রসঙ্গে বহু স্রষ্টার ইবাদত করলে সে ইবাদত আল্লাহ্ র কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।অর্থাৎ তা ইবাদতই হবে না।আর তাঁর একত্ববাদ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন :
"যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র ।" (সূরা আম্বিয়া;২২ )
তিনি আরও বলেন :
"আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র ।" (সূরা আল মু’মিনূন;৯১ )
অর্থাৎ ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহ্ র ই;অন্য কারো নয়।আল্লাহ্ র একত্ববাদ, তাঁর নবী-রাসূলগণ,ফেরেশতাগণ,আসমানি কিতাবসমূহ, পরকালের জীবনে দুনিয়ার জীবনের হিসাব নিকাশ ইত্যাদি বিষয়ে ইমান বা বিশ্বাস স্থাপনের পরে আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে ।আল্লাহ্ বলেন :
"নিশ্চয়ই যারা ইমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত ।"(সূরা বুরুজ,11)
অর্থাৎ ইমানের পরে আমাদের নেক বা উত্তম কাজ করতে হবে।দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,বছরে একমাস রমজানের রোজা,সামর্থ্যবানের জন্য জীবনে একবার হজ্জ এবং সামর্থ্যবানদের জন্য সম্পদের যাকাত প্রদান ফরজ বা অবশ্যই পালনীয় ;এগুলো নেক কাজের অন্তর্ভুক্ত বটে।তবে এগুলোই সব নয়।আমাদেরকে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টাই আল্লাহ্ র ইবাদত করে কাটাতে হবে।এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে মনে হতে পারে।আসলে এটা কঠিন কোন কাজ নয়।
আমাদের জীবন চলার ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে যদি আল্লাহ্ র আদেশ নিষেধগুলি মেনে চলি তবেই চব্বিশ ঘন্টা আমাদের আল্লাহ্ র ইবাদতের মধ্যে সামিল হবে।আর নামাজ পড়ার পরে মিথ্যা কথা বললে বা চুরি করলে অথবা অন্য কোন খারাপ কাজ করলে তার নামাজের সওয়াব বা নেকি এক পাল্লায় জমা হলেও অন্য পাল্লায় অনেক গুলি বদী এসে জমা হয়ে পাল্লাকে ভারী করে দিতে পারে।তখন শেষ বিচারের দিন মিজান বা দাড়িপাল্লায় বদীর দিক ভারী হওয়ায় অনেক মুসলিমদের ও ভাগ্যে জুটবে জাহান্নামের অগ্নিশিখা।
সুতরাং পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামে প্রবেশ করলেই কেবল পুরোপুরি সাফল্য লাভ করা যাবে।আর পালনের জন্য অবশ্যই জানতে হবে। আল্লাহ্ র আদেশ নিষেধগুলো জানতে হলে আমাদের কোরআন ও মুহাম্মদ (ছ)এর কথা ও কাজ (হাদিস )কে অনুসরণ করতে হবে।
(চলবে )
 
Top