রূপগল্প :: স্বাধীনতা
আকলিমা সূমা
_____________________
বনের ধারে একটি ছোট গ্রাম। সে গ্রামে এক কৃষক বসবাস করতো। তার অনেক হাঁস-মুরগীও ছিলো। সে ছেলেপুলে নিয়ে মহাসুখে দিনাতিপাত করতো।
বনের ধারে বাড়ি হওয়ায় শিয়ালের উপদ্রব ছিলো। যখন-তখন কৃষকের হাঁস-মুরগী ধরে নিয়ে যেতো। তবে কৃষকের ছিলো বেজায় বুদ্ধি।
সে খামারের মতো চারদিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে,
গৃহপালিত প্রাণীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলো।
এবার শিয়ালের মাথায় বজ্রপাত! সে আর আগের মতো শিকার ধরতে পারে না।
দিনে দিনে অনাহারে শিয়ালের অবস্থা করুণ!
রাতের বেলা খামারের চারদিকে পায়চারী করে,
আর মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে।
কি করা যায়! কিভাবে আগের মতো মুরগি ধরে মজা করে খাওয়া যায়?
কয়েকদিন ধরে কৃষকের জ্বর হয়েছে, সে আর খামারে কাজ করতে পারছে না। তাই তার স্ত্রীর উপর দায়িত্ব পড়েছে। নানান কাজের চাপে সে খামারে ঠিকমতো- খাবার দিতে পারে না।
এদিকে হাঁস-মুরগীরও যত্নে টান পড়েছে।
শিয়াল ভাবে- এইতো সুযোগ!
রাতে খামারের ফাঁক দিয়ে শিয়াল, মুরগিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ভয়ে সব জড়সড় হয়ে পড়ে। শিয়াল চালাকি করে বলে- ' আমি তোমাদের বন্ধু। দেখ- তোমাদের কি অবস্থা, তোমরা সবাই বন্দি জীবন-যাপন করছো।
আমার কথামতো কাজ করলে, তোমরা আবার আগের মতো স্বাধীনতা ফিরে পাবে- মুক্ত হয়ে চরে বেড়াতে পারবে।"
বয়স্ক এক মুরগী বাচ্চাদের নিয়ে বসে ছিলো।
সে ভাবলো, শিয়ালের বুদ্ধি মন্দ নয়। তার বাচ্চাদের স্বাধীনতার জন্য শিয়ালের যুক্তিটা শোনা যায়।
মুরগী, শিয়ালের কাছে পরামর্শ চায়।
শিয়াল বলে- ভোরে যখন কৃষকের বউ তোমাদের খাবার দিতে আসবে, তখন তাকে ক্রমাগত ঠোঁকরাতে থাকবে। অার সুযোগবুঝে খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। মাঠ পেরিয়ে হিজলতলে আমার আস্তানা, ঐ খানে আমি তোমাদের অভ্যর্থনা জানাবো। তোমাদের পূনর্বাসনের সব দায়িত্ব আমার।'
মুরগীর কাছে ওয়াদা করে শিয়াল বিদায় নিলো।
সেরাতে মুরগির আর ঘুম হলো না। এক হাঁস বললো, এটা শিয়ালের চাল। সে তোমার বাচ্চাদের ঘাড় মটকাবে, তারপর তোমার পালা। আমরা কৃষকের ঘরেই সুখে আছি।'
মুরগী, হাঁসের কথায় ধমক দিলো, হাঁসকে রাজাকার বলে গালাগালি করলো।
ভোরবেলা মুরগিটি শিয়ালের কথামতো কাজ করলো- দীর্ঘ ৯ মিনিট প্রাণপণ সংগ্রাম করে স্বাধীনতা লাভ করলো। বাচ্চাসহ শিয়ালের আস্তানায় শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিলো।
শিয়ালের খুশির অন্ত নেই। মুক্তি পেয়ে মুরগিটি শিয়ালের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
পরদিন সকাল হতেই মুরগি দেখে তার একটা বাচ্চা নেই। সে শিয়ালের কাছে জানতে চাইলো। শিয়াল, মুরগিকে বুঝালো যে, তোমার ঐ বাচ্চাটিকে বনের অপর পাশে আমার বোনের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখানে বাচ্চাটি ভাল যত্নে বড় হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসবে।'
মুরগি ভাবে- ভালোই তো। শিয়াল তার মহা উপকারী। দিন গড়াতে থাকে। মুরগির বাচ্চাগুলো উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। বড় হয়ে মা মুরগিকে ভুলে যায়, আর ফিরে না কোনদিন। মুরগি আবার ডিম দেয়, বাচ্চা ফুটে, আর শিয়ালের প্রয়োজন মিটে।
আহা! কি দারুন, মুরগির স্বাধীনতা!