মরুর ঢেউয়ে ভাসা মন
জীবনের সকল আনন্দ বুঝি এর মাঝেই লুকায়িত । নাকি এর নামি
জীবন ? ঠিক বুঝতে পারছি না । তবে মনে প্রানে খুব ইচ্ছে করছে ঐ জীবনের স্বাদ
গ্রহন করতে কেনইবা করবে না বলুন এখন রাত ১ টা ২৫ মিনিট, আমি আমার সহপার্টি
সহ দারিয়ে আছি পৃথিবীর সর্ব বৃহত্ মরুভুমি সাহারার ছোবলে আক্রান্ত সুদান
নামক রাষ্টের লাবাডোর বুকে, চোখের সর্ব নিম্ন দৃষ্টি সীমা থেকে সর্ব উচ্চ
দৃষ্টি সীমার চারিদিকে উত্তপ্ত বালুর বুকে
হঠাত্ হঠাত্ চোখে পরে ১টি বা ২টি বাবলা বৃক্ষের । যদিও এখন তা দেখতে পারছি
না । চারদিকের জনমানব, অরন্য হীন এই ধুধু মরুভুমির নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার
আর ঊত্তপ্ত বাধাহীন বাতাসে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দিতেই আমার
মাথায় একটা প্রশ্ন ঢেউ দিয়ে গেলো । প্রশ্নটা এরকম, "উটকে মরুভুমির জাহাজ
বলা হলো কেন ? " মরুভুমির বিমান, মরুভুমির বাস, মরুভুমির ট্রাক, মরুভুমির
লরি বা মরুভুমির ট্রেন বলতে পারতো । কিন্তু তা না বলে "মরুভুমির জাহাজ"
বলার কারনটাই বুঝলাম চার দিকের নিশ্চুপ পরিবেশের বাস্তব রুপটা দেখে ।
সাগরের সাথে মরুভুমির কি আশ্চার্য্য মিল, ব্যবধান শুধু পানি আর বালুর। আমার
মনে হতে লাগলো আমি দাড়িয়ে আছি বঙ্গপোসাগরের ঠিক মাঝে, অদুরে কোন এক
জাহাজের লাল আলো ভেসে আসছে নিরেট অন্ধকারের বুক ভেদ করে। যা কোন এক উট
রাখালের লন্ঠন বলে জানলাম । বাবলা গাছ গুলো দিনের বেলায় সাগরের ঘুর্নয়ন
বিন্দুর বিপদ সংকেত এর পরিবর্তে ক্লান্ত পথিকের আশ্রয়ের সংকেত দিচ্ছে । এমন
পরিবেশে মায়াহীন অন্ধকারকে সাথী করে চাঁদের লজ্জামাখা আলোয় নিজের গন্তব্য
স্থান নির্বাচন করাতে পারা আর অথোই নদীর মাঝে হারিয়ে যাওয়া স্বর্নের আংটি
খুজে পাওয়া সমান কথা। এই সব ভাবতে ভাবতেই অন্ধকারের কালো আবরন ভেদ করে,
বালুর বুক কেটে পদাংক অংকিত করে বাতাসের সুরে সুর মিলিয়ে সাগরের বুকে ভেসে
বেড়ানো বৌঠা বিহীন পাল তোলা নৌকার মতো ছুটে আসচ্ছে একটি গাধার গাড়ি । হয়তো
শুনে অবাক হবেন এখানে এই গাধার গাড়ীই সর্বস্রষ্ঠ যানবাহন । হাতের
টর্সলাইটের তীব্র আলোয় দেখলাম সেই গাড়ীতে ডান হাতকে বালিশ বানিয়ে নিশ্চিত
ভাবে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ২৫, ৩০ বছরের এক রোগা টাইপের যুবক। পৃথিবীর সকল
চিন্তা এখন তার মস্তিস্কের বাইরে। সে নিশ্চিত জানে বাতাসে ভেসে আসা
গন্তব্যের গ্রান শুকে গধা তাকে ঠিকই নিয়ে যাবে তার আসল ঠাকানায় । গাধার
গাড়ী আসতে আসতে অন্ধকারে মিশে যেতে যেতে আমায় বলে গেলো এর নাম কুল হীন
মরুভুমির বুকে সীমাহীন আকাশে মুক্ত পাখির মতো ভেসে বেড়ানো ।