একটি মেয়ের স্বপ্ন মৃত্যু
==================
আজ সকাল ৭.৩০ মিনিটে একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে । ছালাম দিয়ে বলল , ভাইয়া আমি সালমা , আমাকে চিনেন নাই , আমি কোটালী পাড়া থেকে।
*চিনতে না পাড়ার করন হল প্রায় তিন বছর ঐ পরিবারের সাথে যোগাযোগ নেই । তাই একটু অবাকহলাম ,সামান্য কুশল বিনিময় হল , তারপর বলল এইটা বাসার নম্বর , আব্বু আপনার সাথে একটু পরে কথা বলবে । অনেক কষ্ট করে আব্বু আপনার নম্বর সংগ্রহ করেছে ।। তার ১৫ মিনিট পর ওর আব্বু আমাকে ফোন দিল কুশল বিনিময় হল । তার পর বলল সালমার তো বিয়ে ঠিক হয়েছে , ঈদের পরের বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান । তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে । আমাকে কথা দাও নতুবা আমরা কষ্ট পবো । শত ব্যাস্ততা মাথায় নিয়ে বললাম ইনশা আল্লাহ আসব , বোনের বিয়েতে আসব না তা কি হয় ! জিজ্ঞেস করলম ছেলে কি করে ? সালমা কি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল না দিবে ? ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার , একটা কম্পিউটার দোকানে কাজ করে ।। না বাবা ওর পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হবে না ! কেন আঙ্কেল ? বিয়ের পরে তো ওকে শশুর বাড়িতে থাকতে হবে ওখানে পড়ার সুযোগ পাবে না ।।
মূহুর্তেই আমার আনন্দ মনটা খুব মলিন হয়ে গেল । কারন এই সালমা আর সাধারণ পাঁচটা সালমার মত নয় ! এর ভেতর ছিল লেখা পড়ার প্রবল আকাংক্ষা আর স্প্রিট ।
আমি যখন ফাযিল বি এ , সালমা তখন ক্লাস সিক্সে পড়ে । মাঝে মাঝে প্রন্সিপ্যাল আমাকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ক্লাস নিতে বলতো । ক্লাস সিক্সে যখন ক্লাস নেই তখন দেখতাম ঐ মেয়েটির পড়াশুনায় প্রবল আগ্রহ। শুধু আগ্রহ বললে ভুল হবে ওর চোখে মুখে স্বপ্নে শুধুই লেখা পড়া। মেধা তুলনা মূলক কম হলেও নিজের শ্রমে রোল নং দুই হয়েছে । আমাদের একটা কোচিংসেন্টারে মেয়েটি প্রায় ফার্স্ট হত । আমরা কোচিং এর টিচার সহ কয়েক জন ক্লাস টিচারও অবাক হয়েযেতাম ওর লেখা পড়ার ধ্যান ধারনা দেখে । ওর স্প্রিট দেখে আমরা ওর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতাম . কোচিংয়েও বেতন কিছুটা মওকুফের ব্যাবস্থা করলাম ।
আমি ফাযিল বি এ পাশ করে ঢাকায় কামিল এম এ ভর্তি হলাম । প্রায় এক বছর পর হটাৎ এক দিন ফোন আসল । ছালাম দিয়ে বলল ভাইয়া আমি সালমা , আপনার ছোট বোন কোটালী পাড়া থেকে , আব্বু আপনার সাথে কথা বলবে । ওর বাবা বলল আমরাতো একটা বিপদে পরে গেছি , সালমাকে আর অত দূর মাদ্রাসায় পাঠাতে পারছি না , পথে বখাটে ছেলেরা ওকে ডিষ্টাব করে । ওর ক্লাসের এক ছাত্রও ছিল । ক্লাশ টিচারের কাছে বিচার দেয়া হল , টিচার বরং সে ঐ ছেলেটার পক্ষ নিলে ।তাই ক্ষোভে কষ্টে ওর মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি ।এখন কি করব ? আশেপাশে মাদ্রাসাও নেই । তার ইচ্ছা ছিল মাদ্রাসায় পড়ানো । একটা ইস্কুল আছে সেটা কোটালীপড়া সদর গার্লস ইস্কুল । আমি দূর থেকে শুধু এইটুকু বললাম , আংকেল চিন্তা করে দেখেন যেইটা ভালো হয় সেই ভাবে করেন । পারলাম না তাদের বিপদে পাশে দাড়াতে । ১৫ দিন পর ওর আব্বু ফোন দিল , ওকে অনেক কষ্টে টিচারকে অনুরোধ করে গার্লস স্কুলে ভর্তি করিয়েছি । তারা সালমাকে বছরের মাঝখানে ভর্তি করবে না তারপর মাদ্রাসা থেকে এসেছে , ওতো পাশ করতে পারবে না ! অনেক অনুরোধের পর ভর্তি করল । ২০ দিন পর পরীক্ষা ।। পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়ে আমাকে ফোন করল , ভাইয়া আমি তৃতীয় হয়েছি । ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম , চোখে কিছুটা জলও আসল । কারন ওর ক্লাসে ১০০ এর উপর ছাত্রী ছিল । মনে মনে ভাবলাম মানুষের স্বপ্ন আর শ্রম থাকলে অনেক অসাধ্যকেও সাধন করতে পারে ।
তার পর প্রায় তিন বছর ওদের সাথে আমার কোনও যোগাযোগ নেই । কারন আমার মোবাইল চুরি হওয়ার পর নতুন নম্বর ব্যাবহার করি যেটা তারা সংগ্রহ করতে পারে নি ! আমিও তাদের নম্বর খুজে পাইনি । ।
আজ এটা স্বপ্নের অপমৃত্যু হচ্ছে । প্রত্যেক বাবা মা বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি চিন্তাগ্রস্থ থাকেন । এই সমাজে মেয়ের বিয়ে , গরিব বাবা মায়ের কাছে মহা চিন্তা থেকে পরিত্রান ও আনন্দের খবর ।
এ ভাবে সালমার মত হাজারো সালমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় । জাতি হরায় অনেক মেধাবী মুখ।
#আমার কথা , প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যারা এই লেখাটি পড়েছেন , আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি যারা বিয়ে করেছেন বা করবেন । আপনারা আপনার অর্ধঙ্গীনীর যদি কোন ভালো স্বপ্ন থাকে , তাকে সাহায্য করুন । তার অতীত ইচ্ছার কথা জানার চেষ্টা করুন । পিতা মাতাকেও বলি আপনারা আপনার সন্তানের প্রতিভা বিকশিত করতে সুযোগ দিন ।। হে প্রভু তুমি সবার সৎ স্বপ্ন পুরন কর ।।আমিন ।।
মোঃআলানূর হোসাঈন ।