ধারাবাহিক উপন্যাস
আজাদির রক্ত শপথ ( প্রথম পর্ব)
অধ্যক্ষ ডাঃ এম এ এইচ ফারুক
না,না, আপনারা ভয় পাবেননা। আজ পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত।তবে হায়েনারা গতকাল সিমান্তে কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে ভষ্মিভূত করে ফেলছে, সেখানে সহস্রাধিক নারী পুরুষ শিশু মারা যায়, সবাইকে আশ্বস্ত করে বললেন খালিদ।
নারে বাছা, তারা মারা যায়নি, তারা সবাই আল্লাহর রাস্তায় শাহদাত বরন করেছে।একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে কথাগ্যলো বললেন রহিমুদ্দিন। রহিমুদ্দিন এই বাড়ির সবচেয়ে বয়োজৈষ্ট ব্যক্তি, যিনি নব্বইর দশকের ফিলিস্তিন রক্ষা আন্দোলনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন।২০০১ সালে রামাল্লা শহরে ইজরাঈলী বোমা হামলায় তিনি দু পা হারিয়ে সম্পূর্ণ পংগুত্ব জীবন যাপন করেন।রহিমুদ্দিন পা হারালেও হারাননি মনোবল,তিনি এখনো স্বপ্ন দেখেন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনের, যেখানে থাকবে হায়েনার থাবামুক্ত জনপদ।
মাফ করবেন, আপনি ঠিকই বলছেন, নিঃসন্দেহে তারা শহীদ এবং আমাদের স্বাধীকার আন্দোলনের প্রেরনার উৎস, বললেন খালিদ।
হ্যাঁরে বাবা, যারা দেশ মাতৃকা আর ইসলামের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয় তাদের চেয়ে আর বেশি সৌভাগ্যবান কে হতে পারে? বললেন রহিমুদ্দিন।
খালিদ, গতকালের একটা শর্ট ব্রিফ এবং বর্তমান অবস্থা কেমন বল, বললেন হাফসা বেগম।
জি, মা, গতকাল ভোর ৩টায় ইজরাঈলী সেনারা পশ্চিম তীরে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর উপর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালায়,আমাদের লোকজন কিছুই বুঝে উঠার আগেই পুরো গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয় আর নির্বিচারে মর্টার হামলা চালায়।গ্রামবাসী ঘুমে থাকায় আঁচ করতে পারেনি, এতেই ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়।চিন্তা করবেননা, আমরা গোটা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করছি,আজ পরিস্থিতি অনেক্টা স্বাভাবিক।সমস্যা হলে টাইম টু টাইম আপনারা ইনফরমেশন পাবেন,একটানা কথাগুলো বললেন খালিদ।
আল্লাহ, আমাদের প্রতি আমাদের জাতির প্রতি রহম কর, আমাদের জালিমের জুলুম থেকে হিফাজত কর, কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো বললেন হাফসা বেগম।
সবাই সমস্বরে বললেন,আমিন। আল্লাহ,তুমি আমাদের প্রতি রহম কর।
এই নিন, আপনার নাবিলের চিঠি বলে হলুদ খামটা এগিয়ে দিলেন হাফসা বেগমের দিকে। নাবিল হাফসা বেগমের একমাত্র জীবিত সন্তান।তার আরো পাঁচটি সন্তান ছিল।যাদের দু জন তাদের বৃদ্ধ দাদিসহ হায়েনাদের আগুনে পুঁড়ে পৃথিবী ত্যাগ করেন।বাকি দুজন তাদের বাবার সাথে ফিলিস্তিন রক্ষা আন্দোলনে শরিক হয়ে শাহদাত বরণ করেন।একমাত্র জীবিত পুত্র সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার্থে মিশর পাঠান আর নিজে ফিলিস্তিন রক্ষা আআন্দোলনের সহায়তায় গাজা উপত্যকায় থেকে যান। হাফসা বেগম আতংকের মাঝে প্রসন্নচিত্তে চিঠিটা খামমুক্ত করেন, নাবিল লিখছে_
মা,
আসসালামু আলাইকুম, দোয়া কর, আমি আগামি সপ্তাহ দেশে ফিরছি ইনশা আল্লাহ।মা, প্রতিনিয়ত স্ব জাতির রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে আমাদের প্রিয় জনপদ।যেখানে নিরীহ নিরাপরাধ জনগোষ্টিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা ও উচ্ছেদ করছে, জ্বালিয়ে বিরাণ করে দিচ্ছে গোটা জনপদকে।সে জনপদ ছেড়ে সুদুর মিশরে বসে নিজের নফসকে রক্ষা করা গেলেও বিবেককে রক্ষা করা যাবেনা।জানি মা, তোমার বুকে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে আর অন্তরে তীব্র রক্তক্ষরন হচ্ছে।তুমি তোমার চার সন্তান, স্বামী,শ্বাশুড়ি হারিয়ে একমাত্র বুকের ধন নাবিলকে বাঁচানোর সুদুর মিশরে পাঠিয়েছ।মিশরে বসে আমি উচ্চ শিক্ষিত হতে পারি তাতে কি লাভ? যদি না বাঁচে দেশ জাতি স্বাধীনতা? কাল বিশ্ব বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ ফি যিলালিল কুরআন সুরা আন নিসার তাফসীর পড়তে গিয়ে আমার বিবেকে আগুন ধরে গিয়েছে,যে আগুন আমার বিবেককে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আর বিবেকে বার বার সেই আয়াত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে_ তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা কেন আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করছনা ঐ নারী পুরুষ শিশুদের পক্ষে যারা নির্যাতিত হয়ে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছে,হে আমাদের রব, আমাদের এইই জালিম অধ্যুষিত জনপদ থেকে আমাদের বের করে নাও,আমাদের প্রেরণ কর অভিভাবক ও সাহায্যকারী.............। মা, সাথে সাথে ফি যিলালিল কুরআন হাতে নিয়ে শপথ করেছি দেশে গিয়ে স্ব জাতির মুক্তি আন্দোলনে শামিল হব।এই পথে জাতির মুক্তি আনব নাহয় বাবা ভাইদের মত মহান আল্লাহর সার্নিধ্যে পৌঁছে যাব।মা, তুমি দোয়া কর।
.................. ইতি, তোমার আদরের নাবিল।
হাফসা বেগম চিঠিটা ভাঁজ করে খামে ডুকিয়ে উঠোনের জলসায় যোগ দেন।সেখানে সবাই
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছে।হাফসা বেগম বসতে বসতে বললেন, আগামী
সপ্তাহ নাগাদ নাবিল দেশে ফিরছে।
কথার মাঝখানে বলে উঠলেন, এই অসময়ে নাবিল কেন দেশে আসছে? আর কয়টা দিন পরে আসতে বল, বললেন রহিমুদ্দিন।
নারে বাবা, সে দেশে আসছে একবারে, এসে দেশ রক্ষা আন্দোলনে শামিল হবে, বললেন হাফসা বেগম।
আলহামদুলিল্লাহ, মা তুমি বড়ই সৌভাগ্যবতি রত্ন গর্ভা মা।আল্লাহ, তোমার নাবিলের হাতেই আমাদের মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করে মুক্তির মানযিলে পৌঁছাবেন ইনশা আল্লাহ, বললেন রহিমুদ্দিন।
বাবা, আল্লাহ আপনার প্রত্যাশা পূর্ণ করুক, বললেন হাফসা বেগম।
( চলবে)
কথার মাঝখানে বলে উঠলেন, এই অসময়ে নাবিল কেন দেশে আসছে? আর কয়টা দিন পরে আসতে বল, বললেন রহিমুদ্দিন।
নারে বাবা, সে দেশে আসছে একবারে, এসে দেশ রক্ষা আন্দোলনে শামিল হবে, বললেন হাফসা বেগম।
আলহামদুলিল্লাহ, মা তুমি বড়ই সৌভাগ্যবতি রত্ন গর্ভা মা।আল্লাহ, তোমার নাবিলের হাতেই আমাদের মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করে মুক্তির মানযিলে পৌঁছাবেন ইনশা আল্লাহ, বললেন রহিমুদ্দিন।
বাবা, আল্লাহ আপনার প্রত্যাশা পূর্ণ করুক, বললেন হাফসা বেগম।
( চলবে)