লাশ রাষ্ট্রের মনতাজ
আবদুল হাই শিকদার
রাষ্ট্র তাকে রক্ষা করেনি দাঁড়ায়নি পাশে এসে
নদীতে ভাসছে লাশ।
ভাষণ তোষণ বিবৃতি ঝড়
শব্দাশব্দি মস্ত
চাপানউতোর ঘুরপাক গাঢ়বাক্য,
মানুষ তো মরে নাই।
মুক্ত পণের মনে টনটন ধু ধু,
—হত্যা করেছে র্যাব।
র্যাব তো মারেনি, পুলিশ মারেনি,
মারেনি দলীয় ক্যাডার।
ঘোলা জনপদে জঙ্গী সঙ্গী সন্ত্রাস কিছু ভ্যাপসা,
মানুষ থাকলে তবেই না কথা ওঠে।
নদীতে ভাসছে লাশ।
তদন্ত হবে গোয়েন্দা রিপোর্ট,
কর্তারা খুবই তৃপ্ত।
খুন তো করেনি কেউ কাউকেই,
‘আতংকিত’ কথা তাই অহেতুক।
নদীতে ভাসছে লাশ।
আইন এজলাস গিলিয়েছে ফুল ডোজে
দিস্তা দিস্তা রুলিং মাখানো কাগজ,
প্রাজ্ঞ পাকুড় বিজ্ঞ সাহেবসুবো
বেধড়ক আর বেশুমার রীতি সার্ভিস।
কাগজ ছেপেছে ছবি।
সংসার তার ভেঙেছে হৃদয়,
রাষ্ট্র করেছে গুম,
মগ্ন জলের লগ্নপৃক্ত
হাত পাও বাঁধা ঘুম।
ক্ষত বিক্ষত নদীতে ভাসছে লাশ।
নদী নাকি লাশ? কোনটা ভাসছে?
হাঙ্গামা করে কষ্ট।
দাহের দহনে মাছেরা লাফায়,
লতাপাতা মাথা আছড়ায়,
দিগন্ত জুড়ে লজ্জা।
নদীতে ভাসছে রাষ্ট্র।
এই রাষ্ট্রকে ভালোবেসেছিল কেউ?
নাকি ভালোবাসা কখনো পায়নি লাশ?
বৃক্ষ দেয়নি ছায়া?
নাকি নদীটাই ভাসছে অথৈ
অশ্রুবিহীন জলে?
রাষ্ট্র তাকে ফিরিয়ে দেয়নি
ফিরিয়ে দিয়েছে নদী।
লাশ জলে নেই, লাশ ভাসে নাই।
লাশটাও নয় সত্য,
সংসার তাকে ঠেলেছে বাইরে,
বাহির করেছে গুম।
গুমের ঘটনা লাশ টাশ নয়,
মরদেহ নয় ঠিক ঠিক।
নদীটাও কিছু মিথ্যা
প্রচার করেছে উদাম বক্ষে,
হবে তার প্রতিকার।
—নদীর জন্য রিমান্ড চেয়েছে র্যাব!
স্তব্ধ নদী, তোতলায় কূল,
স্তম্ভিত আকাশেও তোতলামী।
তীরের বৃক্ষ তারো তোতলামী বাড়ে।
বাতাসেরা সব তোতলামী দেখে
ফেরি করে সংবাদ,
ওটা লাশ নয়, চেতনা নাশক
মহা মহা ষড়যন্ত্র,
আদতে ওখানে নদীই তো নেই,
পানির কথাটা বাড়তি।
বাড়তি আবেগেই ভাসছে কোথাও,
নদীতে তো পানি নেই।
তাহলে পানির কথা আসে কোত্থেকে?
নদীতে ভাসছে লাশ।
মাননীয় মিস্টার গণতন্ত্র স্যার,
সর্বজন শ্রদ্ধেয় শহীদ মিনার শ্রীচরণকমলেষু,
মহামহিম মাই লর্ড জাতীয় স্মৃতি সৌধ,
মহামান্য জনাব শ্রী শ্রীযুক্ত বাংলাদেশ
—বোঝা গেল বিষয়টা।
‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’