ধারাবাহিক উপন্যাস
শেকড়ের সন্ধানে
অধ্যক্ষ ডাঃ এম এ এইচ ফারুক
[১ম পর্ব ]
অলিভিয়া আলভা বার্সিলোনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইতিহাস
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়
চলছে তিন মাসের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ তাই
অলিভিয়া আলভা বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছে।অন্যবারের
মত বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা দেয়া, বাহিরে
ঘুরতে যাওয়া কোনটাই করছেনা অলিভিয়া আলভা।সারা
দিন রুমেই কাটায়। কখনো পাঠ্য পস্তুক আবার
কখনো জার্নাল নিয়ে ব্যস্ত থাকে।অলিভিয়া আলভার
বাবা ড. ম্যাডিসন আলভা পেশায় একজন সাংবাদিক।তিনি
স্পেনে শীর্ষ সংবাদপত্র স্পেন টাইম এর
সম্পাদক।মা ড. জুলিয়া আনা পেশায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা।
ইদানিং মেয়ের নিরবতাপূর্ণ একাকিত্ব সময় কাটানো,
বন্ধু বান্ধবদের সাথে না মিশা, কোন আড্ডায়
যোগদান না করা নিয়ে অলিভিয়া আলভার বাবা মা
মোটেই উদ্বিগ্ন নয়।তারা ভাবছে মেয়ে
যেহেতু ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে ভাল ফলাফল করতে
হবে ভেবে শুধু লেখা পড়া নিয়ে ব্যস্ত আছে,
ব্যস্ত আছে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে, আসলে তাই
করা উচিৎ বটে।
অলিভিয়া আলভাকে নিয়ে তার বাবা ড. ম্যাডিসন আলভা
স্বপ্ন দেখেন তার একমাত্র মেয়ে বড় হয়ে তার
পেশা সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করবে এবং
তার স্থলাভিষিক্ত হবে আর মা ড. জুলিয়া আরনি স্বপ্ন
দেখেন তার মেয়ে বড় হয়ে তার পেশাকে
সন্মান দিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হবে।একমাত্র
মেয়েকে নিয়ে বাবা মার দ্বৈত পরিকল্পনা দু জনের
মধ্যে মাঝে মাঝে মৃদু ঝগড়াও যে রুপান্তরিত হয়না
যে এমন না।কিন্তু অলিভিয়া আলভা সাম্প্রতিককালের
সাংবাদিকতা পেশাকে সাংঘাতিক ঘৃণা করে।বন্ধুদের
আড্ডায় প্রায় এই পেশা নিয়ে কথা উঠলে অলিভিয়া
আলভা বলে পৃথিবীতে অধিকাংশ দূর্ঘটনার জন্য
দায়ী সাংবাদিকদের বিবেকহীন নির্লজ্জ
মিথ্যাচার,মিথ্যা সংবাদ প্রচার, পক্ষপাতমুলক একচোখা
আচরণ।
মাঝে মাঝে বন্ধুরা তার বাবার দিকে ইশারা করে টিপ্পনি
কাটলেও সে বিব্রত হয়না।অকপটেই সত্য বলে
যায়,কখনো আবার সাংবাদিকদের পৃথিবীর বড় তথ্য
সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতেও কুন্ঠাবোধ
করেনা।
রাত ১০টা, তার রুমে প্রবেশ করলেন তার বাবা ড.
ম্যাডিসন আলভা।তিনি সাধারণত এই সময় বাসায়ও থাকেননা
তার রুমেও আসেননা।
কৌশল বিনিময়ে বাবা টের পেয়েছে মেয়ে কিছুটা
এবসেন্ড মাইন্ড।
কি মা মনি, শরীর খারাপ করছেনাতো? জানতে
চাইলেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
না, বাবা, শরীর খারাপ না।একটু ঘুমিয়েছিলাম তাই কিছুটা
আস্বস্তি লাগছে বলল অলিভিয়া আলভা।
অ, তাই? তই তোমার লেখা পড়া কেমন চলছে?
বললেন ডা. ম্যাডিসন আলভা।
জ্বি বাবা, ভালই চলছে বলল অলিভিয়া আলভা।
ভাল করে লেখা পড়া কর,তোমাকে ফাইনালে ভাল
রেজাল্ট করতে হবে,এরপর তোমাকে সাংবাদিকতা
বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে অচিরেই আমার
স্থলাভিষিক্ত হতে হবে বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
বাবা সাংবাদিকতা বিষয়ে আমার একদম আগ্রহ নেই তাছাড়া
আমি এই বিষয়ে খুব একটা বুঝিওনা বলল অলিভিয়া
আলভা।
শুরুতে কেউ একদম পারফেক্ট হয়ে আসেনা কাজ
করতে করতেই পারফেক্ট হয়ে উঠে বললেন
ড. ম্যাডিসন আলভা।
তা ঠিক আছে তবে বরাবরই আমি এই পেশার প্রতি
অনাগ্রহী বলল অলিভিয়া আলভা।
মা, তুমি কি জানো পৃথিবীর সন্মানজনক
পেশাগুলোর একটাই সাংবাদিকতা, তাছাড়া তুমিতো জান,
আমার পত্রিকাটা স্পেনের প্রধান সংবাদপত্র বললেন
ড. ম্যাডিসন আলভা।
ম্যাডিসন আলভা আবার বলে উঠলেন,তুমি লেখা পড়া
শেষ কর আমিই তোমাকে হাতে কলমে শিখিয়ে
দিব।
আচ্ছা বাবা, যেহেতু সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তাই এই
মহুর্তে মাথায় এই টেনশনটা নাই ঢুকাই বলল অলিভিয়া
আলভা।
ঠিক আছে মা মনি, আগে লেখা পড়া শেষ দাও
বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
জ্বি বাবা, আমি এখন বর্তমান নিয়ে ভাবি আর ভবিষ্যৎ
নিজেই তার গতিপথ ঠিক করে নিবে বলল অলিভিয়া
আলভা।
ও শোন, কালতো আমাদের সাপ্তাহিক উপাসনার
দিন,সকাল সকাল চার্চে যেতে হবে।প্রস্তুত
থেকো,আমরা যেতে তোমাকে ডেকে নিব
বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
বাবা,তোমরা চলে যেও,আমার মনে হয় যাওয়া
হবেনা।আমাকে এই কয় দিনে আট দশটা
এসাইন্টম্যান্ট প্রস্তুত করতে হবে বলল অলিভিয়া
আলভা।
মাঝেমাঝে চার্চে গেলে মন ফ্রেশ হয়
বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
ফোন বেজে উঠল অলিভিয়া আলভার,ফোন
করছে তার বন্ধু ম্যাক জনসন।সে জানাল,একটু
আগে ফ্রান্সে ভয়াবহ বোমা হামলা হয়েছে।
ফোন শেষ করেই অলিভিয়া তার বাবাকে বিষয়টা
জানাল।
ড. ম্যাডিসন আলভা অফিসে ফোন করে বললেন,
খোঁজ নাওতো দেখি ফ্রান্সে নাকি বোমা হামলা
হয়েছে?আর একটা কাজ কর আমাদের অন লাইন
ভার্সনে শর্ট নিউজ করে দাও মুসলিম সন্ত্রাসীরা
ফ্রান্সে বোমা হামলা ঘটিয়েছে।আমি
আসছি,বিস্তারিত নিউজ করব বলে ফোন রেখে
দেন।
আব্বু,তুমি কি করে নিশ্চিত হলে এই ঘটনা মুসলমানরা
ঘটিয়েছে? বলল অলিভিয়া আলভা।
পৃথিবীবিতে যত অঘটন ঘটছে সব ঘটাচ্ছে
মুসলমানরা বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
আব্বু এইটা কি মুখস্থ কথানা? এইটা হতেও পারে আবার
নাওতো হতে পারে বলল অলিভিয়া আলভা।
শোন,দুনিয়া জুড়েই এখানেই আমাদের সফলতা যে
পৃথিবীর যে প্রান্তেই ঘটনা ঘটুক আমরা একসাথে
এক বাক্যেই বলে উঠি এটা মুসলমানরা করেছে।এই
কথা এইভাবে আমাদের বলতেই হবে।নাহয়
বিশ্বজুড়ে তাদের গণ জাগরণ ঠেকানো
কোনভাবেই সম্ভব হবেনা বললেন ড. ম্যাডিসন
আলভা।
আব্বু,এটা কি একটা জাতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যুদ্ধ
ঘোষনা নয় কি? বলল অলিভিয়া আলভা।
হ্যাঁ তাতো ঠিক,কিন্তু বিশ্বব্যাপি আমাদের
অস্তিত্বের খাতিরে এই কাজ আমাদের করতেই
হবে বললেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
আমি উঠছি,অফিসে যেতে হবে বলে বেরিয়ে
পড়লেন ড. ম্যাডিসন আলভা।
অলিভিয়া আলভা একটা জাতির বিরুদ্ধে গোয়েবলসিয়
মিথ্যাচার মেনে নিতে পারছেনা।কেনবা
মুসলমানদের বিরুদ্ধে সারা দুনিয়া এক হয়ে ষড়যন্ত্র
করছে? টুইন টাওয়ার হামলার অযুহাতে আফগানিস্তানে
হামলা করে একটা দেশকে সম্পূর্ন শেষ করে
দিল যদি টুইন টাওয়ার হামলা কারা ঘটিয়েছে তা যথেষ্ট
প্রমাণিত ছিলনা, ইরাকে পারমানবিক বোমা আছে বলে
হামলা হল, একটা জাতি শেষ হল,আদৌ কি সেখানে
পারমানবিক বোমা ছিল? না।এখনো কি কোন হামলার
সাথে মুসলমানরা সরাসরি দায়ী তা প্রমাণিত হয়েছে?
তারপরও কেন?
অলিভিয়া আলভা আজ আরো ক্লিয়ার হল, বুঝতে বাকি
রইলনা এটা একটা বিশ্বব্যাপি ক্রুসেড, যে ঘৃণ্য
ক্রুসেডে সম্পৃক্ত তার বাবা এই কথা ভাবতেই
পারছেনা মেনে নেয়াতো দূরে থাক।
অলিভিয়া আলভার নির্ঘুম রাত কাটছে আর ভাবছে
তাহলেতো আমার বান্ধুবি ফাতিমা ফাহমিদাদের দাবিই ঠিক
যে মুসলমানরা বিশ্বব্যাপি অতিত সকল সময়ের চেয়ে
ঘৃণ্য তথ্য সন্ত্রাসের নির্মম শিকার।
(চলবে)