জীবনের সূর্যদোয় 

মোনোয়ার হোসেন 

...................................

সত্যি অামি খুব সৌভাগ্যবান ! 

অবাক হল মাহি । কেন ?

তোমাকে পেয়ে ? 

তাই বুঝি ? 

হুম … । 

বাহ্ ! চমৎকার ডায়ালগ তো ! তাচ্ছিল্য ভঙ্গিমায় বলল মাহি ।
সিরিয়াসলি বলছি । 
কী এমন পেলে অামার মাঝে , যার কারণে তুমি নিজেকে এতবড় সৌভাগ্যবান মনে করছো ?
অনেক কিছু । 
মাহিকে ভালোবেসে সত্যিই অনেক কিছুই পেয়েছে মারুফ । পেয়েছে জীবনকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখার সুযোগ । নিজের স্থান পরিবর্তনের অদম্য ইচ্ছে শক্তি । 
মারুফের জীবন শুরু করে একেবারে শূণ্য থেকে । 
শূণ্য থেকে শুরু করে অাজ অব্দি যেখানে এসে সে দাঁড়িয়েছে এতদিন মনে করেছিল এই জায়গাটাই তার লাইফের জন্য অনেক পাওয়া ! কিন্তু মাহিকে পেয়ে অাজ সে উপলব্ধি করতে পারছে অাসলে জীবন অর্থ ব্যপক । নির্দিষ্ট এক জায়গায় থেমে থাকা নয় । তার অারো অনেক কিছুই পাওয়ার অাছে জীবনে, সমাজকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু অাছে । সে ঠিক করে অারো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে । এগিয়ে যাবে বহুদূর.......!
পড়ন্ত বিকেল গোধূলীলগ্ন অতিক্রম কর প্রকৃতি এখন অাবির রঙে সেজেছে । 
মাহি এবং মারুফ বসে অাছে বড় মাঠের সবুজ ঘাসের উপর । মারুফ পা দু’টো সটান লম্বা করে বিছিয়ে অার মাহি হাঁটু ভেঙ্গে । 
অাবিরের লাল রঙে মাহিকে বেশ সুন্দর লাগছে । মনে হচ্ছে প্রকৃতি অাজ তার অাবিরের সব রঙ ঢেলে দিয়েছে মাহির গায়ে । 
মারুফ মাহির কাছে গিয়ে বসে । একেবারে গা-ঘেষে । মাহির হাতটি পরম স্নেহে নিজের হাতের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় । জানো মাহি ? 
বলো ?
অামি ঠিক করেছি । 
কি? 
অাবার লেখাপড়া শুরু করবো । 
অামিও তাই চাই । 
অামি জানি । 
কী জানো ? 
তুমি চাও অামি অাবার লেখাপড়া শুরু করে দেই । 
কেমন করে বুঝলে ? তোমাকে বলিনি তো কোন দিন ! 
তোমাকে দেখে অামি ঠিক বুঝতে পেরেছি , বুঝতে পেরেছি তুমি চাও অামি অাবার লেখাপড়া শুরু করি । 
এতো বুঝো অামায় ? 
খুব । 
তাই বুঝি , অার সে জন্যেই অাবার লেখা-পড়া শুরু করতে চাচ্ছো ? 
হুম , তাই । 
এতো মূল্যায়ন করো তুমি অামায় ? 
হুম , অনেক । 
ঠিক অাছে তুমি মাস্টার্সটা দিয়ে দাও । তারপর এম, বি,এ টা করে নিবে । 
অামিও ভাবছি তাই করবো ।
ভাবছি নয় , তুমি অাজ থেকে লেখাপড়া শুরু করো ।অার একটা কথা বলি তোমায় ?
বলো ? 
মন খারাপ করবে না তো? 
না , একেবারে নাহ ।
তুমি ফেসবুকে অাসা কমিয়ে দাও । 
হুম , অামিও তাই ভাবছি । ফেসবুক অনেক ক্ষতি করছে অামার । অাফিমের নেসার মতো টানছে । কারণে -অকারণে , সময়ে -অসময়ে শুধু ফেসবুকে ঢুকছি । 
হু , অামিও দেখছি তো ! তুমি অাজ-কাল বড্ড বেশি ফেসবুকে ঢুকো ।
কেন ঢুকছি জানো ? 
কেন ? 
তোমাকে পাবার জন্য । 
অামি জানি সেটা । 
তারপর দু’জনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে । 
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহি বলে, তুমি কি অামাকে সন্দেহ বা অবিশ্বাস করো? 
মোটেই না । 
তাহলে বলি ?
কি? 
অামাকে নিয়ে তুমি একদম টেনশন করো না । 
অামি লেখাপড়া অার পারিবারিক প্রোবলেমের কারণে নিয়মিত ফেসবুকে অাসতে পারছিনা । এতে মন খারাপ করোনা ,অামি সম্পূর্ণ তোমার অাছি । 
বিশ্বাস করি অামি । অার অামিও ঠিক করেছি । 
কী ঠিক করেছো ?
ফেসবুকে অার বেশি সময় দিবো না । পড়ালেখায় মনোনিবেশ হবো । 
ভাল , খুব ভালো , মাথা মোটা । 
অফিস থেকে এসে পড়ালেখা শুরু করবো । তার পর নির্দিষ্ট একটা সময়ে ফেসবুকে অাসবো । গল্প লিখবো । পোস্ট করবো । তারপর বেড়িয়ে অাসবো । 
তাই করো । 
ঠিক অাছে তাই করবো ।
গল্পের ফাঁকে কখন যে সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে বুঝতে পারেনি মাহি-মারুফ । 
উমা! 
কি হলো? 
দেখো চারিদিকে । 
কী ?
অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ । সন্ধ্যে ঘনিয়ে এল যে ! বাড়ি ফিরতে হবে তো । মা বড্ড বেশি চিন্তা করবে অামার জন্য ।
তাই ? 
হুম । 
অার দাদু ? 
তিনি তো অারো দ্বিগুন ! 
হো হো করে হেসে উঠে মারুফ । ঠিক অাছে ,উঠো । যাওয়া যাক ।

উঠে পাশাপাশি হাঁটে ওরা ।
মারুফ হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে অার মাহি একেবারে মারুফের শরীর ঘেষে মারুফের হাতের ভিতর নিজের হাত গুজে পাশাপাশি হাঁটে । 
পূর্ণিমা রাত । 
এরই মধ্যে পূর্ব অাকাশে ভেসে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদ । চারপাশে ঠিকরে পরছে নরম চাঁদের অালো ।
ক্রমশ: সেই চাঁদের অালোয় চারপাশের অন্ধকার কেটে গিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে চারদিক । 
পূর্ণিমাস্নাত রাতে মাহির পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে মারুফ যেন ডুব দেয় অাগামীর উজ্জ্বল , উদ্ভাসিত এক সোনালী ভবিষ্যতের দিকে । 
মাহিকে পাশে পেয়ে চাঁদের অালোর মতো উদ্ভাসিত হচ্ছে তার জীবন । অন্ধকারের ঢেকে থাকা জীবনের গ্লানী অার হতাশাগুলো কেটে যাচ্ছে একে একে । ক্রমশ: উজ্জ্বল হয়ে হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে জীবনের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা সোনালী সব ইচ্ছে অার স্বপ্নগুলো ...।


------------------------------------------------


লেখকের ফেসবুক আইডি এখানে ক্লিক করুন
 
Top