0
ফজলে রাব্বি দ্বীন


পাগল

ফজলে রাব্বি দ্বীন

ঐ লোকগুলি আমাকে পাগোল বলে ডাকে।কেন ডাকে আর কি জন্য ডাকে সেটা মুখ ফোটে কেই বলে না। জানতে চাইলে বলে পগলের সাথে কোন কথা নেই। আমার সাথেতো কারও কোন দ্বন্দ নেই, নেই কোন ঝগড়া-বিবাধ তাহলে? কাউকেতো কোনদিন কষ্ট দেইনি, ভয় করিনি শত্রুকে শুখু অন্যায় দেখলে ছেড়ে দেইনি। শক্ত হহাতের মুষ্টিতে সেই অন্যায়কে পিষে ফেলেছি। মানুষকে করেছি উপকার। কিন্ত আজ পারিনা। আজ আমার বুক ভরা কেবল ভয়। ভয়ে আমার ঘুম বিদায় নিয়েছে চোখ থেকে।সেই ভয় আকাশ থেকে মাটিতে পড়ার নয়। পাহারের উপর থেকে লাফ দেয়ার নয়, কোন এক মানুষকে খুন করে ফাঁসিতে ঝুলার জন্য নয় সেই ভয় পৃথিবী পুড়ে ভষ্ম করা আগুনের। শীতের তীব্রতায় সারা রাত কুয়াশার ভেতর জমে বরফ হয়ে থাকি তবুও একটু উমের জন্য আগুনের স্পর্শে যাইনা । ভয়ে আমার কলিজা থরথর করে কাঁপে। মাথা ভর্তি আমার জট বাঁধা চুল, গাঁয়ে ভেটকা গন্ধ, পরনে ছেঁড়া শার্ট আর ছেঁড়া চেইনবিহীন প্যান্ট।প্যান্টটা কুঁড়িয়ে পেয়েছিলাম রাস্তার ধারে। নেংটা দেখলে একেকজনে বিটকানি দেয়। ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আমার দিকে ইট পাথর ছুঁড়ে মারে । তবুও আমি তাদেরকে উল্টো ভয় দেখাই না । তাদেরকে আরও কাছে পেতে চাই। কারন তাদেরকে দেখেলে আমার নিজের ছেলের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে হারানো দিনের সেই সংসারের কথা। গাঁয়ের ভেতর কি সুন্দর বউ ছেলেকে নিয়ে সুখী ছিলাম। ছেলেটা আমার সবসময় দামী একটা হাতঘড়ির জন্র বাইনা ধরত। একদিন বাজার থেকে এনেও দিলম। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে বাড়ি পিরে এসে দেখি সব শেষ। কিভাবে যেন আমার বাড়ি আগুনে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাচ্ছে। একজনের কাছ থেকে শুনতে পেলাম রান্না করতে গিয়ে আমার বউয়ের আঁচলে নাকি হুট করে আগুন ধরে গিয়েছিল। তারপরেই সেই আগুন সারা বাড়িতে ছাড়িয়ে পরেছে । আগুন নিভাতে সমস্ত গায়ের মানুষ পানি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছিল। আমার পাগলপানা দেখে অনেকেই কেদেঁ ভাসিয়েছিল তবুও কেউ পারেনি আগুনের হাত থেকে আমার বউটাকে বাঁচাতে। কোনমনে আগুনে ঝাপ দিয়ে ছেলেটাকে রক্ষা করেছিলাম কিন্ত দুদিন পরেই নিউমোনিয়ায় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ওপারে। আমার একাকিত্ব এখন পাগল হয়েই কাটে। ছেলেটা্র জন্য কেনা ঘড়িটা নিজের হাতে লাগিয়ে নিয়েছি। সেটা দেখেই টাইম মত কলাগাছের পাতা গরুর মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাই। বক্ষের চুলগুলি টেনে টেনে যখন পথ চলতে থাকি তখন আমার নিজেকে নিজেই কেমন যেন ঘৃণ্যা হয় । সূর্য়ের তেজী রশ্মিকেও আজকাল আগুনের মত ভয়ঙ্কর মনে হয়!
চকপাঠক, শেরপুর সদর, শেরপুর।
সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
fozlerabbi89@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top