মোনোয়ার হোসেন
ভালো মানুষ
মোনোয়ার হোসেন
……………………

তমাকে দেখে খুশি হয়ে গেল ইভা । বইটা বন্ধ করে তমার দিকে তাকাল । তাকিয়ে হাসলো সুন্দর করে । বল কি করতে হবে?

হাসলো তমা । তুমি সত্যিই অসাধারণ অাপু !
কেন অসাধারণের কী দেখলে অাবার ?
অামাকে দেখেই তুমি সব বুঝতে পার ।
হুম , পারি বৈকি ! এবার বল কি করতে হবে?
তুমি তো বুঝতে পেরেছ অাপু ।
হুম । তবুও বল ।
শুধু অাজকের দিনটা অাপু !
তমার কথা শুনে অাবার হেসে ফেলল ইভা । অাজকে দিয়ে ক’দিন হলো গুনেছিস?
হুম, গুনেছি ।
কয়দিন ?
চার দিন ।
তাহলে তোর এই অাজকের দিনটাই শেষ , এ কথা বলাটা কবে শেষ হবে শুনি ?
তমা পিছন থেকে গিয়ে ইভার গলা জড়িয়ে ধরল। অাপু ! শুধু অাজকের দিনটাই !
তমার বড় বোন ইভা । দু’বোনের গলায় গলায় ভাব । তমা কী করে ইভা সব জানে , ইভা কী করে তমাকে সব শেয়ার করে । দু’বোনে খুব ভালো বন্ধু ।
বিকেলে বিছানায় শুয়ে একটা ম্যাগাজিনে চোখ বুলাচ্ছিল ইভা ঠিক তখন তার রুমে গিয়ে ঢুকল তমা ।
তমাকে নিজের রুমে দেখে খুশি হয়ে গেল ইভা । বইটা বন্ধ করে টেবিলে রাখল । তাকাল তমার দিকে । তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।
তমার এই গলা জড়িয়ে ধরা ছেলে মানুষি কাণ্ড দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল ইভা । গলা থেকে তমার হাত দুটো শীতল করে ছেড়ে নিয়ে তমাকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরল ।
ঠিক অাছে অামি মাকে ম্যানেজ করছি । তুই যা ।
থ্যংকয়্যু অাপু ,বলে তমা ইভার গালে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়ল ।
গাড়ি রমনা পার্কের কাছাকাছি অাসতেই তমা রুদ্রকে দেখতে পেল । রুদ্র রাস্তার দিকে পিঠ করে পার্কের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে অাছে । রুদ্রকে দেখে খুশি হয়ে গেল তমা । অানান্দে মনটা ভরে গেল তার ।
কয়েক দিন থেকে রুদ্রের সাথে দেখা করতে চায় তমা । কিন্তু রুদ্র অফিসের ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেনা । সর্বশেষ গতকাল রুদ্রের কাছে ফোন করে কেঁদে ফেলে তমা । বলে দেখা না করলে সে মুখে কিছু দিবে না । নিরুপায় রুদ্র দেখা করতে রাজি হয় ।
গাড়ি থেকে নেমেই রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল তমা ।
তুমি কেন এমন বলো তো?
কেমন ?
হঠাৎ নিজেকে অাড়াল করছো কেন ?
অাড়াল করছি ?
করো না?
কী জানি । হয়তো করি ।
কেন করো?
হয়তো করতে ভাল লাগে ।
কেন ভাল লাগে ?
অামি একজন রুটলেস মানুষ । ঘর-বাড়ি নেই স্থায়ী ঠিকানা নেই । তাছাড়া .....।
তাছাড়া ?
তাছাড়া তোমার সাথে পরিচয়ের অাগে ভাবতে পারিনি তুমি এত বড় ঘরের মেয়ে । তোমার বাবা এত বড় লোক । তোমার মতো এতো ঝলমলে মেয়েকে কিছু বলার সাহস থাকে না অামাদের মতো রুটলেস মানুষদের ।
তা হলে তো হয়ে গেল । ভীতু ছেলেদের এতো ঝলমলে মেয়েদের পাওয়ার অধিকার থাকে না ।
হুম... , জানি তো! সে জন্যেই তো নিজেকে অাড়াল করছি ।
মোটা মাথা কোথাকার !
জ্বী, কিছু বললে?
না ।
তবে?
তুমি রুটলেস না ফুটলেস সেটা তো অামার কাছে ম্যাটার নয় । অামার কাছে ম্যাটার হচ্ছে তুমি একজন মানুষ । ভালো মানুষ ।
টাকা ছাড়া এই ভালো মানুষ পরিচয়ের সামাজিক কোন মূল্য অতীতে ছিলনা , অার এখনও নেই ।
তাছাড়া তোমার ফ্যামেলী অামাকে মেনে নিবে না ।
হয়তো নিবে না । কিন্তু অামি তো মেনে নিয়েছি ।
তাতে কী লাভ ?
লাভ -ক্ষতির হিসেব নয় রুদ্র । তুমি অন্তত জানতে পার তোমার রুটলেসনেস অামার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে না । তোমার পরিচয় অামার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । অার ভালো মানুষ হিসেবেই অামি তোমাকে ভালোবাসি ।
এখনো বাসো ?
হুঁ, বাসি ।
কেন বাসো ? কী এমন দেখেছো অামার মধ্যে ?
তুমি মানুষ হিসেবে একেবারে অন্য রকম । সতন্ত্র । সবার থেকে অালাদা । ভালো একজন মানুষ ।
অবাক অার বিস্ময়মাখা দৃষ্টি নিয়ে তমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুদ্র ।
মিষ্টি হাসে তমা । হেসে তার নরম হাতটি এগিয়ে দিল রুদ্রের দিকে ।
 
Top