সায়েন্স ফিকশন
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অধিবাসী

হামিদ হোছাইন মাহাদী

ডেবিট নেপলস ও ডেবিট নেলসন দুই তরুণ বিজ্ঞানী।তারা একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। দীর্ঘদিন ধরে মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে গবেষণারত আছে এ দুই বন্ধু। আজ একইসাথে ল্যাবরেটরিতে ফিজিক্স প্রেকটিক্যালে উপস্থিত হলো ডেবিট নেপলস ও নেলসন। আসার পথে দু'বন্ধু প্লান করলো ল্যাবরেটরিতে বসে মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে আলোচনা করবে।
ল্যাবরেটরিতে প্রবেশ করলো এ দু'তরুণ বিজ্ঞানী। হঠাৎ ডেবিট নেপলসের ফোন আসলো।ফোনের অপর পাশ থেকে বলা হলো আজ প্রেকটিক্যাল ক্লাসের টিচার মাইকেল ক্যামেল স্যার আসবে না।ডেবিট নেপলস ও নেলসন অনেক আনন্দিত হলো। কারণ তাদের আলোচনা খুব জমবে আজ।
শুরু হলো মহাকাশ নিয়ে আলোচনা। প্রথমে ডেবিট নেপলস গ্যালাক্সির (GALAXY) পরিচয় শুরু করলো।
"গ্যালাক্সি হচ্ছে কোটি কোটি তারা বা নক্ষত্রের এক-একটি রাজ্য।এক-একটি গ্যালাক্সিতে রয়েছে ১০০ কোটি থেকে ৫০,০০০ কোটিরও বেশি নক্ষত্র বা তারা।আবার প্রতিটি তারা পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড়ো।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা দূরবীনের সাহায্যে দেখেছেন, মহাকাশের বুকে ছড়িয়ে আছে অগণিত গ্যালাক্সি। যার হিসেব কোটির সংখ্যা দিয়েও নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।ডেবিট নেপলসের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলো ডেবিট নেলসন।
"স্রষ্টার গুণগান করে শেষ করা যাবে না, কিভাবে স্রষ্টা নিপুণভাবে সৃজন করলো এ মহাকাশ??" চিন্তা করতে লাগলো ডেবিট নেলসন।
"বিজ্ঞানীরা আকার-আকৃতির দিক থেকে গ্যালাক্সি সমূহকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। এর কোনটি হচ্ছে ডিম্বাকৃতির (ELIPTICAL), কোনটি পেঁচালো (SPIRAL), আবার এমন কিছু গ্যালাক্সি আছে যা কোন নির্দিষ্ট নিয়মে গড়ে ওঠেনি, এদের বলা হয় IRREGULAR গ্যালাক্সি।
আমরা হচ্ছি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অধিবাসী। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিটি হচ্ছে ডিম্বাকৃতি বা SPIRAL গ্যালাক্সি। মহাকাশে গ্যালাক্সিগুলো আছে দল বেঁধে। এক-একটা দলে গ্যালাক্সির সংখ্যা ১০ থেকে ৩০ টি।আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে বিভিন্ন আকৃতির ঊনিশটি গ্যালাক্সি।প্রতিটি গ্যালাক্সির ব্যাস হচ্ছে ২৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ আলোকবর্ষ।(আলো এক বছরে যে পথ অতিক্রম করে তাকে ১ আলোকবর্ষ বলা হয়) অর্থাৎ আলোর গতিতে (আলো প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা তিন লক্ষ মাইল পথ অতিক্রম করে) একটা গ্যালাক্সির একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যেতে সময় লাগবে ২৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ বছর।বললো, ডেবিট নেপলস।
আবার একটি দলের সব গ্যালাক্সিই কিন্তু একত্রে থাকে না।একই দলের দুটি গ্যালাক্সির মধ্যে কম করে হলেও গড় দূরত্ব থাকে ১০ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ আলোকবর্ষ। মহাশূন্যে গ্যালাক্সির একটি দলের দূরত্ব থেকে আরেকটি দলের দূরত্ব কয়েক কোটি আলোকবর্ষ।নেলসন অবাক দৃষ্টিতে সব শুনে যাচ্ছে।
GALAXY এর এক-একটা দল বা গুচ্ছকে ইংরেজিতে CLUSTER বলা হয়।অনেকগুলো CLUSTER নিয়ে গঠিত হয়েছে সুপার গ্যালাক্সি।
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এক-একটা সুপার গ্যালাক্সিকে বলেন এক একটা বিশ্ব। এমনি কোটি কোটি সুপার গ্যালাক্সি -যার খবর মানুষ জানে এবং জানেনা অনেক গ্যালাক্সির দূরত্ব।
"স্রষ্টার সীমাহীন, সুবিশাল এ সৃষ্টিজগত",বললো ডেবিট নেলসন। নীল আকাশে আমরা যে সূর্য দেখি তা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ১০ হাজার কোটি নক্ষত্রের মধ্যে একটি মাঝারি গোছের তারা বা নক্ষত্র। সূর্যের অবস্থান মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ৩০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এক আলোকবর্ষ সমান কত মনে আছে? জিজ্ঞেস করলো নেপলস।
হ্যাঁ মনে আছে। একবছরে আলো যে পথ অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে, বললো নেলসন।
গ্যালাক্সিটির প্রায় একপ্রান্তে সূর্য তার যে পরিবার নিয়ে বসবাস করে, এই সৌরজগতের একটি গ্রহ হচ্ছে আমাদের পৃথিবী। অনন্ত মহাকাশে এই হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর ঠিকানা, বললো নেপলস।
দীর্ঘ আলোচনা করতে করতে এদিকে পিয়ন ঘণ্টা দিয়ে দিলো। দু'বন্ধু বের হলো ক্লাসরুম থেকে। একে অপরে দু'হাত মিলিয়ে বিদায় নিলো পরস্পর। নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে হাঁটতে লাগলো তরুণ বিজ্ঞানী ডেবিট নেপলস ও ডেবিট নেলসন।
২২/০৪/২০১৬
 
Top