১৫ দিন হয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনেকগুলো বিদায় এক সাথে নেয়ার অবস্থা তৈরি
হয়েছে। দীর্ঘ ১০বছর এই পরবাসের মাটি ও মানুষের সাথে মিশে একাকার হয়েছিলাম।
কত স্মৃতি চারদিক থেকে হানা দিচ্ছে। আব্দুল্লাহ আল নোমান আমার পিছু ছাড়ছে
না। ক্লাস টু থেকে আমার সঙ্গ ছাড়ে নি। এখন তিতুমিরে অনার্সে পড়ে। এর আগেও
এক বাসায় লজিন ছিলাম প্রায় তিন বছর। সেখানেও আছে ভালোবাসার এক ইতিহাস।
মাদ্রাসার ওয়ান থেকে ফাজিল পর্যন্ত ৭০% ছাত্র ছাত্রী আমাকে প্রচন্ড
ভালোবাসতো, সমস্ত মাদ্রাসা জুড়ে ছিল আমার আর্ট । যা আমি প্রতিদিন একবার
হলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে চেষ্টা করতাম । সেগুলোও স্মৃতি হতে
যাচ্ছে। আরো কত কিছু বলে শেষ করা যাবে না। এলাকার সবাই খুব ভালোবাসত।
এতকিছু একসাথে বিদায় দিতে হবে । ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। অন্যদিকে ঢাকায়
ভর্তি হওয়া নিয়ে নানা কৌতুহল সৃষ্টি হতে লাগল। স্বপ্নের জাল বোনা শুরু হল।
এতদিন কত ভালোবাসার মানুষের ভিতরে ছিলাম । ঢাকাতে কেউ থাকবে না আমি আবার
শুন্য হয়ে যাবো। আত্মবিশ্বাস ছিল ঢাকা এসে আবার একটা জগত তৈরি করতে পারবো।
আমার হৃদয় দুইদিকে ছুটে চলছে । বাড়িতেও বাবা মা অপেক্ষমান। সব মিলিয়ে
সিদ্ধান্ত নিলাম আর বেশিদিন এখানে থাকা যাবে না । ঢাকা ভর্তির সময় চলে
যাবে। তাই কালকেই চলে যাবো অনেকের কাছ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছি। লজিন বাসায়
আজ জানাবো। প্রথমে বিশ্বাস করল না আমি কাল যেতে চাচ্ছি। জোড় করলাম । রাতে
অনেক কিছু পাকালো ভাবছি দিনের বেলা বিদায় নিতে পারবো না । কি বলে বিদায়
নিবো । কত মানুষ বিদায় নেবার বেলায় কত সুন্দর গুছিয়ে মাফ চেয়ে ক্ষমা চেয়ে
কত কিছু বলে বিদায় নেয় । অথচ আমি কিছুই বলতে পারি না । মুখ থেকে কিছু বেড়
হয় না । শুধু ভাবছি কি বলবো । আয়েশাকে বললাম তোমার আম্মুকে বল আমি কাল চলে
যাবো। দুপুরের খাবারের সময় বলেছিলাম। রাতে এসে চুড়ান্ত ভাবে বললাম আমি কাল
খুব ভোরে চলে যাবো এতক্ষণে তাদের অন্তর কেঁপে উঠেছে। সবার চোখে মুখে কি যেন
ভাসছে দেখতে পাচ্ছি। পারে শুধু আমাকে তাদের হৃদয়ের গভিরে লুকিয়ে রাখতে ।
রহিমা আয়েশা কান্না করছে সাথে তার ছোট ছেলে ইমরুলও। আপুর কান্না আরো বেদনার
তার চোখ থেকে জল পড়েছে হয়ত কেউ বুঝতে পারেনি। রাতের খাবার খেয়েই চললাম
বলেই চলে এলাম। বিদায় বেলা যা বলে কিছুই বলতে পারলাম না । সারা রাত আমার
ঘুম হয়নি তারাও রাতে কিছু খায়নি । খুব ভোরে ভাইয়া আর আপু বডিংয়ে চলে এসেছে
নাস্তা করিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিবে। গাড়িতে ওঠার সময় জোড় করে কিছু টাকা পকেটে
ঢুকিয়ে দিলে । বলল দুপুরে কিছু খাবেন আর গাড়ী ভারা দিবেন। তার কিছুক্ষণ আগে
আব্দুল্লা আল নোমান ও তার বন্ধু ঝন্টু এসে আমাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে
দিল। ওরা সবাই মিলে গাড়িতে উঠিয়ে দিল । অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়েছিল।
সারাদিন কল্পনায় ভাসতে ভাসতে চলে এলাম। এখন আর রাতে ঘুম আসে না। অতীত
স্মৃতিগুলো চার দিক থেকে ঘিরে ধরেছে । একদিন রাতে ঘুম না আসায় কতক্ষণ আলোর
দিকে চেয় আবার বই পড়ে আবার চোখ বুঝে থেকে কোন ভাবেই ঘুম আসছে না অতপর একটা
খুটির সাথে মাথাকে আঘাত করলাম। আমি পাগোলের মতো হয়ে যাচ্ছি । যাক কয়েকদিন
পরই ঢাকা চলে আসলাম । তাদের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলি । বাড়ি থাকতে
নেটওয়ার্কে সমস্যা করতো। ঢাকা ভর্তি হলাম । অপ্রত্যাশিত একটা ভিন্ন জগতে
প্রবেশ করলাম। ধীরে ধীরে তাদের সাথে আমার যোগাযোগ কমে যাচ্ছে । খুব কম
যোগাযোগ হয়। প্রায় ছয়মাস পর কোটালী পাড়া তাদের বাসায় বেড়াতে গেলাম। আমার
আসার সংবাদ পেয়ে বশার ভাই পুকুরের মত একটি ডোবার পানি শুকিয়ে মাছ ধরে জিইয়ে
রাখল। আমার আসায় অনেক খুশি হল। প্রায় ১০দিনের মত ছিলাম। বিদায় বেলা আপু
আয়েশার হাতে ৫০০টাকার একটা নোট দিলো আমাকে জোড় করে দেবার জন্য গাড়ি ভাড়া।
আমি তো নিবো না। ভুলেগেছি এর মধ্য তারা আলাদা বাড়ি করেছে মুল বাড়ি থেকে
কিছুটা দূরে একটি খালের ওপাড়ে। আয়েশা বলছে একা না নিলে আপনাকে নৌকা পাড়
করবো না । আমাকে একেবারে জড়িয়ে ধরেছে। আমি বললাম ঠিক আছে তুমি নৌকা পাড়
করো। পড়ে উঠতেই টাকাটা নৌকার উপর রেখে একা ভোদৌড়। আয়েশা কেঁদেছিল। চলে এলাম
ঢাকাতে। মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। প্রায় চার পাঁচ মাস পর আমার ভিষণ অসুখ
হয়েছিল। মনে করলাম আমি বাঁচবো না। জাহিদও কিছুটা অসুস্থ । কোটালী পাড়ার আরো
একটি ছেলে অসুস্থ ওরা বাড়িতে যাবে আমি বললাম আমাকেও নিয়ে চল। আমাকে
নিয়েচলল।শরীরে লাল গুড়ি গুড়ি কিযে উঠেছিল। বাড়িতে জাহিদের মা তৈল পড়া এনে
দিল। তাদের যত্নে তিনদিন পরে সুস্থ হয়েছি । একসপ্তাহ থেকে আবার ঢাকা চলে
এছেছি। তখন দেখে এলাম বশার ভাই হাসের ফার্ম করেছে। তিন লক্ষ টাকার মত লোন
করেছিল । ঢাকা এসে যোগাযোগ ক্রমশ কমেই গেল। এক পর্যয়ে আমার যোগাযোগ বন্ধ
হয়ে গেল। কিন্তু কেন জানি না । আমি সব সময়ই তাদের মনে করতাম। কিন্তু কেন
যোগাযোগ করতে পারতাম না এখনও জানি না। প্রায় সাত আট মাস কোনও যোগাযোগ
করিনি। একদিন জাহিদ বলল বশার ভাই তো সবাইকে নিয়ে ঢাকা চলে এসেছে। শুনে অবাক
হয়ে জানতে চাইলাম কেন কোথায়। বলল তাদের হাস সব মারা গেছে । প্রায় চার লাখ
টাকার মত দেনা। তাই কাজের জন্য সবাইকে নিয়ে চলে এসেছে । গাজিপূর থেকে আর
উত্তরে । শুনে খুব কষ্ট পেলাম। তখন প্রচন্ড শিত ছিল । আমি তিনদিন পর ঠিকানা
নিয়ে গেলাম। মানুষ বাধ্য হয়ে কত নির্মম কষ্ট করতে পারে সেখানে দেখলা । কি
কষ্টে দিন কাটাচ্ছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমি কষ্টের গভিরতা বুঝার
জন্য ওখানে রাতে থেকে গেলাম। শিতে আমিই খুমাতে পারিনি । তার ভিতরে ছোট
বাচ্ছা ছেলে মেয়ে। রহিমাকে অনেক কষ্টে গার্মেন্সে ভর্তি করেছে। তা ঠিক মতো
বেতন দেয় না। ভাইও কোনও কাজ পাচ্ছে না পরিবারে ৭জন সদস্য। এক ভয়াবহ কষ্টে
দিন কাটাচ্ছে। আমি এসে নিজের পুরোনো লেপটি জহিরুলের কাছে দিয়ে দিলাম। কি
ভাবে একটু সহযোগীতা করবো কিছুই পাচ্ছি না। ক্রমশ ভুলেই গেলাম কেমন আছে ।
কয়েকমাস পর এলাকার এক পরিচিতের মাধ্যমে মোহাম্মাদ পূর চলে এলো। তার কিছুদিন
পর আমি আর জাহিদ দেখতে গেলাম। ভাই রিক্সা চালাচ্ছে রহিমাও আপু গার্মেন্সে
ঢুকেছে । আয়েশা বাসায় থাকে ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে। চলে এলাম আবার ভুলে
গেলাম আবার বন্ধ হয়ে গেল আমার যোগাযো। কিন্তু স্বরণ করি প্রতিদিন। জাহিদকেও
জিজ্ঞাসা
জাহিদকেও মাঝে মাঝে তাদেরকথা জিজ্ঞাসা করি। একবার শুনলাম বড় ছেলে জহিরুলের ভিষণ অসুখ হয়েছে। আমাকেও দেখতে আসতে বলল । কেন যেন যেতে পারিনি । মহাখালি কলেরা হাসপাতালে এনেছিল, আমাকে আসার অনুরোধ করেছিল। ঐ সময়ে তাদের আপনজন বলতে কেউ ছিল না । আমি কেন যেন যেতে পারিনি অথচ বাড্ডা থেকে মহাখালী বেশি দূর ছিল না। পরে অবশ্য সুস্থ হয়েছে । মাঝা মাঝে যেতে খুব ইচ্ছা করে । একবার দেখে আসি কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে আটকায় জানি না । অনেকদিন গত হল। হঠাৎ বিকেল বেলা একটা কল আসল। আপু জাহিদের থেকে আমার নম্বর নিয়ে কল দিল। এই ভাবে ভুলে যাইয়েন না। রহিমার অবস্থা ভালো না। সরওয়ারদী হাসপাতালে এনেছি কিডনিতে পাথর হয়েছে ।অপারেশন করতে হবে । একটু এসে দেখে যান । আপনাকে দেখতে চায় । খালি আপনার কথা বলে । বললাম আমি কাল বিকেলে আসবো । যেতে পারি নি । পরের দিন জাহিদের সাথে কথা বলে আসলাম । কিন্তু প্রথমে দিশা হারিয়ে শাহাবাগ গিয়েছিলাম পরে পরে মহাম্মাদ পুর হাসপাতালে আসি। এসে দেখি আম্মুজান একে বারে শুকিয়ে গেছে। কিছু খেতে পারে না। তখন হাসপাতালে ওর দাদী আর ও ছিল , আমি জাহিদ আর জাহিদের বন্ধু ছিল । দেখে খুব কষ্ট লাগল । আমাকে দেখে রহিমা মুচকি হেসেছিল। বলল এরকম কি ভাবে ভুলে থাকতে পারেন । ৪১দিনের ঔষধ দিয়েছে তার পরে অপারেশন হবে। এর পর আর খবর নিলাম না একদিন কল করলো কল্যাণপূর ইবনেসিনায় ওর অপারেশন কালকে পারলে একটু দেখে যেয়েন। যেতে চেয়েও কেন যেন যেতে পারলাম না । দুদিন পরে জাহিদেরে ফোন দিয়ে বলি কি অবস্থা । বলল এখন সুস্থ আছে ।। এর কয়েকদিন পর আপু ফোন দিল ঐদিন তো আসলেন না এখন একদিন বাসায় আসেন । বললাম ঠিক আছে আসবো। আজ থেকে প্রায় আড়াইমাস অতিক্রম হয়েছে এখনও যাইনি ও যোগাযোগ করা হয়নি।
জাহিদকেও মাঝে মাঝে তাদেরকথা জিজ্ঞাসা করি। একবার শুনলাম বড় ছেলে জহিরুলের ভিষণ অসুখ হয়েছে। আমাকেও দেখতে আসতে বলল । কেন যেন যেতে পারিনি । মহাখালি কলেরা হাসপাতালে এনেছিল, আমাকে আসার অনুরোধ করেছিল। ঐ সময়ে তাদের আপনজন বলতে কেউ ছিল না । আমি কেন যেন যেতে পারিনি অথচ বাড্ডা থেকে মহাখালী বেশি দূর ছিল না। পরে অবশ্য সুস্থ হয়েছে । মাঝা মাঝে যেতে খুব ইচ্ছা করে । একবার দেখে আসি কিন্তু কোন অদৃশ্য শক্তি আমাকে আটকায় জানি না । অনেকদিন গত হল। হঠাৎ বিকেল বেলা একটা কল আসল। আপু জাহিদের থেকে আমার নম্বর নিয়ে কল দিল। এই ভাবে ভুলে যাইয়েন না। রহিমার অবস্থা ভালো না। সরওয়ারদী হাসপাতালে এনেছি কিডনিতে পাথর হয়েছে ।অপারেশন করতে হবে । একটু এসে দেখে যান । আপনাকে দেখতে চায় । খালি আপনার কথা বলে । বললাম আমি কাল বিকেলে আসবো । যেতে পারি নি । পরের দিন জাহিদের সাথে কথা বলে আসলাম । কিন্তু প্রথমে দিশা হারিয়ে শাহাবাগ গিয়েছিলাম পরে পরে মহাম্মাদ পুর হাসপাতালে আসি। এসে দেখি আম্মুজান একে বারে শুকিয়ে গেছে। কিছু খেতে পারে না। তখন হাসপাতালে ওর দাদী আর ও ছিল , আমি জাহিদ আর জাহিদের বন্ধু ছিল । দেখে খুব কষ্ট লাগল । আমাকে দেখে রহিমা মুচকি হেসেছিল। বলল এরকম কি ভাবে ভুলে থাকতে পারেন । ৪১দিনের ঔষধ দিয়েছে তার পরে অপারেশন হবে। এর পর আর খবর নিলাম না একদিন কল করলো কল্যাণপূর ইবনেসিনায় ওর অপারেশন কালকে পারলে একটু দেখে যেয়েন। যেতে চেয়েও কেন যেন যেতে পারলাম না । দুদিন পরে জাহিদেরে ফোন দিয়ে বলি কি অবস্থা । বলল এখন সুস্থ আছে ।। এর কয়েকদিন পর আপু ফোন দিল ঐদিন তো আসলেন না এখন একদিন বাসায় আসেন । বললাম ঠিক আছে আসবো। আজ থেকে প্রায় আড়াইমাস অতিক্রম হয়েছে এখনও যাইনি ও যোগাযোগ করা হয়নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন