নাটক 
লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।
ফজলে রাব্বী দ্বীন

দৃশ্য-১
(রহিম, রিহান আর সুমন তিন বন্ধু মিলে যমুনা নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবে।)
রহিম: ঐ যে দেখ্ নদীর পাড়ে বসে লোকগুলা কেমন বর্শি দিয়া মাছ ধরতাছে।
রিহান: তাইতো, চল না দুস্ত আমরাও আজকে মাছ ধরি। সেই ছোটবেলায় বর্শি দিয়া কত মাছ ধরতাম এখন তো আর সময়ই পাই না। চল্ না চল্ ।
সুমন: আমারও খুব ইচ্ছা করতাছে। কিন্তু মাছ ধরতে গেলে তো বর্শি লাগবে। সেটা কোথায় পাব?
রহিম: সেই দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দে। নদীর পাড়ে এর আগেও এসে আমি বর্শি দিয়ে মাছ ধরছি। তোরা এখানে পাচ মিনিট দাড়া আমি ঐ দোকান থেকে তিনটা বর্শি কিনে আনতাছি।
রিহান: ঐ দোকানে বর্শি পাওয়া যায় নাকি! আগে তো জানতাম না।
সুমন: তোর জাননের কাজ নাই। চুপ করে বসে থাক। রহিম তুই দৌড়ায়ে যা। দেরী করিস না যেন!
(রহিম দৌড়ায়ে দোকানের দিকে যাবে। আর দুইজন নদীর পাড়ে বসে আনন্দের সাথে খোশগল্প শুরু করবে আর নদীর ঢেউ দেখতে থাকবে।)
দৃশ্য-2
(রহিম তিনটা বর্শি কিনে ওদের হাতে একটা করে দিয়ে নদীর পাড়ে বসে পড়ল। তারপর আনন্দের সাথে মাছ ধরতে শুরু করল। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই রিহানের বর্শিতে কি যেন একটা ধরে বসল। খুব জোরে সে টানছে এবং বর্শির সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার মত অবস্থা কিন্তু তার পরও সেটাকে তুলতে পারছে না। তখন...)
রিহান: বসে বসে কি দেখছিস? একটু সাহায্য র্ক না। বড় মাছ ধরেছে মনে হয়। জলদি র্ধ ।
রহিম/সুমন: তুই শক্ত করে ধরে থাক্ ছাড়িস না। আমরা ধরতাছি।
(এরপর তিনজন একসাথে বর্শিটাকে টেনে যেই পাড়ে তুলেছে অমনি সবার চক্ষুই ছানাবড়া।)
রহিম: এ কি রে! এটা তো দেখছি একটা ব্যাগ। মাছ কোথায়?
সুমন: দূর। সব পরিশ্রমই মাটি। আগে জানলে টানই দিতাম না।
রিহান: এবার চুপ র্ক তো। আরে আমি কি জানতাম বর্শির মাথায় ব্যাগ ঝুলে থাকবে! কিন্তু ব্যাগের ভেতর কি আছে রে! যার জন্য এত ওজন লাগল। চল্ দেখি।
(তিনজন মিলে ব্যাগের চেইন খুলবে। আর খোলার সাথে সাথেই সবার চোখে একটা চকচকে আলোকচ্ছটা ঝলক লাগবে।)
রহিম: এ যে দেখছি ব্যাগভর্তি স্বর্ণের হার।
সুমন: চুপ কর্ । জোরে কথা বলিস না। লোকে জানলে অসুবিধা আছে। আল্লাহ্ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। এগুলো এখন সব আমাদের।
রিহান: না না, এসব একটাও আমাদের হতে পারেনা। এ সম্পদে হাত দিলে আমরা সবাই গোনাগার হয়ে যাব। তারচেয়ে ভাল হবে চল্ আমরা তিনজনে মিলে যার সম্পদ তাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।
রহিম: স্বর্ণ ভর্তি ব্যাগটা আমরা পেয়েছি এখন সব আমাদের। অন্যের প্রতি তোর এত দরদ কেন? তোর ভাল না লাগলে তুই এখান থেকে চলে যা।
(সুমন রহিমের কথায় হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে সায় দিবে।)
রিহান: তোরা আমার ভাল বন্ধু হয়েও এ কথাটা বলতে পারলি? দেখ্ লোভ করা কিন্তু ভাল না। এ সম্পদ আজ আছে তো কাল থাকবে না। তার চেয়ে ভাল হবে চল্ ব্যাগের মালিককে খুঁজে বের করি।
সুমন: তুই আমাদের কোনদিন প্রকৃত বন্ধু ছিলি না আর থাকারও দরকার নেই। যা ভাগ্ এখান থেকে।
(রিহান তার দুই বন্ধুর লোভাকাতর কথা শুনে আফসোস করতে থাকবে। তারপর ধিক্কার দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করবে।)
দৃশ্য-৩
(নদীর পাড়ের জায়গাটা বেশ সুবিধার না। যেকেউ ওদেরকে দেখে ফেলতে পারে। তাই ঠিক করল নদীর ওপারে নির্জন জায়গায় যাবে। এবং তারা একটা খালি নৌকা দেখতে পেয়ে জলদি সেটার উপর চড়ে বসল।)
রহিম: (নৌকার মাঝখানে ব্যাগটাকে রেখে) নদীতে এত ঢেউ কেন সুমন? আমার কেমন যেন ভয় লাগতাছে।
সুমন: (বৈঠা নাড়বে আর বলবে) আমারও তো। কিন্তু তুই কি সাতার জানিস না?
রহিম: সাতার জানলে কি আর ভয় পাই।
(সুমন মনে মনে প্লেন আঁকা শুরু করবে। কোনভাবে নদীতে তাকে ফেলে দিতে পারলেই ব্যাগের ভেতর সবকিছুই তার হয়ে যাবে। কিন্তু সে নিজেও সাতার জানে না বলে একটু সাবধান হয়ে কাজ করতে চেষ্টা করল।)
সুমন: (এগিয়ে এসে রহিমের হাতে বৈঠা তুলে দিবে) নে তুই একটু নৌকার হাল ধর্। আমি একটু জিরোই। হাত একেবারে লেগে গেছে।
(রহিম বৈঠাটা যেই হাতে নিতে যাবে অমনি সুমন তাকে জোরে এক ধাক্কা দিতে যাবে। কিন্তু নৌকাটা খুব ছোট আর নড়বড়ে হওয়ায় সেটা স্থির থাকবে না। রহিম পানিতে ধপাস করে পড়ার সময় নৌকাটা আরও বেসামাল হয়ে যাবে। ফলে আচমকা সেটাও উল্টে যাবে। রহিম আর সুমন দুজনেই নদীতে হাবুডুবু খেতে থাকবে এবং কিছুক্ষণ পর মারা যাবে।)
দৃশ্য 4
(বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রিহান তার বন্ধুদের খোঁজ করার জন্য আবার নদীর কাছে চলে আসবে। কিন্তু হঠাৎ নদীর পাড়ে সে অনেক মানুষের ভিড় দেখতে পাবে। জলদি ভিড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখবে নদীর এক কোণায় তার দুই বন্ধুর লাশ পড়ে আছে। চোখের কোণায় অসংখ্য অশ্রু জমে টলমল করবে। আর মনে মনে বলতে থাকবে, ‘লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।’
---
চকপাঠক, শেরপুর সদর, শেরপুর।
fozlerabbi89@gmail.com
 
Top