ধারাবাহিক উপন্যাস
শেকড়ের সন্ধানে
অধ্যক্ষ ডাঃ এম এ এইচ ফারুক
♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦ ♦[তৃতীয় পর্ব]
ফাতিমা আবদুল্লাহ আনমনা হয়ে উদাস মনে
বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবনের পাশ্বেই একটি
বড় গাছের নিচে বসে আছে।এই সময়ে
ফাতিমা এখানে থাকার কথা নয়।কেন সে
উদাসিভাব নিয়ে একা একা বসে আছে? মনটা
খুব খারাপ নয়তো?এই প্রশ্ন গুলো ভাবতে
ভাবতে অলিভিয়া আলভা ফাতিমা
আবদুল্লাহর দিকে এগিয়ে এল।
কিরে ফাতিমা এই অসময়ে এখানে একা একা
কি করছিস? কোন প্রবলেম নয়তো? নাকি
শরীর খারাপ করছে? একটানা কথাগুলো বলল
অলিভিয়া আলভা।
নারে কিছু না, ভাল লাগছেনা তাই বসে
আছি বলল ফাতিমা আবদুল্লাহ।
কিছু একটাতো হয়েছে, আমার থেকে লুকাচ্ছ
কেন?বলল অলিভিয়া আলভা।
ফাতিমা আবদুল্লাহ কিছু বলতে চাইছে কিন্তু
বলতে পারেনি।তার দু গন্ড বেয়ে ঝরে পড়ছে
অশ্রুধারা।
ফাতিমা শান্ত হও, কি হয়েছে আমাকে খুলে
বল-বলল অলিভিয়া আলভা।
ম্যাডাম আমাকে ক্লাশ থেকে বের করে
দিয়েছেন এবং বলছেন হিজাব পড়ে ক্লাশ
করা যাবেনা।হয় হিজাব ছাড়তে হবে নাহয়
ক্লাশ ছাড়তে হবে।তাছাড়া আজকের শিক্ষক
কাউন্সিল অধিবেশনে হিজাব নিষিদ্ধের
আইন ফাইনাল করছেন বলে হুমকি দিলেন বলল
ফাতিমা আবদুল্লাহ।
অলিভিয়া আলভা কিংকর্তব্য বিমূঢ়
চাহনিতে ফাতিমার দিকে থ হয়ে তাকিয়ে
আছে,যেন কথা বলা আর শান্তনা দেয়ার
ভাষা হারিয়ে ফেলছে।তার মা কর্তৃক এই
ঘটনায় সে চরম বিব্রতকরবোধ করছে।
অলিভিয়া আলভা নিজেকে সামলে নিয়ে
বলল দূর এইটা একটা ব্যাপার হল?আর এটা
নিয়ে টেনশনেরইবা কি আছে? ইতিপূর্বে
আরো কয়েকবার এই ঘটনা ঘটার নজির এই
বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে।সুতরাং এই নিয়ে
চিন্তা করোনা,সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হতে হবে, কারণ এটা আমাদের ধর্মীয়
পরিচয়।তাছাড়া প্রয়োজনে লেখা পড়া বাদ
যাবে কিন্তু হিজাবের সাথে আপোষ করতে
পারবনা বলল ফাতিমা আবদুল্লাহ।
যা কি বলিছ? সামান্য এই বিষয়ে এত
সিরিয়াস হলে কেমনে হবে?আর মাত্র একটা
বছর বাকি কোর্স সম্পূর্ণ হতে।ছাড় দিয়ে
হলেও কোর্সটা কমপ্লিট করে নাও বলল
অলিভিয়া আলভা।
বিষয়টা আসলে ছোট না, এটা আমাদের
বিশ্বাস ও পরিচিতির ব্যাপার।সব বিষয় ছাড়
দিলেও মৌলিক বিষয়গুলোতে আপোষ হয়না।
আমরা আমাদের জীবনের চেয়েও আমাদের
এই ফরজ বিধানগুলোকে মর্যদা বেশি দিই
বলল ফাতিমা আবদুল্লাহ।
যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একপেশে এই
আইন করে বসে তাহলে কি সত্যিই লেখাপড়া
ছেড়ে দিবি? বলল অলিভিয়া আলভা।
যদি এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পরিচিতি
বহনে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে তাহলে আমাদের
বিকল্প পথ বেচে নিতে হবে।মনে রাখিছ
আমাদের লেখা পড়া করে বড় হওয়ার চেয়ে
আমাদের ফরজ ওয়াজিবগুলো মানা অনেক
গুরুত্বপূর্ণ বলল ফাতিমা আবদুল্লাহ।
ফাতিমা এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত
আসেনি আর আসলেও কর্তৃপক্ষ তাদের
সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত অটল থাকতে পারবে
কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে বলল অলিভিয়া
আলভা।
দু জনের কথার ফাঁকে তাদের সাথে যোগ দিল
আরো কয়জন বন্ধু। সবাই আজকের ক্লাশে ঘটে
যাওয়া ঘটনায় বিব্রত।অবশ্যই সাথে সাথেই
ক্লাশে অনেকে প্রতিবাদ করছে কিন্ত
ম্যাডাম তার সিদ্ধান্তে এতই ডিটারমাইন্ড
যে কারো কথাই শুনলেননা।
এই শুন আমরা ফাতিমার বিষয়টা নিয়ে ভিসি
স্যারের সাথে স্বাক্ষাৎ করি বলল আরিয়া।
না, ভিসি স্যারের সাথে স্বাক্ষাতের আগে
ম্যাডামের সাথে পার্সোনাল আরেকবার
কথা বলা যায় বলল আবাম ম্যাক।
না, উনার সাথে কথা বলে কোন ফায়দা নেই।
উনি এক কথার মানুষ, ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে
বসলেও পরে প্র্যাস্টিজ ইস্যু ভেবে আর ভুল
থেকে সরে আসেননা।আমার মা হওয়ায় এই
বিষয়ে আমি উনাকে তোমাদের চেয়ে বেশি
চিনি বলল অলিভিয়া আলভা।
হ্যাঁ, অলিভিয়া যথার্থই বলছে। চল, আমরা
বিষয়টা নিয়ে বরং সরাসরিই ভিসি স্যারের
সাথে কন্সাল্ট করি বলল এডসন মাইকেল।
সবাই গেল ভিসি স্যারে অফিসে।অফিস
কর্মকর্তা লুই সান জানান স্যার এখন
স্বাক্ষাতের কোন সময় দিবেননা।স্যার
শিক্ষক কাউন্সিল অধিবেশনে
আছেন,স্বাক্ষাৎ করতে হলে এক ঘন্টা পর
করতে হবে জানান।
সবাই আবার কলা ভবন চত্বরে ফিরে এল।এই
বিষয়ে সবাই কথা বলছে।আসলে এই এক
পেশে সিদ্ধান্তে কেউই স্বাভাবিকভাবে
মেনে নিতে পারছেনা।
যদি কর্তৃপক্ষ এমন উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিয়ে
বসেন তাহলে আমরা কি করতে পারি বা
আমাদের কি করা উচিৎ এই বিষয়ে আমাদের
একটা সিদ্ধান্তে আসা দরকার বলল আরিয়া
হুম, ঠিক বলছ বলল এডসন মাইকেল।
আসলে এটা তাদের ধর্মীয় পরিচিতিতো এই
জন্য স্বাভাবিক ফাতিমারা এতে আপোষ
করবেনা, তারা তাদের অধিকার আদায়ে
সম্ভাব্য সকল পথ তালাশ করবে আর আমাদের
উচিৎ ধর্ম বর্ণের উদ্ধে উঠে তাদের মৌলিক
অধিকার আদায়ে পূর্ণ সমর্থন দেয়া
প্রয়োজনে তাদের জন্য সমন্বিত আন্দোলন
বলল অলিভিয়া আলভা।
পারবি তোমার মায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন
করতে? দুষ্টমি করে বলল ইরিন।
কি বলিছ ইরিন? মনে রাখিছ বন্ধুত্বের
সম্পর্কটা মাঝে মাঝে পারিবারিক
বন্ধনকেও অস্বীকার করে,যদি তা না হত
তাহলে ফ্যামিলির ডিসেশনের বাহিরে
বাড়িঘর ছেড়ে তুমি কিভাবে এডসনকে নিয়ে
পালিয়ে বিয়ে করে ফেললে? বলল অলিভিয়া
আলভা।
সবাই হো হো করে হেসে দিল।
ইরিন এডসন খুব লজ্জা পাইছে চেহারা
দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
বিষয়টা হল এই মহুত্বে আমাদের উচিৎ
ফাতিমাদের পাশে দাঁড়ানো বলল অলিভিয়া
আলভা।
শিক্ষক কাউন্সিল অধিবেশন এখনো শেষ
হয়নি কিন্তু নোটিশ বোর্ডেই ঝুলে গেল
হিজাব নিষিদ্ধের নোটিশ।দুঃখজন ব্যাপার
হল শিক্ষক কাউন্সিল অধিবেশনে হিজাব
নিষিদ্ধ আইন পাশ করল এবং এই সিদ্ধান্ত
নিল যে বা যারা এই বিধি বিধান অমান্য
করবে এবং এই বিধির বিরুদ্ধে আন্দোলন
করবে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।
অলিভিয়া আলভা বলল এটা আমাদের
বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য
কালো আইনই নয় শুধু মৌলিক অধিকার হরণের
নিকৃষ্ট উদাহরনও বটে।
আসলে ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকিটা জাষ্ট
হুমকি।আমরা আন্দোলনে যাব, দেখি কয়জনের
ছাত্রত্ব বাতিল করে? ছাত্রদের নিয়েই
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।তবে এই বিষয়ে আমাদের
মাঝে অনৈক্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চলবে এই
বিষয়ে আমাদের সংকীর্ণতার উর্দ্ধে
থাকতে হবে বলল এডসন মাইকেল।
ঠিক বলছ বলল অলিভিয়া আলভা।
আমরা এই বিষয়ে কাল বসি তবে দুটা বিষয়ে
আজ সিদ্ধান্ত হতে পারে তাহল কাল ক্লাশ
বর্জন ও ভিসি স্যার বরাবর সাধারণ
শিক্ষার্থীদের ব্যানারে স্বারকলিপি
প্রদান।এর পর কাল বসেই পরবর্তী কর্মসূচি
ঠিক করা হবে।
সুন্দর প্রস্তাব, তা হতে পারে বলল ইরিন।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে একটা
সর্বধর্মীয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি
করা দরকার বলল এডসন মাইকেল।
জ্বি, আমরা আগামিকাল বৈঠকে তা ঠিক
করব বলে আজকের মত এখানে শেষ করার
প্রস্তাব করে অলিভিয়া আলভা।সবার
সর্বসম্মতিতে আজকের বৈঠক এখানে
সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।
(চলবে)