আজ থেকে ৩৮ বছর আগের কথা। ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে ইসলাম গ্রহণ করে মোহাম্মদ আলি তখন সারা বিশ্বেই এক আলোচিত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। শুধু বক্সিং রিং নয়, নীপিড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবেও উচ্চারিত হচ্ছিল তার নাম।
অসাধারণ
ব্যাক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন মোহাম্মদ আলী। বক্সিং রিং এবং রিং এর বাইরে তিনি
তখন দারুণ জনপ্রিয়। নিজের সোনালি সেই সময়টাতেই পা রেখেছিলেন বাংলাদেশের
মাটিতে।
স্বাধীনতা
যুদ্ধের পর বাংলাদেশ তখন পার করেছে ৭টি বছর। এই ৭ বছরের শিশু রাষ্ট্রটি
বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মুখোমুখি হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার। এর মধ্যে দুর্ভিক্ষ
হয়েছে। চরম এবং কঠিনতম রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত অতিক্রম করেছে। ওই সময়ই ঢাকায়
এলেন কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলি।
১৯৭৮
সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার পল্টন ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে উপস্থিত
হন। হাজার হাজার জনতা সেদিন এক নজর জীবন্ত কিংবদন্তীকে দেখার জন্য হুমড়ি
খেয়ে পড়ে সেদিন।
ইন্টারন্যাশনাল
বিজনেস টাইমস নামে একটি পত্রিকায় তিন বছর আগে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়
ঢাকা মোহাম্মদ আলির সফর নিয়ে। ওই রিপোর্টে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের বরাত দিয়ে
লেখা হয়, মোহাম্মদ আলিকে দেখার জন্য প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ ২০ লাখ
মানুষ উপস্থিত হয় ঢাকায়।
পল্টন
ময়দান সংলগ্ন একটি বক্সিং স্টেডিয়াম স্থাপন করা হয়। যেটার উদ্বোধন করেন
মোহাম্মদ আলি এবং ওই স্টেডিয়ামের নামকরণই করা হয় মোহাম্মদ আলি স্টেডিয়াম
নামে।
ঢাকায়
বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ আলি সেদিন তুলে ধরেছিলেন
বাংলাদেশের পতাকা। সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন, বাংলাদেশ মাথা
উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ধীরে ধীরে।
নব
নির্মিত মোহাম্মদ আলি স্টেডিয়ামের রিংয়ে একটি প্রীতি লড়াইয়েও অংশ নেন
তিনি। তার বিপক্ষে বক্সিং লড়াইয়ে অংশ নেয় ১২ বছর বয়সী এক বালক। যেন গালিভার
আর লিলিপুটের লড়াই। শুধু তাই নয়, ১২ বছর বয়সী ওই বালকের হাতে নকআউট হয়ে
যান তিনি।
এ
সময় তার হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদপত্র তুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে
পাসপোর্টও প্রদান করা হয় মোহাম্মদ আলিকে। ওই সময় এই কিংবদন্তী মন্তব্য
করেছিলেন, ‘আমি যদি আমেরিকা থেকে কখনও বিতাড়িত হই, তাহলে কোন চিন্তা নেই,
আরেকটি দেশ পেয়ে গেলাম।’ সুত্র-দৈনিক ইত্তেফাক