স্বপ্ন বিলাশ
মোনোয়ার হোসেন
……………………
শীতের রাত । অাকাশ ভর্তি চাঁদের অালো । সম্ভবত অাজ পূর্ণিমা রাত । অারবী তারিখ মনে নেই । চাঁদটাকে গোলাকার থালার মতো লাগছে ।
শীতের রাতে কেউ ছাদে উঠে না । পূর্ণিমার রাত উপভোগ করে না । সকলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লেপ-কম্বোল মুড়ে শুয়ে পড়ে । কিন্তু রাহেমকে অাজ ঘুমোনোর ইচ্ছে করছে না । ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে । চাঁদের অালোয় ছাদে হাঁটতে ইচ্ছে করছে খুব। সে বিছানা ছেড়ে উঠে ছাদে যায় । হাঁটে ।শিশির ভেজা ছাদে খালি পায়ে হাঁটে ।
পিছন থেকে মৌরী এসে চোখ চেপে ধরে রাহেমের । তুমি এসেছো ,মৌরী ?
অবাক হয় মরী । অামি মৌরী , তুমি বুঝলে কিভাবে ?
তোমার হাতের ছোঁয়ায় ।
তাই বুঝি ?
হু ।
অামার হাতের ছোঁয়ায় কি অাছে , যা ধরে তুমি বুঝতে পার ?
তোমার হাতের ছোঁয়ায় যা অাছে তা অন্য কারো হাতের ছোঁয়ায় নেই ।
তাই নাকি ?
ঠিক তাই । এ তো চাঁদের অালো । অমাবস্যা রাতেও অামি তোমার ছোঁয়া বুঝি ।
রাহেমের কথায় মুগ্ধ হয়ে যায় মৌরী ।
মুগ্ধ হয়ে রাহেমের পাশাপাশি হাঁটে । রাহেম পেন্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অার মৌরী রাহেমের হাত ধরে পাশাপাশি ; শরীর ঘেঁষে ঘেঁষে ।
মৌরী ?
হুম ।
শীত করছে?
একটু একটু । তোমার ?
অামারও ।
চা খাবে ?
মন্দ হয়না ।
ঠিক অাছে । তুমি একটু অপেক্ষা করো অামি চা করে নিয়ে অাসি ।
ঠিক অাছে ।
মৌরী চা করতে যায় ।
একা একা ছাদে হাঁটে রাহেম । অানমনে । হাঁটে অার ভাবে ।
চোখের সামনে চাঁদের অালোর মতো স্পষ্ট হয়ে অাসে মৌরীর সাথে তার প্রথম পরিচয়ের কথা ।
ঢাকায় পান্থপথে অানমনে এলোমেলো ভাবে হাঁটছিল সে । মনটা ভীষণ খারাপ ছিল সেদিন। গতকাল রাতে দিনাজপুর থেকে এক কোম্পানীর ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসেছে সে । ঘুম ঘুম চোখে নাইট কোচ থেকে নেমে দেখে পকেট চুরি !
টাকা পয়সা যা ছিল তা তো খোয়া গেছেই , সাথে ইন্টার ভিউ কার্ডটাও । পরিক্ষা দেওয়া হলো না তার । অথচ এ চাকরিটা তার ভীষণ দরকার ছিল । টাকা পয়সা খোয়ায়ে অার পরিক্ষা দিতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায় রাহেমের । ঢাকা শহরে কোথায় হাঁটছে ,কোথায় যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারে না সে ।
নতুন ঝকঝকে একটা পাজাঁরো গাড়ি এসে থামে তার সামনে । পরীর মত সুন্দর এক ললনা গাড়ি থেকে নেমে এসে তার সামনে দাঁড়ায় । এই যে, শুনছেন ?
জ্বী অামায় বলছেন ?
তো কাকে বলছি?
জ্বী বলুন ।
ঢাকা শহরে নতুন এসেছেন নাকি হ্যাঁ , ঠিক ভাবে দেখে শুনে চলতে পারেন না । অার একটু হলেই তো. ....।
জ্বী ?
মৌরী তাকায় রাহেমের দিকে । রাহেমের মায়াবী চেহারা তাকে মুগ্ধ করে দেয় । কিছু কিছু মানুষের চেহারা অাছে বেশ মায়াবী । প্রথম দেখায় মায়া ধরে যায় ।রাহেমের চেহারাটা ঠিক এরকম । মায়াবী । প্রথম দেখায় মায়া ধরে যায় । তার বোকা বোকা ভাবটা ভাল লাগে মৌরীর । কেমন যেন মায়া জন্মে মনে । মুহূর্তে সব রাগ উবে যায় মৌরীর ।
শুনুন ।
জ্বী ?
অাপনার কি জ্বী জ্বী রোগ অাছে নাকি ?
জ্বী ?
জ্বী ছাড়ুন ।
ছাড়লাম ।
যা জিজ্ঞেস করব ,সত্য বলবেন ।
জ্বী ।
অাবার জ্বী জ্বী ?
ওহ্ সরী । সত্য বলব ।
হোম ডিস্টিক কোথায় অাপনার ?
দিনাজপুর ।
ঢাকায় কেন এসেছেন ?
ইন্টারভিউ দিতে ।
কিসের ইন্টারভিউ ?
প্রাইভেট কোম্পানীর।
ইন্টারভিউ দিলেন ?
না ।
অবাক হলো মৌরী । কেন ? কেন দিলেন না?
পকেট থেকে ইন্টারভিউ কার্ড চুরি হয়ে গেছে । সাথে টাকা পয়সাও ।
সো সেড । কীভাবে ?
জানিনা । জানলে তো অার চুরি করতে পারতো না ।
এখন কোথায় যাচ্ছেন ?
তাও জানিনা ।
সে কি ?
সত্যি ।
দেশে ফিরবেন কিভাবে ?
বলতে পারিনা ।
সো সেড ।অাপনাকে একটা কথা বলব কিছু মনে করবেন না ।
কিছু মনে করব না ।
অাপনার ভাড়ার টাকাটা অামি দিয়ে দিচ্ছি ।
নিতে পারি । তবে শর্ত অাছে একটা।
বলুন ।
অাপনি একটা বিকাশ নাম্বার দিবেন । দেশে পৌঁছেই অামি টাকাটা অাপনাকে পাঠিয়ে দিব ।
ঠিক অাছে ।
দিনাজপুরে এসেই মৌরীকে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল রাহেম ।
মৌরী মনে করেছিল রাহেম টাকা পাঠাবেনা । টাকা পেয়ে সে রাহেমকে কল দিয়ে ধন্যবাদ জানায় ।
তারপর থেকে ওদের ফোনে কথা হয় নিয়মিত ।
এই যে সাহেব , কি ভাবছেন শুনি ?
মৌরীর কথায় চমকে উঠে রাহেম । ভাবনার জগত কেটে যায় । ঘাড় ঘুড়ায় । মৌরীর চোখে চোখ রাখে । এসেছো ?
হুম ।
মৌরীর হাতে এক মগ চা ।
সে রাহেমের পাশে বসে । গা ঘেঁষে। গালে গাল লাগিয়ে ।
দুজনে এক কাপে চুমুক দিচ্ছে । মৌরী মগের যে জায়গাটাতে মুখ বসায় ; রাহেমও ঠিক সে জায়গাটাতে মুখ বসিয়ে চায়ে চুমুক দেই । দু’জনে হাসে । তাকায় অাকাশের দিকে । চাঁদে মেঘে বেশ লুকোচুরি খেলছে ।
শীত বাড়ছে । রাহেম মৌরীকে জোরে চেপে ধরে । চায়ে চুমুক দিয়ে মুখের গরম বাতাশ মৌরীর কানের নিচে ছাড়ে । মৌরী কেঁপে উঠে । রাহেম অারো জোরে চেপে ধরে মৌরীকে । চুমু দেয় ঘাড়ে, কপালে, ওষ্ঠে অার......।
এই যে ভাইয়া ! ঘুমে ঘনঘন নি:শ্বাস ছাড়েন কেন? কি বিড় বিড় করেন ?
রুমমেট রাহাতের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় রাহেমের ।
চোখ খুলে ।
দেখে বুকের উপর মৌরীর ছবিটা পড়ে অাছে ।
গতকাল মৌরী তাকে এই ছবিটা পাঠিয়েছে ।
শুয়ে শুয়ে ছবিটা দেখছিল সে । তারপর বুকে ছবিটা চেপে ধরে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারেনি ও ।
 
Top