কাউসার আহমেদ

ছোট গল্প

নারী

কাউসার আহমেদ
অনামিকা বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে কেমন লাগছে দেখছে। আজ সে সুন্দর করে সেজেছে। ঠিক বিয়েতে যেমন সেজেছিল। আজ তার বিবাহ বার্ষিকী। আজ তার বিয়ের দু'বছর পূর্ণ হল। বিবাহিত জীবন তার অনেক সুখের। তার স্বামি তাকে খুব ভালবাসে। ইদানিং স্বামির কাছে তার গুরুত্ব আরো অনেক বেড়ে গেছে। কারণ সে মা হতে চলেছে। তার স্বামির নাম আবির। আবির পুলিশের চাকরি করে।
অনামিকা আজ আবিরের সাথে বাহিরে ঘুরতে যাবে। আবিরের অপেক্ষায় আছে সে। আবির আজ ডিউটি থেকে তারাতারি ফিরবে।
অনামিকা এসে খাটের উপর বসল। টেলিভিশন অন করে টেলিভিশন দেখতে লাগল সে। আজ তার মন খুব ভাল।
হঠাৎ করেই অনামিকার মন প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেল। টেলিভিশনে একটা নিউজ দেখে তার মন খারাপ হল। সে টেলিভিশন অফ করে দিয়ে মন খারাপ করে খাটের উপর বসে রইল।
আবির বাসায় এল। অনামিকার পাশে এসে বসল। অনামিকার কেন মন খারাপ সে বুঝতে পারছে না। সে অনামিকার দিকে তাকিয়ে বলল কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেন?
অনামিকা নিরব হয়ে রইলো। কিছু বলল না। আবির আবার জিঙ্গেস করল, কি হয়েছে বল আমাকে?
অনামিকা স্বামির দিকে না তাকিয়ে বলল, আমি যে মা হতে চলেছি তা কি তোমার মনে আছে?
আবির বলল, কি বলছো এসব? মনে থাকবে না কেন?
অনামিকা বলল, কেউ যদি আমার পেটে লাথি মেরে এ সন্তান নষ্ট করে দেয়?
আবির বসা থেকে উঠে বলল কি বলছো তুমি? কার এত বড় সাহস?
অনামিকা বলল, কার এত বড় সাহস! একটু আগে খবরে দেখলাম তোমার মত দেখতে একটি পুলিশ একটি মেয়ের পেটে লাথি মেরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে। সেই পুলিশ কি তুমি?
আবিরের আর বুঝতে বাকি নেই অনামিকার কি হয়েছে। সে বলল, আর বলনা। পুলিশের চাকরি মানেই ঝামেলার চাকরি। এক দিকে উপরের চাপ, আরেক দিকে সাধারণ মানুষ। পুলিশের চাকরি নিয়ে কি ঝামেলার মধ্যে যে আছি।
অনামিকা একটু তিব্র কন্ঠে বলল, আমি তোমাকে যে প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।
আবির বলল, তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?
অনামিকা বসা থেকে উঠে আবিরের দিকে তাকিয়ে আরো তিব্র কন্ঠে বলল কিভাবে কথা বলছি? তোমার সাথে কিভাবে কথা বলা উচিৎ? আমি যা জিঙ্গেস করছি তার উত্তর দাও। সেই পুলিশ কি তুমি?
আবির বলল, হ্যাঁ।
অনামিকা আবিরের উপর থেকে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল, ছি! তুমি এতটা অমানুষ!
আবির বলল তুমি এমন করছো কেন? এটা একটা এক্সিডেন্ট।
অনামিকা বলল, এক্সিডেন্ট! এক্সিডেন্ট কাকে বলে জান? তুমি একটা অন্তঃসত্তা মেয়ের পেটে লাথি মেরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে বলছো এক্সিডেন্ট! ছি!
আবির বলল, অনামিকা তুমি মাথা ঠান্ডা করে বস।
আবির অনামিকার হাত ধরে বসাতে চেয়েছিল। অনামিকা একটু সরে গিয়ে বলল, ডোন্ট টাচ মি। আমি একজন নারী। নারী হয়ে আরেকটা নারীর সর্বনাশ দেখে কি করে চুপ করে থাকি। আজ থেকে আমিও তোমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিব। চলে যাব এ বাড়ি ছেরে।
আবির বলল, কি পাগলামি শুরু করছো? চলে যাবে কেন?
অনামিকা বলল, কি করব? তোমার মত অমানুষের সাথে একই ছাদের নিচে বাস করব? তুমি যে আমার পেটে লাথি মেরে আমার সন্তান নষ্ট করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? আজ তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। ছি!
আবির থমকে গেল। অনামিকার এমন রুপ সে আর কখনো দেখেনি। অনামিকা আজ বিদ্রোহী হয়ে উঠছে। তাকে থামানোর কোন পথ নেই। একজন নারী যে এতটা ভয়ংকর রুপ ধারন করতে পারে তার জানা ছিল না।
অনামিকা বলল আমি সেই মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়াব। কাল আন্দোলনে তাদের মাঝে আমাকেও দেখতে পাবে। কাল তুমি আমার পেটে লাথি মেরে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিও। আমি জানি তুমি পারবে। কারণ, তুমি মানুষ নও, তুমি অমানুষ।
অনামিকা চলে গেল। আবির নির্বাক হয়ে বসে রইল। নিজেকে কেমন জানি অমানুষ মনে হতে লাগল তার।।
 
Top