ধারাবাহিক উপন্যাস
শেকড়ের সন্ধানে
অধ্যক্ষ ডাঃ এম এ এইচ ফারুক
[৫ম পর্ব]
ড.ম্যাডিসন আলভা চেম্বারে বসে পত্রিকায় চোখ
বুলাচ্ছেন।তিনি সাধারণত এই সময় অফিসে আসেননা।
আজ অলিভিয়া আলভাকে বিমানে তুলে দিয়ে আর
বাসায় ফিরেননি। নাস্তাও করছেন অফিসে।এখন
নিজেকে অনেকটা ফ্রি মনে হচ্ছে।এই দু দিন
অলিভিয়ার আচরণে অনেকটা বিব্রতবোধ
করছিলেন।
অফিস বয় একটি ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলল স্যার
উনি আপনার স্বাক্ষাৎ চাচ্ছেন।
হ্যাঁ, উনাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো বললেন
ড.ম্যাডিসন আলভা।
কিরে দোস্ত, আমার অফিসে আসতে তোমার
আবার অনুমতি লাগে? বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
কিযে বল তুমি কত বড় একজন সম্পাদক, বুদ্ধিজীবি
তোমার অফিসে আসতে অনুমতিতো লাগবেই,
হাসতে হাসতে বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
আইজ্যাক ইভান তার বাল্যবন্ধু, পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক।
তই বল এই অসময়ে কি মনে করে গরিবের এই
আস্তানায়? বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
হ্যাঁরে ভাবছি গরিবের আস্তানা যদি এত সুন্দর হয়
তাহলে না জানি ধনির আস্তানা না কত্তো সুন্দর!
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
হইছে আর ন্যাকামো করা লাগবেনা এবার বল সব
মিলে কেমন আছ? বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
হ্যাঁ, ভাল আছি বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
আজ অনেক সকাল সকাল অফিসে চলে আসছি
বলেইতো এই অসময়ে এসে আমাকে পেলে
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
আমি খোঁজ নিয়েই আসছি।তোমার নাম্বারে ফোন
দিয়েছি রিসিভ করল ভাবি। বলছেন সেতো
ঘন্টাখানেক আগেই বেরিয়ে গেছে। ভাবছি আর
কোথায় যাবে? তাই কনফার্ম হলাম অফিসেই
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
এবার বল কি খাবে? আমি এইমাত্র নাস্তা খেয়েছি
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
কেন অফিসে এসে নাস্তা খেতে হবে কেন?
ভাবির সাথে সম্পর্কের অবনতি চলছে নাকি? হাহাহা,
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
নারে বয়স যত বাড়ে সম্পর্ক তত বাড়ে।
মেয়েটাকে জরুরী লন্ডন পাঠাতে হয়েছে।
সকাল ৮টায় ফ্লাইট ছিল।এয়ারপোর্টে দিয়ে আর
বাসায় যাইনি তাই অফিসে নাস্তা সারলাম বললেন
ড.ম্যাডিসন আলভা।
কেন? মেয়েকে লন্ডন পাঠালি কেন? লেখাপড়া
করতে নাকি? বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
ছোট বোন সালভিয়া আলভা খুব অসুস্থ্য।তাকে সংগ
দিতেই মূলত পাঠালাম।বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
তাই নাকি? সালভিয়ার কি প্রবলেম? জানতে চাইলেন
ড.আইজ্যাক ইভান।
সে সন্তান সম্ভবা বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
ও আচ্ছা বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
ও এখনো বললেনাতো কি খাবে?বললেন
ড.ম্যাডিসন আলভা।
শুধু কপিই যথেষ্ট বলেলন ড.আইজ্যাক ইভান।
আবার কথা বলছেন ড.আইজ্যাক ইভান, শুনছি নাকি
তোমার মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম মেয়েদের
হিজাব বিরুধী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে
উস্কে দিয়েছে এববং নিজেই নাকি আন্দোলনে
সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করছে?
আরে বয়স কমতো, এখনো সব কিছু বুঝে উঠার
বয়স হয়নি, এই মারপ্যাঁচ বুঝে উঠতে পারেনি
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
তা ঠিক, তবে আমরা আমাদের সন্তানদের আমাদের
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বুঝাতে অক্ষম হচ্ছিনাতো?
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
ঠিক বলছিস, আমরা আমাদের প্রজন্মদের ওইভাবে
মোটিভেশন করছিনা বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
দেখবি, ইয়াহুদিরা তাদের সন্তানদের বংশ পরস্পরায়
মুসলিম বিদ্ধেষী করে গড়ে তুলতে কখনো
মুসলিম ছেলে মেয়েদের সাথে মিশতে দেয়না
তারাও মিশেনা।এতে করে বরাবরই বিদ্ধেষভাবাপন্ন
মানসিকতার জন্ম নেয় এবং আজন্ম শত্রু ভাবতে
শিখে....... বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
হুম, ঠিক বলছ বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
আসলে আমাদের আরো বেশি কট্রর হতেই
হবে আর এটাই সময়ের দাবি বটে।ইদানিং দেখছি
আমাদের ছেলে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি উঠা
বসা করছে মুসলিম ছেলে মেয়েদের সাথে।
মনে রাখবি এটা একটা অশনি সংকেত। এখান থেকে
আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, বললেন
ড.আইজ্যাক ইভান।
রাইট, তুমি বিষয়টাকে যত গভির থেকে মূল্যায়ন
করেছ আমরা সেভাবে ভাবিনি বললেন ড.ম্যাডিসন
আলভা।
ভাবতে হবে, সামনের দিন আমাদের অনেক বড়
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বললেন
ড.আইজ্যাক ইভান।
হুম, আসলে আমরা জাতি স্বত্তা নিয়ে যত উদাসিন
হয়ে গেলাম তা আদৌ উচিৎনা বললেন ড.ম্যাডিসন
আলভা।
দেখ, আমরা যদি উদাসিন না হতাম কি করে সন্তান
মায়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুসলিম ছেলে
মেয়েদের উস্কে দিতে পারে? থাকতে পারে
হাজারো বন্ধুত্বের সম্পর্ক বললেন ড.আইজ্যাক
ইভান।
হুম,এই জন্য কৌশল করে বোনের অসুস্থ্যতা
সাজিয়ে তাকে লন্ডন পাঠানো হয়েছে বললেন
ড.ম্যাডিসন আলভা।
হুম,আমি শুরতেই বুঝছি।আসলে এই ছাড়া উপায়ও কি
ছিল? বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
ফোন বেজে উঠল ড.ম্যাডিসন আলভার।ফোন
করছে তার ছোটবোন সালভিয়া আলভা।
কেমন আছ? সবাই ভাল আছেতো বললেন
ড.ম্যাডিসন আলভা।
জ্বি ভাইয়া ভাল আছি।আলভার জন্য এয়ারপোর্ট চলে
আসছি বললেন সালভিয়া আলভা।
অ তাই? সে পৌছবে বিকাল ৩টায় বললেন ড.ম্যাডিসন
আলভা।
একটু আগেই চলে আসছি বললেন সালভিয়া আলভা।
এই শোন,তোমাকেতো বলতে ভুলে গেছি,
অলিভিয়া আলভাকে তোমার অসুস্থ্যতা বলেই
পাঠানো হয়েছে।একটা প্রবলেম হয়েছে আমি
তোমাকে পরে সব খুলে বলব। তাকে
কমপক্ষে একমাস তোমার কাছে থাকতে হবে
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
জ্বি ভাইয়া কোন প্রবলেম হবেনা,আমি সব দেখব
বললেন সালভিয়া আলভা।
ওকে ভাল থেকো।আর সে পৌছলে আমাকে
কল দিও বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
আপনি কোন টেনশন নিবেননা। আমি সব দেখব
বলল সালভিয়া আলভা।
ওকে বাই।
আবার দু বন্ধুর কথা চলছে।
আসলে ওদের ইয়ারে ফাতিমা নামের একটা মেয়ে
আছে তার সাথে অলিভিয়ার সবচেয়ে বেশি
সম্পর্ক।তার করণে অলিভিয়া এই কাঁচা কাজটি করে
বসে বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
ঠিক আছে, তবে আমাদের আরো চৌকষ হতে
হবে বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
হুম,তাই। তবে আমরা যা করছি আর তাতে প্রবলেম
হওয়ার কথানা বললেন ড.ম্যাডি
সন আলভা।
হ্যাঁ,তুমি বুদ্ধিমানের কাজটাই করেছ তাকে পাঠিয়ে
দিয়ে নাহয় আমাদের নাকে মুখে চুন কালি লাগত
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
এই শোন,আমার ছেলেতো বার্মিংহাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করছে।ভাবছি তোমার
মেয়েতো বড় হল....................আমতা আমতা
করে কথাগুলো বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
কই এই খবর আগে বললিনাতো,আগে মিষ্টি খাওয়া
তারপর বাকি কথা।ছেলে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় জয়েন
করল আর আমরা শুলামওনা,ব্যাপারটা কিভাবে নিই?
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
আরে মিষ্টি যথা সময়ে বাসায় পৌছে যাবে বললেন
ড আইজ্যাক ইভান।
ও,তুমি একগুলিতে দু শিকার করতে চাচ্ছ তাইনা? হাসতে
হাসতে বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
ছেলে তিন মাসের ছুটিতে দেশে আসছে আগামি
মাসে তুমি ভেবে দেখ আর বিষয়টা তুমিই চিন্তা কর
আমি ভাবছি আমাদের দুজনের বন্ধুত্বটা পারিবারিক
বন্ধনে রুপ নিক বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
ঠিক আছে,আমি তোমাকে জানাব,তবে সেতো
মাত্র চতুর্থ বর্ষ পড়ছে।লেখাপড়া ঢের বাকি
বললেন ড.ম্যাডিসন আলভা।
এটা কোন প্রবলেমনা,সে বিয়ের পর যত ইচ্ছে
পড়বে।প্রয়োজনে বাহিরে গিয়ে পড়বে
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
জ্বি,আমি তোমাকে জানাব বললেন ড.ম্যাডিসন
আলভা।
ওকে,একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলাম
বললেন ড.আইজ্যাক ইভান।
আবার কথা বলে উঠলেন ড.আইজ্যাক ইভান,ঠিক
আছে তাহলে এখন উঠি।পরে কথা হবে বলে
দাঁড়ালেন ড.আইজ্যাক ইভান।
চল, আমিও বেরিয়ে যাব বলে দু বন্ধু হাত ধরে
অফিস কমপাউন্ড এরিয়া পার হয়ে গাড়ি পার্কিং এ এসে
দুজন দুজনকে বিদায় জানালেন।
(চলবে)