হেমন্তের দিনগুলো
উম্মে হাবিবা রাহনুমা
.দুর্বাঘাসে জমা হওয়া শিশিরে পা চুবিয়ে কেটে যেতো শৈশবের হেমন্ত।
শরতের শেষের দিকে চাষীরা ধানের কচি চারায় ভরিয়ে রাখতো ক্ষেতের পর ক্ষেত। ঘন সবুজে মনে হতো খালি মাঠে বুঝি কেউ সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে।শরৎ শেষ হতে হতে ধানক্ষেতের সবুজ শিশুরা দুলতে দুলতে এগিয়ে যেতো পূর্ণ যৌবনের দিকে। মাঝে তাদের কৈশর। সেই কিশোরী ধানগাছগুলো প্রতিটি পাতার মাথায় কী সুন্দর শিশির নিয়ে বাতাসে দোল খেতো! প্রতি দুলনিতে শিশির বিন্দু গড়িয়ে পড়তো কিশোরীর গা বেয়ে,যেন নববধুর ঘোমটা দুলে পড়ছে মাথা থেকে।
অবাক হয়ে যেতাম যখন দেখতাম ধানক্ষেতে চিকচিক করে জ্বলতো লক্ষ সূর্য। পুরো ধানক্ষেতটাই যেনো আলোয় সজ্জিত।
খুব ভোরে ফজর পড়েই উঠোন-কোণের লেবুগাছ তলায় ছুটে যেতাম আগে আগে।
লেবুগাছের ৪/৫ দিন বয়সী কচিপাতায় জমা হওয়া শিশির নিয়ে লিপস্টিকের ন্যায় ঠোঁটে
লাগাতাম,সারামুখে মাখতাম। কচিলেবুর ঘ্রাণে শিশিরগুলো যেন নেশা ধরাতো।
তারপর ঘরে এসে শিশিরমাখা ঠোঁটে কুরান তেলাওয়াতে অন্তরটা এতো শীতল হয়ে যেতো!
প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ার কারণে আম্মাও রোজ এমন করতেন।
তারপর ঘরে এসে শিশিরমাখা ঠোঁটে কুরান তেলাওয়াতে অন্তরটা এতো শীতল হয়ে যেতো!
প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ার কারণে আম্মাও রোজ এমন করতেন।
তেলাওয়াত শেষে পুকুরঘাটে গিয়ে পুকুরের জলে মাছ সাঁতরানোর দৃশ্য
দেখতাম। কখনোবা প্রতিযোগীতা করতাম কে কার আগে জোরে গাছ নাড়িয়ে আরেকজনের গায়ে
শিশির-ফোটা ফেলতে পারবো। যার গায়ে জল পড়তো সে আম্মার কাছে অভিযোগ করতাম।কিন্তু
কাজের কাজ কিচ্ছু হতোনা,আবার ভাইবোন যেই সেই।
.
সকালের কাজ সেরে যখন মাদরাসায় ছুটতাম,তখন ইচ্ছে করেই ধানক্ষেতের আল দিয়ে দৌড়াতাম। ড্রেস ভিজত,ভিজে যেতো দুই পা,আর ধানগাছ ছুঁয়ে ভিজত দু'হাত।
পায়ে রাজ্যের ময়লা নিয়েও সে কি উচ্ছ্বাস আমাদের!
.
দুপুর থেকে দেখা যেতো ঝকঝকে মিঠা রোদ।
শীতের আঁচ থেকে বাঁচার জন্য পুকুরের যেখানে সবচেয়ে বেশী রোদ থাকতো সেখানে ২/৩ টা গাছ দিয়ে ঘাট বানাতাম।
বিকেলের রোদে আবার ছুটোছুটি,হৈ-হুল্লোড়।
.
ছোট্ট কাজিনের খেলার সাথী নেই বলে প্রায়ই মামার বাড়ী চলে যেতাম। ওখানকার বিস্তৃত মাঠ-ঘাট,খাল-বিল হয়ে উঠেছিল আমাদের চারণভূমি।
সকালে সূর্যোদয় আর সন্ধ্যায় পাখির নীড়ে ফেরা দেখতে ছুটে যেতাম মাঠের কাছে,বিলের কাছে। রাতের জোছনায় উঠোনে পাটি বিছিয়ে নানীর কাছে কত্তরকম গল্প শুনতাম!পান চিবুতে চিবুতে নানী শোনাতো যুদ্ধের কথা,দেশের কথা,গ্রামীন ঐতিহ্যের কথা।
নানীর পানের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে যেতাম।গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দূরের দলবাঁধা কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দ শুনতে পেতাম। মাথার উপরে আমের বড়ো ডালটাতে বসে থাকা কাকাতুয়া লেজ নেড়ে উড়ে যেতো অপর ডালে,একটা কাঠবিড়ালী কুটুস-কাটুস ডাকতে ডাকতে ডুমুরগাছে ছুটে যেতো।পাশের ঝোঁপ থেকে আচমকা দৌঁড়ে পালাতো একটা শেয়াল,তারপর দূরের পাটিবনে গিয়ে ৪/৫ টা শেয়াল মিলে হুক্কা-হুয়া রবে চিৎকার জুড়ে দিতো। ততক্ষণে নানী একটা পান শেষ করে আরেকটা পানে চুন লাগাত জোছনার আলোয়।
একসময় পুকুরের দিক থেকে একটা শীতল হাওয়ায় দুলে উঠতো পেয়ারাগাছ।ঘুমিয়ে পড়তো ছোট্ট কাজিনটা। ঘন কুয়াশার আবরণ পড়তো নানীর চশমায়।গল্প শেষ হত। একটা বাদুড় ডানা ঝাপটিয়ে হারিয়ে যেতো দূরে কোথাও। ততক্ষণে দুয়ার এঁটে গভীর ঘুমে হারিয়ে যেতাম আমি ও। . . . .
.
সকালের কাজ সেরে যখন মাদরাসায় ছুটতাম,তখন ইচ্ছে করেই ধানক্ষেতের আল দিয়ে দৌড়াতাম। ড্রেস ভিজত,ভিজে যেতো দুই পা,আর ধানগাছ ছুঁয়ে ভিজত দু'হাত।
পায়ে রাজ্যের ময়লা নিয়েও সে কি উচ্ছ্বাস আমাদের!
.
দুপুর থেকে দেখা যেতো ঝকঝকে মিঠা রোদ।
শীতের আঁচ থেকে বাঁচার জন্য পুকুরের যেখানে সবচেয়ে বেশী রোদ থাকতো সেখানে ২/৩ টা গাছ দিয়ে ঘাট বানাতাম।
বিকেলের রোদে আবার ছুটোছুটি,হৈ-হুল্লোড়।
.
ছোট্ট কাজিনের খেলার সাথী নেই বলে প্রায়ই মামার বাড়ী চলে যেতাম। ওখানকার বিস্তৃত মাঠ-ঘাট,খাল-বিল হয়ে উঠেছিল আমাদের চারণভূমি।
সকালে সূর্যোদয় আর সন্ধ্যায় পাখির নীড়ে ফেরা দেখতে ছুটে যেতাম মাঠের কাছে,বিলের কাছে। রাতের জোছনায় উঠোনে পাটি বিছিয়ে নানীর কাছে কত্তরকম গল্প শুনতাম!পান চিবুতে চিবুতে নানী শোনাতো যুদ্ধের কথা,দেশের কথা,গ্রামীন ঐতিহ্যের কথা।
নানীর পানের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে যেতাম।গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দূরের দলবাঁধা কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দ শুনতে পেতাম। মাথার উপরে আমের বড়ো ডালটাতে বসে থাকা কাকাতুয়া লেজ নেড়ে উড়ে যেতো অপর ডালে,একটা কাঠবিড়ালী কুটুস-কাটুস ডাকতে ডাকতে ডুমুরগাছে ছুটে যেতো।পাশের ঝোঁপ থেকে আচমকা দৌঁড়ে পালাতো একটা শেয়াল,তারপর দূরের পাটিবনে গিয়ে ৪/৫ টা শেয়াল মিলে হুক্কা-হুয়া রবে চিৎকার জুড়ে দিতো। ততক্ষণে নানী একটা পান শেষ করে আরেকটা পানে চুন লাগাত জোছনার আলোয়।
একসময় পুকুরের দিক থেকে একটা শীতল হাওয়ায় দুলে উঠতো পেয়ারাগাছ।ঘুমিয়ে পড়তো ছোট্ট কাজিনটা। ঘন কুয়াশার আবরণ পড়তো নানীর চশমায়।গল্প শেষ হত। একটা বাদুড় ডানা ঝাপটিয়ে হারিয়ে যেতো দূরে কোথাও। ততক্ষণে দুয়ার এঁটে গভীর ঘুমে হারিয়ে যেতাম আমি ও। . . . .