দীর্ঘ পথ. ...

মোনোয়ার হোসেন

----------------
মনটা ভাল নেই ।
ভংগুর ।
অাজ কেন যেন এলোমেলো ভাবে দূর্বিসহ অতীতের কথা খুব মনে পড়ছে অামার । মনে পড়ছে বাবার মায়াবী মুখখানির কথা ।
সব কিছু এলোমেলো ভাবে মনে পড়ায় বিষণ্ণ হয়ে পরছি অামি ।
বিষণ্ণ মনে তাকিয়ে থাকি খোলা অাকাশে দিকে । দেখি , মনের সুখে বৃত্তের মত মালা করে উড়ে চলা এক ঝাঁক পাখির দিকে । অাহ ! কী স্বাধীন এবং ভাল মন নিয়ে উড়ে চলছে পাখিরা !
পিঠে কারো নরম হাতের মৃদু ছোঁয়ায় চমকায় অামি । ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকাই ।
দেখি ,খুকী ।
অামার অাদুরী খুকী ।
খুকীকে দেখে জোর করে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে তুলার চেষ্টা করি । কিন্তু বৃথা । অামার বিষন্ন মুখটা অনায়াসেই ধরা পড়ে যায় খুকীর কাছে ।
কী ভাবছিলে ভাইয়া !
অামি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। কই, কিছু না ।
খুকীর চোখ টলমল করে উঠে । অামায় মিথ্যা বলছো, ভাইয়া ?
এই পৃথিবীতে একটি মাত্র মানুষের চোখের পানি অামাকে এলোমেলো করে দেই । তার চোখের পানি অামি সহ্য করতে পারিনা কিছুতেই । তার চোখের পানি পড়ার অাগেই অামার চোখের পানি পড়ে যায় । তার মন খারাপ হলে অামার মন খারাপ হয়ে যায় অারো দ্বি-গুন । সে অামার উপর অভিমান করলে পৃথিবীটাই অামার কাছে বৃথা মনে হয় । প্রচন্ড ভালবাসি অামি তাকে । অামার অাদুরী খুকীটাকে । তাকে মিস করি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের বাঁকে বাঁকে । একদিন কথা না বললে সে রাতে ঘুম হয়না অামার ,
ছটপট করি যবাই করা গরুর মত ।
সে রাতের দীর্ঘটা অামার কাছে অনেক বড় হয়ে যায় । মনে হয় ৫০ হাজার বছরের রাত একত্রে করা হয়েছে ।
সে রাতের যেন সকাল হয়না কিছুতেই ।
অামি অালতো করে খুকীর হাত ধরি । কাছে এনে বসায় । স্নেহের নরম হাতে ওর চোখের পানি মুছে দেই । বলি, খুকী , কেঁদো কেন পাগলি ?
গাল ফুলিয়ে খুকী বলে, অামার ভাল লাগেনা ভাইয়া ! তুমি মন খারাপ করে থাকলে অামার ভাল লাগে না । একটুও না ।
অামি অার কোন দিন মন খারাপ করবো না । তবে. .....।
তবে কী ভাইয়া ? ঝট করে অামার মুখের দিকে মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল খুকী ।
তবে তুমি যদি অামার একটি কথা রাখতে পার ।
পারব ভাইয়া, অামি পারব । তোমার মন ভাল রাখার জন্য অামি সব করতে পারব ।বলো তুমি ।
অামি খুকীকে অালগা করে দিই । একটু সামনে গিয়ে এলোমেলো ভাবে অাবার অাকাশের দিকে তাকাই । উদাস দৃষ্টিতে । উদাস দৃষ্টিতেই অাকাশের দিকে তাকিয়ে বলি, জানো তো খুকী ,অামার খুব ইচ্ছে ছিল অামি বড় হয়ে একজন ভাল ডাক্তার হব । অসহায়, হতভাগা, ছন্নছড়া মানুষগুলির সেবা করব । কিন্তু হতে পারিনি। মেধা অার অর্থের অভাবের কারণে হতে পারিনি । মনের কোণে লুকিয়ে রাখা এই ইচ্ছেটা অামার মনে অারো প্রবল ভাবে দেখা দিলো যখন অামার বাবা ক্যান্সারে মারা গেলেন , তখন । জানো , বাবার মৃত্যুর অাগের অসহায় মুখটি অামার চোখে এখনো ভেসে উঠে । সেই মুখ মনে ভেসে উঠতেই অামি এলোমেলো হয়ে যায় । ডুকরে কেঁদে উঠি । অামি চাই পৃথিবীতে অার কোন বাবার যেন এই অকাল মৃত্যু অার না ঘটে ।
অামি চাই , তুমি বড় হয়ে ডাক্তার হও ! অনেক বড় ডাক্তার !!
প্রতি সপ্তাহে অামাদের গ্রামে যাবে । গ্রামে গিয়ে অসহায় , গরীব ,ছন্নছড়া মানুষগুলির ফ্রী চিকিৎসা করাবে ।
পারবে ভাইয়ের এ কথাটি রাখতে ? পারবে ??
অাবেগ অাপ্লুত হয়ে পরে খুকী । অসহায় কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয় চোখে চোখ রাখে অামার চোখে ।
দৃঢ় মনোবল নিয়ে বলিষ্ঠ কন্ঠে বলে , ভাইয়া , অামি পারবো ! অামাকে যে পারতেই হবে ।
শুধু তোমার জন্য পারতে হবে । তুমি যে অামার অাদরের ভাইয়া !
অামি বুকে জরিয়ে ধরি অামার প্রিয় অাদুরী খুকীটাকে । বুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি । অামি জানতাম খুকী , অামি জানতাম , তুমি অামার কথা রাখবে । তুমি যে অামার বড্ড অাদুরী বোন ।
অাগে পড়তে বসতে ইচ্ছে করছিল না খুকীর । এখন ভাইয়ার স্বপ্নপূরণ করতে যেয়ে সারাদিন বইয়ের কাছে বুথ হয়ে পড়ে থাকে সে ।
পড়া এখন অার বিরক্ত লাগে না তার কাছে । ভালো লাগে । কারণ, তাকে যে যেতে হবে সামনে অারো দীর্ঘ পথ. ...।
 
Top