(অনেক বড় লিখা।কারো পড়ার ধৈর্য্য হবে কিনা জানিনা)
বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের শততম পর্ব ও কিছু স্মৃতি:
উম্মুল খাইর ফাতিমা
বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ যেন নবীন-প্রবীণ লেখকদের সমণ্বয়ে গঠিত মননশীল,সুস্থধারার ও ক্ষুরধার লেখনী ও লেখক সৃষ্টির একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম।শ্রদ্ধেয় প্রাণপ্রিয় বড়ভাই আলানূর ভাইয়ার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ যেন হাজারো তরুণের স্বপ্নপূরণের নতুন ঠিকানা।বিজাতীয় বিকারগ্রস্থ কৃষ্টি-কালচার ও নোংরা সাহিত্য যখন বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে ঘোর তমসার সৃষ্টি করছিল ঠিক তখনই কিছু স্বপ্নচারী তরুণকে নিয়ে প্রিয় আলানূর ভাইয়া"বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ"গঠন করে বাংলাদেশে সুস্থ সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন।ফেসবুক এবং ফেসবুকের বাইরে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন নতুন লেখক সৃষ্টি করে কিংবা হারিয়ে যাওয়া লেখকদের পুনরুজ্জীবিত করে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন।ভাইয়ার একক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত গ্রুপে আজ হাজারো কর্মী যারা সুস্থ সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণের প্রয়াস চালাচ্ছে।"বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ" শূণ্য থেকে শুরু করে আজ শততম পর্ব আয়োজনের গৌরবে আমি আনন্দিত, আপ্লুত ও অভিভূত।ক্ষুরধার লেখক ও লেখনী সৃষ্টিতে এই গ্রুপের অবদান অনস্বীকার্য।আমার মত কত শত হারিয়ে যাওয়াদের পুনরুজ্জীবিত করে আবারও সাহিত্য জগতে ফিরিয়ে এনেছে এই গ্রুপ।এই শততম পর্বে আমার কিছু অব্যক্ত স্মৃতি সবার সাথে শেয়ার না করে পারছি না।ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল।সারাদিন বাহিরে দুরন্তপনায় কাটিয়ে বাড়ি ফেরার পর রাতের বেলা বাংলা বইয়ের নিচে রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে কিশোর কন্ঠ পড়তাম।2006 সালের অক্টোবরের পর থেকে হঠাৎ করেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে।তখন আমার পেপার পড়ার প্রতি এত বেশি ঝোঁক ছিল যে, দৈনিক তিন-চার ঘন্টা পেপার পড়তাম।সময়টা 2007সাল।তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি।হঠাৎ একদিন নয়া দিগন্তের "দিগন্ত সাহিত্য" বিভাগে কবি আল মাহমুদের ধারাবাহিক উফন্যাস "মোহিনীর জীবন ঝংকার" পড়ে নয়া দিগন্তের প্রতি অতি আগ্রহী হয়ে পড়ি।আমার আগ্রহ দেখে আব্বাজান ও প্রতিদিন নয়া দিগন্ত নিয়ে আসতেন।নয়া দিগন্তের বিভিন্ন সাহিত্য বিভাগ যেমন নিত্যদিন, দিগন্ত সাহিত্য, ইসদামী দিগন্ত, আগড়ুম-বাগড়ুম ও প্রিয়জন বিভাগের লেখাগুলো নিয়মিত পড়ে এবং নয়া দিগন্তে প্রকাশিত কবি আল মাহমুদের ধারাবাহিক জীবনী পড়ে আমার ও লেখালেখির শখ জাগে।এরপর আমিও ধীরে ধীরে লেখা শুরু করি।যদিও তখন ছন্দ জ্ঞান মোটেও ছিল না।কবিতার চেয়েও গল্প বেশি লিখতাম এবং অধিকাংশ গল্প ছিল ছেলেধরা বিষয়ক।পাঁচ দিস্তার একটা খাতা সেলাই করেছিলাম শুধুমাত্র গল্প লিখার জন্য।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে দারুণ একটা প্রবন্ধও লিখেছিলাম।কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমার লেখাগুলো সব উই পোঁকা নষ্ট করে ফেলেছে।লিখার প্রতি আমার আগ্রহ এবং আমার লেখাগুলো ও আঁকা ছবি গুলো দেখে মেজভাইজান আমাকে লেখাগুলো পত্রিকায় পাঠানোর পরামর্শ দিলেন।সাহস সঞ্চয় করে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার পাতাবাহার বিভাগে সদস্য ফরম পূরণ করে পাঠালাম।পরবর্তী সংখ্যায় যখন সদস্য হিসেবে(সদস্য নং 2007261)আমার নাম ছাপানো হলো তখন আমার সে কী আনন্দ!আনন্দ- উচ্ছ্বাসে সবাইকে পত্রিকাটা দেখাচ্ছিলাম।অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে আব্বাজান আমাকে পত্রিকায় পাঠানোর জন্য অনুপ্রাণিত করলেন।এরপর থেকে বেশ কিছুদিন সোনার বাংলায় আমার আঁকা ছবি, ছড়া ও কৌতুক পাঠাতাম।প্রথমবার যখন পাঠালাম তখন ছবি এবং কৌতুক ছাপানো হলেও ছড়া ছাপানো হয়নি এবং না ছাপানোর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল ছড়ায় #'মাত্রা' ঠিক নেই।আমি তখন ছড়ার মাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলাম না বিধায় ছড়ার মাত্রা না বুঝে বর্ণের মাত্রা বুঝেছিলাম।তাই ভেবেছিলাম,আমি হয়ত হাতে লিখেছিলাম বলেই বর্ণের উপর মাত্রা ঠিকভাবে দেয়া হয়নি।ওরা মাত্রাগুলো ঠিক করে দিয়ে ছাপাতে পারলো না কেন?এরপর বেশ কিছু গল্প-কবিতা লিখেছিলাম যা স্থানীয় দৈনিক হিমছড়ি,কক্সবাজার বাণী সহ কয়েকটা ম্যাগাজিনে ছাপানো হয়।কিন্তু আমার দাখিল পরীক্ষা ঘনিয়ে আসার পর 2009সালের সেপ্টেম্বর থেকে আম্মু আমাকে পাঠ্যবই ব্যতীত সকল প্রকার বই এবং পত্রিকা পাঠের ব্যাপারে 144ধারা জারী করলেন।(তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে নসীম হিজাযীর শেষ প্রান্তর পড়েছিলাম)সেই থেকে প্রায় 2014সাল পর্যন্ত সাহিত্য জগত থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নই ছিলাম।পড়ালেখার চাপে বই পড়ার কিংবা সাহিত্য চর্চার সুযোগ হয়নি বললেই চলে।এরপর 2014সালের এপ্রিলে ফেসবুক আইডি খুলি এবং হাবিবার সাথে এড হয়(যদিও ওর সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল)।হঠাৎ একদিন সম্ভবত হাবিবার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করার পর শ্রদ্ধেয় বড়ভাই আলানূর ভাইয়া আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান এবং আমাকে Pen&poem in the field of war এ এড করেন।ফেসবুকে আসার পর আলানূর ভাইয়ার সাথেই আমার প্রথম পরিচয় হয়।ভাইয়া আমাকে গ্রুপে লিখতে উৎসাহিত করতেন কিন্তু আমার মোবাইলে নেট খুবই স্লো ছিল এবং দুই লাইনের বেশি পোস্ট করা যেত না বিধায় ইচ্ছে থাকলেও গ্রুপে লিখতে পারিনি।
তাছাড়া অনেকদিন যাবত সাহিত্য থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন ছিলাম বিধায় কোনো কিছু লিখার সাহস পাচ্ছিলাম না।পরবর্তীতে একটি পর্বে ভাইয়া আমাকে অনেকটা জোর করেই লিখা দিতে বাধ্য করলেন।মোবাইলের সমস্যার কথা জানালে অন্যের মতবাইল থেকে হলেও পোস্ট দেয়ার জন্য বললেন।তখন সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে আমি ছোট্ট একটা পোস্ট দিয়েছিলাম।ঐদিন আলানূর ভাইয়া এবং প্রিয় ছোটবোন হাবিবাসহ আরো অনেকে আমাকে অনেক অনেক উৎসাহিত করেছিলেন।তখন থেকে আমার লেখার ভীতি কিছুটা কমে গিয়েছিলো এবং মনে হচ্ছিলো যেন আমি আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছি।এরপর থেকে পরীক্ষার কারণে প্রতিটা পর্বে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও বেশ কিছু পর্বে অংশগ্রহণ করেছি।ছন্দ মাত্রা কিছুই বুঝতাম না বিধায় ছড়া লিখার পর আলানূর ভাইয়াকে দেখাতাম।উনি সংশোধন করে দিয়ে কিভাবে আরো সুন্দর করে লিখা যায় সেই পরামর্শ দিতেন।হামিদ হোছাইন মাহাদী ভাইয়া এবং উম্মে হাবিবাকেও দেখাতাম।উনারাও আমার লিখা সংশোধন করে দিয়ে গ্রুপে পোস্ট করার উপযোগী করে দিতেন।সত্যি বলতে কী, গ্রুপে প্রথম যেই ছড়াটা পোস্ট করেছিলাম তা সাহিত্য জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ছয় বছর পরে আলানূর ভাইয়ার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েই লিখেছিলাম।এতবছর পর আবার লিখতে পেরে কতটা অভিভূত হয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।আমি যখন হতাশ হয়ে বলতাম, "ভাইয়া, আমি লিখতে পারবো না, আমার দ্বারা লেখালেখি হবেনা" তখন ভাইয়া আমাকে অনেক বেশি মোটিভেট করতেন।ভাইয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টার কারণেই আমি আবারও সাহিত্য জগতে ফিরে এসেছি।ভাইয়ার পাঠানো বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের দুই দুইটি কাব্য সংকলন এবং শ্রদ্ধেয় আব্দুস সামাদ নানু ভাইয়ার "প্রত্যাশা" পড়ার পর সাহিত্যিক হওয়ার সুপ্ত বাসনা আবারও মনোজগতে উঁকি দিতে থাকে।তাই আলানূর ভাইয়া এবং মাহাদী ভাইয়ার সহযোগীতায় ছন্দ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।আলানূর ভাইয়ার পরামর্শে গ্রুপের বিভিন্ন ফাইল পড়ে ছন্দ সম্পর্কে জানতে পারি।গ্রুপের মাধ্যমেই পরিচিত হয়েছি অনেক নবীন-প্রবীণ লেখক ভাইয়া-আপুদের সাথে।যারা প্রত্যেকেই গ্রুপ এবং পরিষদের অগ্রযাত্রায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।আমি খুব কম লিখি কিন্তু যেটুকু লিখি আমার এই প্রাণ প্রিয় গ্রুপের কারণেই লিখি।আমার প্রাণের এই গ্রুপে আজ সাহিত্য আসরের শততম পর্বের আয়োজন।শূণ্য থেকে শুরু হয়ে শততম পর্ব আয়োজনের গৌরবময় এই উৎসবে শামিল হতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে হচ্ছে।আমি বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি এবং নতুন নতুন মান সম্পন্ন লেখক সৃষ্টির মাধ্যমে এই গ্রুপ যেন বাংলা সাহিত্যে অসমান্য অবদান রাখতে পারে মহান আল্লাহর দরবারে সেই ফরিয়াদ করছি এবং সবার কাছে আমার জন্য দোয়ার প্রার্থনা করছি।
উম্মুল খাইর ফাতিমা
রুমালিয়ার ছড়া, কক্সবাজার
ও
শিক্ষার্থী
ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।