লেখক পরিচিতি

লেখক পরিচিতিঃ 

.
প্রিয় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] সুস্থধারার নবীনলেখকদের প্লাটফর্ম । রকমারি আয়োজনের মাধ্যমে নবীনলেখকদের প্রতিভাবিকাশ এবং তাদের লেখার মান বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] । এরই ধারাবাহিকতায় সাপ্তাহিক এবং মাসিক বিজয়ীদের নিয়ে পরিষদ আয়োজন করেছে লেখক পরিচিতি। এইক্ষেত্রে যেমন একজন নবীনলেখক সম্পর্কে জানতে পারবো। তেমনই লেখকদের উৎসাহিতও করা যাবে। আমাদের আজকের লেখক পরিচিতিতে থাকছেন তরুণকবি আনিস আরমান।
.
আনিস আরমান। ১৯৯২ সালের ১৩ ই মার্চ সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত শ্যামনগর থানার শিরিফলকাটি নামক গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মাওলানা হাবিবুর রহমান। দীর্ঘদিন তিনি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকতা করার পর বর্তমানে নিজ বাড়িতে মসজিদের খতীব ও ইমাম হিসেবে নিযুক্ত আছেন । মা করিমুন্নেছা বেগম।একজন গৃহিণী।
এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। মায়ের হাত দিয়েই শুরু হয় লেখাপড়ার হাতেখড়ি। আর স্কুলে পড়াকালীন সময় দ্বিতীয়শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই আনিস আরমান লিখেছেন,
“ছোট্ট একটি প্রাণী
নাম তার মশা,
তার জ্বালায় একটুখানি
যায় না কোথাও বসা”।
.
লেখালেখির শুরুতেই আনিস আরমান তার ফুফাতো ভাই কবি জিসান মেহবুবের সহচর্য পান। তিনি মাঝে মাঝে রাত্রিবেলা কবি জিসান মেহবুবের কাছে থাকতেন। কবির রাত জেগে লেখালেখি দেখে আনিস আরমানের লেখালেখির প্রতি একটা টান তৈরি হয়।
তরুণকবি আনিস আরমান একজন হাফেজে কুরআন। বর্তমানে তিনি কওমি মাদ্রাসাতে মেশকাত জামাতে অধ্যয়নরত আছেন।
.
স্কুল পড়া অবস্থায়ই মাসিক কিশোরকণ্ঠ, শিশু কিশোর দীনদুনিয়া, বাবার টেবিলে রাখা মাসিক মদিনা, রাহমানি পয়গাম, আদর্শ নারী পড়ার তুমুল আগ্রহ শুরু হয়। অপেক্ষায় থাকতেন, কবে মাস শেষ হবে আর নতুন নতুন পত্রিকাগুলো ঘরে এসে হাজির হবে! কিশোরকণ্ঠ, দীনদুনিয়া এগুলো কবির ভাই সংগ্রহ করতেন।
লেখালেখির প্রতি এত আগ্রহের ব্যপারে কয়েকটি সাহিত্যিকপরিবারের নাম উল্লেখ করতে হয়, তাঁরা হলেন, কবি জিসান মেহবুব, গল্পকার মনির মুকুল, কবি ও সঙ্গীতশিল্পী মীম নূরে আলম সিদ্দিকী, গল্পকার মিলন মুস্তাফিজ, গীতিকার রুদ্র সানী, আজিজুল হক নজরুল। এরা সকলেই ছিলেন কবির সিনিয়র ভাই। যাঁরা চব্বিশ ঘণ্টা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ঘুরে বেড়াতেন। সাহিত্যআড্ডা দিতেন বিভিন্ন স্থানে। কবির বয়স তখন ছয়/সাত। তখনই এদের পিছুপিছু ঘুরে বেড়াতেন। প্রায় সময়ই ছোট বলে আনিস আরমানকে চলে যাওয়ার আদেশ করা হতো। কিন্তু, কবি নাছোড়বান্দা! ঘুরেফিরে আবারও আসতেন।
.
এপর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় তরুণ এইকবির লেখা প্রকাশ পেয়েছে। যেমন- রহমানী পয়গাম, মাসিক আন নাবা, মাসিক সাতরঙ। এছাড়াও, রঙধনু, ভেলা, ছন্দস্বর, মাসিক ভোর ইত্যাদি লিটলম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ পেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন এককবই প্রকাশিত হয়নি। তিনি ছড়া-কবিতা লিখেছেন প্রায় সহস্রাধিক। প্রেম-ভালো¬বাসামূলক গান লিখেছেন পঞ্চাশেরও উপরে। এছাড়া ছোটগল্প লিখেছেন বেশ কয়েকটা। তবে কোথাও প্রকাশ পায়নি।
.
তরুণকবি আনিস আরমান ব্যক্তিজীবনে ইসলামের হুকুমআহকাম মেনে চলার চেষ্টা করেন। অবসর সময় কাটান বই পড়ে।
তিনি ইসলাম, দ্রোহ, ভালোবাসা, মা-মাটি দেশ, প্রকৃতি, সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে বেশ ভালোবাসেন।
যেমন, তিনি লিখেছেন--
“দ্রোহ আর ভালোবাসা, মা-মাটি-দেশ,
সবনিয়ে আমরণ লিখে হবো শেষ।
হয়তো চলে আসবে বাধা জন্মিবে নবরণ,
তবু ছুটে যাবো আমি এ আমার চির পণ”।
.
তিনি একজন প্রকৃতিপ্রেমী। প্রকৃতিকে নিয়ে তিনি লিখেছেন--

“সবার মতো লিখতে চায় এ মন
আঁকতে থাকি পাহাড়, নদী, বন।
আঁকি কতো অজপাড়া গাঁও!
বাঁকানদীর মাঝে আঁকি নাও।
নদীর বুকে ভাসতে থাকে ঢেউ
হাল টেনে যায় তাতে আবার কেউ!
দিই উড়িয়ে সেই তরীতে পাল
হঠাৎ করে যায় হারিয়ে তাল”।
.
মানবতার জন্যও কাঁদে কবির মন। তাই তিনি বন্যার্তদের নিয়েও লিখেছেন--
“ডুবে গেছে খালবিল, ডোবে বাড়িঘর
ডুবে মরে শিশু-বুড়ো ডোবে নারী-নর।
পথঘাট চেনা নেই ভরে আছে জল
ঢেউয়ে ঢেউয়ে আশপাশ করে টলমল।
রাতশেষে দিন আসে নেই দানাপানি
জীবনটা নিয়ে আজ খুব টানাটানি”।
.
প্রেম-ভালবাসা, ভালোলাগা নিয়েও কবি নিয়মিত লেখেন। 'কল্পরাণীকে ' নিয়ে ধাররাবাহিকভাবে লিখছেন মনমাতানো দারুণ সব লেখা।
.
“ওহে আমার কল্পরাণী কোথায় আছিস তুই?
তোর ঠিকানা বলনা শুনি! একটু গিয়ে ছুঁই!
সারারাতই জেগে থাকি নেইযে আমার ঘুম!
আগের মতো দিস না কেন একটু এঁকে চুম?”
.
ব্যক্তিজীবনে তিনি সাধাসিধে চলাফেরা করতে ভালোবাসেন। খুঁজে ফেরেন স্রষ্টার সৃষ্টির রহস্য। মনকে কীভাবে প্রভুর তরে নিবেদন করা যায় তা নিয়ে 'হে মন' কবিতায় তিনি লিখেছেন—
.
“হেলায় খেলায় দিন কেটে যায় নেই গুণগান রবের নামে
কিসের আশায়, কিসের নেশায় আসলি রে তুই ধরাধামে?”
.
তরুণকবি আনিস আরমান বলেন, কবির কাব্য যেন দেশ ও দশের জন্য হয়, ধর্মের জন্য হয়, অসুস্থ মানবতার জন্য হয়, সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে যেন হয়।
.
কবির প্রিয় যা কিছু:
প্রিয়গ্রন্থ— আল কুরআন ৷
প্রিয়ব্যক্তি— হযরত মুহাম্মাদ সাঃ
প্রিয়রঙ— সাদা৷
শখ— আনমনে কবিতার ডানায় ঘুরে বেড়ানো।
প্রিয়লেখক— আবু তাহের মেসবাহ।
প্রিয়কবি—কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ,জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন।
প্রিয়ছড়াকার: জগলুল হায়দার, নূরুজ্জামান ফিরোজ, জিসান মেহবুব, আবিদ আল আহসান।
 
Top