লেখক পরিচিতিঃ
.প্রিয়সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] সুস্থধারার নবীনলেখকদের প্লাটফর্ম । রকমারি আয়োজনের মাধ্যমে নবীনলেখকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] । এরই ধারাবাহিকতায় সাপ্তাহিক এবং মাসিক বিজয়ীদের নিয়ে পরিষদ আয়োজন করেছে লেখক পরিচিতি। এইক্ষেত্রে যেমন একজন নবীনলেখক সম্পর্কে জানতে পারবো। তেমনই লেখকদের উৎসাহিতও করা যাবে। আমাদের আজকের লেখক পরিচিতিতে থাকছেন তরুণকবি মুজাহিদুল ইসলাম স্বাধীন।
.
মুজাহিদুল ইসলাম স্বাধীন
.
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, কিন্তু ছেলেটি এখনো বাড়ি ফেরে নি। বাবা-মা এ নিয়ে রোজই চিন্তায় পড়ে যান। দেখা যেত সন্ধ্যাবেলা ঠিকই বাড়ি এসে হাজির। জানতে চাওয়া হলে বলতেন, “ঘুরতে গিয়েছিলাম”। এরকমই শৈশব কেটেছে তরুণকবি মুজাহিদুল ইসলাম স্বাধীন’এর। রোজ বিকেলেই স্কুল ছুটি হলে চলে যেতেন ঘুরতে। আর ফিরতেন সন্ধ্যাবেলায়। তার পছন্দের জায়গাগুলোর মধ্যে পুরাতন স্থাপত্য, খোলা মাঠই প্রাধান্য পেত বেশি। মুজাহিদুল ইসলাম স্বাধীন ২২ই অক্টোবর ১৯৯৭ সালে ঝিনাইদহ জেলার হলিধানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শাজাহান মিয়া ও মাতা আলেয়া বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
.
তিনি ২০০৬ সালে হলিধানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মেধাবৃত্তিসহ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে এসোসিয়েশন বৃত্তিসহ বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ২০১২ সালে হলিধানী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০১৪ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে ঝিনাইদহ রেসিডেনসিয়াল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। বর্তমানে সরকারি কে.সি. কলেজ, ঝিনাইদহে অনার্স দ্বিতীয়বর্ষে ইংরেজি বিভাগে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি এ.জে. ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঝিনাইদহের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) হিসেবে কর্মরত আছেন।
.
পঞ্চম শ্রেণি থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। ২০১০ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাবনায় ব্রাকের ট্রেনিং-এ গিয়ে দেয়ালপত্রিকাসম্পর্কে প্রাথমিক জানাশোনা হয় এবং সেখানেই নিজের সম্পাদনায় একটি দেয়ালপত্রিকা তৈরি করেন। আর তার প্রথম লেখাপ্রকাশ হয় এতেই। এরপর থেকে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে বেশকিছু ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে রয়েছে ধ্রুবতারা, ঝিনুক, কাশফুল, রঙধনু, আত-তাহরীক, নবাঙ্গন, ছন্দস্বর ইত্যাদি। এছাড়াও একটি ইসলামি ওয়েবসাইটের জন্য তিনি বেশকিছু ইংরেজি প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ করে দিয়েছেন। ছড়া, কবিতা, গল্প, অনুবাদ, প্রবন্ধ, ইত্যাদি লিখলেও, ছড়া-তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।
.
তার রচিত প্রথম কবিতা ছিল গ্রাম নিয়ে, যা তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন রচনা করেছিলেন। কবিতাটির কয়েকলাইন এরকমঃ
"ঝিনাইদহে অবস্থিত ছোট্র একটি গ্রাম,
সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা হলিধানী নাম।
ভোর না হতেই লাঙল কাঁধে কৃষক মাঠে যায়,
পাই যে মোরা সোনার ফসল তারই প্রচেষ্টায়।"
.
ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী এইকবি সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে লিখেছেন অনেক ছড়া/কবিতা। স্রষ্টার মহিমা ফুটে উঠেছে তার লেখায়।
যেমন তার একটি ধর্মীয় ছড়াঃ
.
“ঘাসের চাঁদর, মায়ের আদর এই যে দেখা যায়,
দিয়েছেন সব, মহান সে রব অপার মহিমায়।
দূর আকাশে, চাঁদ যে হাসে সেটাও হুকুম তাঁর,
দেন ভরিয়ে, সুবাস দিয়ে ফুলের জীবন; আর-
তাঁর আদেশে, সূর্য হেসে আলোয় রাঙায় ভোর,
নির্দেশে তার, ছুঁতে পাথার নদীরা পায় জোর”।
.
দেশ ও মানবতা নিয়েও কবি অনেক লিখেছেন। তিনি মনে করেন লেখালেখির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে থাকা উচিৎ মানুষ ও মানবতার জয়গান। যেমন একটি ছড়ায় লিখেছেন-
.
"আবার,
অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করে
করতে হবে স্বাধীন এ দেশ
এখনো,
শত্রু যারা যায়নি তারা
করতে চায় এ দেশটাকে শেষ।"
.
তাঁর একটা স্বপ্ন হলো পুরো কুরআনকে এবং যতবেশি সংখ্যক সম্ভব হাদীসকে ছড়ায় লেখা। যার কাজ তিনি ইতোমধ্যেই শুরু করেছেন। প্রথমপারা শেষ করে এখন কাজ করছেন দ্বিতীয়পারা নিয়ে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে এক হাজার লাইনের একটা কবিতা লিখেছেন তিনি। যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গুরুত্বপপূর্ণ প্রায় সব ঘটনা আনার চেষ্টা করেছেন। এটির পরিসর বাড়িয়ে কবির বই আকারে প্রকাশের ইচ্ছে আছে।
.
যেমন সূরা ফাতিহাকে তিনি ছড়ায় লিখেছেন এভাবেঃ
০১.
যত তারিফ সব,
কেবল তাঁরই জন্য, যিনি
সারাবিশ্বের রব।
০২.
পরম করুণাময়
দয়াবান অতিশয়।
০৩.
বিচার দিবস বলে যেটা চিনি,
তার অধিপতি কেবলমাত্র তিনি।
০৪.
করি কেবল তোমারি ইবাদত,
তোমার কাছেই চাই আমরা নুসরত।
০৫.
দাও হে প্রভু! সরল পথের দিশা,
নেই যে পথে আধাঁর অমানিশা।
০৬.
আমাদেরকে দেখাও তাদের পথ,
যাদের তুমি দিয়েছে নিয়ামত।
০৭.
নয় তাদের পথ গযবপ্রাপ্ত যারা,
তাদের পথও নয় যারা পথহারা।
.
দুই শতাধিক হাদীসও তিনি ছড়ায় লিখেছেন। তার কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো।
.
০১/
এই কথাটা আমার নয় হাদীস থেকে নেওয়া,
"উত্তম কাজ খাওয়ানোএবং সালাম দেওয়া।"
[বুখারী হা/১২, ২৮, ৬২৩৬,মুসলিম হা/৪২, আহমাদ হা/৬৭৭৫]
.
০২/
যতদিন না প্রিয়নবীকেই সবচেয়ে প্রিয় ভাবি,
পূর্ণমু'মিন হতে পারবো না এটা হাদীসের দাবি।
[বুখারী হা/১৫,মুসলিম হা/৪৪, আহমাদ হা/১২৮১৪]
.
০৩/
আল্লাহ আর আখিরাতেযে লোক ঈমান রাখে,
যেনো ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।
[বুখারী হা/৬০১৮, মুসলিম হা/৪৭, আহমাদ হা/৭৬৩০]
.
০৪/
মহান আল্লাহ তা'লা যার কল্যাণ চান,
তাকে তিনি দ্বীন বিষয়ে করেন প্রজ্ঞা দান।
[বুখারী হা/৭১,মুসলিম হা/১০৩৭,আহমাদ হা/১৬৯১০]
.
স্কুলশিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ২০১১ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই "পড়তে হবে প্রতিদিন"। ২০১৩ সালে বইটি পুনরায় ছাপা হয়। এরপর আর কোন এককবই প্রকাশ পায়নি তার। কয়েকটি যৌথবই রয়েছে। এগুলো হচ্ছে "শত কবির কবিতা" (কাব্যগ্রন্থ); "ছড়ার দেশে রঙিন বেশে" (ছড়াগ্রন্থ); "ঘুড়ি" (কাব্যগ্রন্থ); "স্বপ্নবাজ একুশ" (কাব্যগ্রন্থ); "ছাব্বিশ ছড়ার কারিগর" (ছড়াগ্রন্থ); "আহত রক্তজবা" (গল্পগ্রন্থ) ইত্যাদি। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় পাণ্ডুলিপি অবস্থায় আছে "দুই মাত্রা" (কাব্যগ্রন্থ); "আল কুরআনের ছড়া" (প্রথম পারা); "ছড়ায় ছড়ায় হাদীস" (প্রথম খণ্ড); "দিন বদলের ছড়া" (ছড়াগ্রন্থ); "মন ভাঙার আগে ও পরে" (কাব্যগ্রন্থ); "সালাত কী কেন কীভাবে"; "সীরাতে মুহাম্মদ (সা.)" (কাব্য) ইত্যাদি একক বই।
তিনি ওয়ামী বইপাঠ প্রতিযোগিতা ২০১২তে জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পেয়েছেন ঝাল শ্রেষ্ঠ ছড়াকার সম্মাননা-২০১৬।
.
তরুণ এইকবির জন্য পরিষদের পক্ষথেকে রইল অনেক অনেক শুভকামনা এবং ভালবাসা। প্রস্ফুটিত হোক কবির জীবন।
যাক ছড়িয়ে ছড়ার আলো
সাম্য-ন্যায়ের ঝাণ্ডা তুলে
দূর করে দিক আঁধার-কালো।
সাম্য-ন্যায়ের ঝাণ্ডা তুলে
দূর করে দিক আঁধার-কালো।