দীদার মাহদী

লেখক পরিচিতিঃ 


প্রিয় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] সুস্থধারার নবীনলেখকদের প্লাটফর্ম । রকমারি আয়োজনের মাধ্যমে নবীনলেখকদের প্রতিভাবিকাশ এবং তাদের লেখার মান বৃদ্ধিতে কাজকরে যাচ্ছেবাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] । এরই ধারাবাহিকতায় সাপ্তাহিক এবং মাসিক বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করেছে লেখক পরিচিতি। এইক্ষেত্রে যেমন একজন নবীনলেখক সম্পর্কে জানতে পারবো। তেমনই লেখকদের উৎসাহিতও করা যাবে। 

আজকের লেখকঃ দীদার মাহদী


দীদার মাহদী। নামের একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। বাবা নাম রেখেছেন দীদার। পূর্ণনাম মুহাম্মাদ দীদারুল ইসলাম। নানু রেখেছিলেন ইমাম মাহদী আ: এর দিকে খেয়াল করে মাহদী। কিন্তু দীদার নামটিই বেশি পরিচিতি পায়। মাহদী নামটি চাপা পড়ে যায়। তিনি যখন লেখালেখিতে শুরু করলেন তখন দীদারুল ইসলাম নামেই লিখতেন। এনামে অনেকলেখা ছাপা হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যেদিন তিনি দেখলেন একটি পত্রিকায় দীদারুল ইসলাম নামে লেখা। কিন্তু লেখাটি নিজের নয়। তিনি পড়ে সাহিত্যকলি পত্রিকার সম্পাদক আহসান শরিফের সাথে কথা বললেন।। উনি পরামর্শ দিলেন, নামের আগে পরে কিছু লাগাতে। তখন তিনি ভাবলেন আরেক নাম তো মাহদী। সুতরাং এটা লাগানো যায়। দীদারুল ইসলাম মাহদী। এ নামে যুগান্তরের ‘ইসলাম ও জীবন’ পাতায় একটি লেখা ছাপা হয়। কিন্তু নামটা বড় বড় দেখাচ্ছিল। তাই তখন থেকে তিনি ঠিক করলেন সংক্ষেপে দীদার মাহদী। পরে একাডেমিক সার্টিফিকেটে এ নামই দেওয়া হয়। 

জন্মস্থান নানাবাড়ি। সেটা শরীয়তপুর জেলার অন্তর্গত গোসাইরহাট থানার গজারিয়া গ্রামে। জন্মদিন ০২-০৫-১৯৯২। কিন্তু মাদ্রাসার সার্টিফিকেটে ৩১-১২-২০০০। কবি শৈশবে একটু বেশি লাজুক ছিলেন। তবে পিতামাতারা কাছে দাবী-দাওয়া করতেন বাশি। যা দেখতেন নিজের করার একটা আগ্রহ ছিল। নানাবাড়ি যাওয়ার পথে নৌকা দেখলে আম্মুকে বলতেন, ‘এমন একটা নৌকা আমার চাই’। খাবার জিনিস দেখলে তো কথাই নেই। কত যে আম্মুকে বিপাকে ফেলেছেন তার ইয়ত্তা নেই। ঘুড়ি ওড়ানোর বেশ শখ ছিল। আর বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ব্যাপক নেশা ছিল প্রচুর। এব্যাপারেএকটি ঘটনা তিনি এখনো ভুলতে পারেননি। কবির চাচাতো ভাইয়ের ছেলে খবির উদ্দীনের সাথে গিয়েছিলেন নদীতে ইলিশ মাছ ধরতে। ওদের নৌকা, জাল দুটোই ছিল। জাল নদীর এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত পেতে বসে আছেন। ভাটিতে নৌকা এগুচ্ছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পশ্চিম আকাশ কালো করে মেঘ আর তুফান শুরু হল। প্রচন্ড তুফান। তাদের নৌকাটা কাগজের নৌকার মতো দুলছিল। ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলেন। মনেমনে তাওবা ইসতেগফার পড়ছিলেন। সেদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করছিলেন, ‘জীবনে নামাজ ছাড়বো না’। তিনি সেইদিনকার প্রতিজ্ঞা পূরণে আজো সজাগ। 

পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম। পেশায় একজন বেসরকারি মুহুরি। বরিশাল জজকোর্টের জেলা আইনজীবি সহকারী সদস্য। মা দেলোয়ারা বেগম (দুলু) একজন গৃহিণী। বাড়িতে অবসরে টুকটাক টেইলার্সের কাজ করেন। 

তরুণকবি দীদার মাহদী একজন হাফেজে কুরআন। কওমি থেকে মেশকাত কমপ্লিট করেছেন। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিলে (এস এস সি সমমান) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হোন। ২০১৫। এখন তিনি আলিম (এইজ এস সি সমমান) দ্বিতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি একটি জামে মসজিদের পেশইমাম এবং খতীবের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। 
.
তিনি ৫ম শ্রেণি থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। হিফজ বিভাগে পড়া অবস্থায় মাসিক কিশোরকণ্ঠ ও আদর্শ নারী পড়তেন। পরবর্তীতে সাহিত্যকলি নামে একটা পত্রিকা পড়তেন। মূলত এইসব পত্রিকাগুলো পড়েই তিনি লেখালেখির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এরপর যখন কিতাব বিভাগে ইবতেদায় ভর্তি হলেন তখন তার ইচ্ছেটা আরো প্রবল হয়। প্রথম লেখা পাঠালেন সাহিত্যকলিতে। লেখা প্রকাশও পেলো। সেইথেকেই কবির লেখালেখির পথচলা। 
এইপর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশ পেয়েছে। দৈনিকপত্রিকার মধ্যে যুগান্তর, নয়া দিগন্ত, , সংগ্রাম অন্যতম। মাসিকপত্রিকার মধ্যে রয়েছে সাহিত্যকলি, রাহমানী পয়গাম, আদর্শ নারী, আল আমানাহ, কিশোরকণ্ঠ, নবধারা, নতুন ডাক, সৌরভ, ইসলামী বার্তা, পুষ্পকলি, টুনটুনি, বাতায়ন, মাদরাসা, অনুশীলন, ভেলা, নকীব, সোনার বাংলা ইত্যাদি। তবে কবির এখন পর্যন্ত কোন একক বই প্রকাশিত হয়নি। তিনি তিন শতাধিক ছড়া লেখাছেন। ত্রিশটির মতো গানও লেখা হয়েছে কবির।
একটি উপন্যাস লিখেছেন। কোথাও প্রকাশ করেননি। গল্প লেখা হয় খুব কম। কিছু গল্প কিশোরকণ্ঠ ও পুষ্পকলিতে ছাপা হয়েছে।

ইসলামী চেতনায় বিশ্বাসী এই তরুণকবি ইসলামী আদর্শ লালন এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার সর্বাত্তক প্রচেষ্টা করে থাকেন। অবসর সময়ে ইসলামী দর্শন, গল্প, উপন্যাস পড়ে থাকেন। থ্রিলারের মধ্যে সাইমুম সিরিজের বইগুলো কবিকে বেশ টানে। কবির ইসলাম, দেশ ও মানবতাকে নিয়ে লিখতে বেশি ভালো লাগে। দেশ-মানবতার জন্যই সাহিত্যচর্চা। 
দীদার মাহদী মনে করেন, ‘প্রত্যেক লেখকের লেখা যেন মানুষ এবং মানবতার মুক্তির জন্য হয়’। 
তিনি লিখেছেন-
“বন্যাতে আজ পানিবন্দি লাখো মানুষ
কষ্টে আছে ছাগল গরুর চাকও মানুষ ৷
সাধ্যে যাদের কুলোয় ওদের পাশে দাঁড়ান
দূর্গতদের সাহায্যেরই হাতটা বাড়ান ৷
অসহায়দের ঘরবাড়ি আজ জলে ভাসে ৷
দান করে যে আল্লাহ তাকে ভালোবাসে ৷
নয় তামাশা নয় উপহাস যেটুক পারুন,
ওই দুখীদের দুখ ঘোচাতে সামনে বাড়ুন” ৷


.
কবির যত প্রিয়ঃ
প্রিয় গ্রন্থ— আল কুরআন ৷
প্রিয় বই— যখন যেটা পড়েন।
আদর্শ ব্যক্তি— হযরত মুহাম্মাদ সাঃ
প্রিয় রঙ— সবুজ ৷
শখ— লেখালেখি ৷ ভ্রমণ ৷
প্রিয় লেখক— আবু তাহের মেসবাহ,আব্দুস শহীদ নাসিম, আবুল আসাদ, যাইনুল আবেদিন, মাসুদা সুলতানা রুমি।
প্রিয় কবি— কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, আল মাহমুদ মতিউর রহুমান মল্লিক।
প্রিয় কণ্ঠশিল্পী— মশিউর রহমান, নওশাদ মাহফুজ, সাইফুল্লাহ মানসুর , মুহিব খান।
প্রিয় অভিনেতা— আবুল কাশেম মিঠুন, ইলিয়াছ কাঞ্চন, মোস্তাগিছুর রহমান, হুসনে মোবারক।
প্রিয় খেলোয়াড়: হাশেম আমলা, শাহীদ আফ্রিদি, ইউসুফ পাঠান
প্রিয় ছড়াকার: জগলুল হায়দার, শরিফ আহমাদ


বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP]’র পক্ষথেকে তরুণ কবি দীদার মাহদীর প্রতি রইল প্রাণঢালা শুভেচ্ছা । কবির আগামী দিনগুলো হোক স্বর্ণালীময়।
আজকে এইপর্যন্তই আগামীতে আমরা আবারও হাজির হবো অন্যকোন লেখকপরিচিতি নিয়ে। ততদিন ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের সাথেই থাকুন।
 
Top