দ্বিতীয় বিয়ে (ছোটগল্প) 
-----------------------------
__ এম শহিদুল ইসলাম 
সরকারি হাজি মোঃ মহসিন কলেজ।চট্টগ্রাম


ইংরেজি সাহিত্যে মার্স্টার্স কমপ্লিট করার পর গভর্নমেন্ট জবটা পেয়ে যাওয়ার এক বছরের মধ্যেই বিয়ে করেছিলাম। পাত্রীও কম দেখিনি। যেনতেন মেয়ে বিয়ে করবোনা এই সিদ্ধান্তে আমি প্রথম থেকেই অটল ছিলাম। অর্থাৎ, পাত্রী অবশ্যই সুন্দরী,উচ্চশিক্ষিত ও মডার্ন হতে হবে। সেইজন্য গোটা পঞ্চাশেকের মতো পাত্রী দেখা সত্ত্বেও আমার চাওয়া অনুযায়ী না হওয়ার দরূন সবগুলোকে বাদ দিয়ে শেষমেশ "মালতী" নামের কাঙ্ক্ষিত এক রাজকন্যার সাথেই বিয়েটা হয়েছিলো। বিয়ের অল্প ক'দিন আগে আবুল কাকা (ঘটক) একটা পাত্রীর সন্ধান দিয়ে বেশ প্রশংসা করেছিলো। শুনেছি মেয়েটা ধার্মিক টাইপের ছিলো; ইসলামিক স্টাডিজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী সে; দেখতেও খারাপ ছিলোনা। বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরতো। আমি এটাকে অতিমাত্রায় গোঁড়ামি মনে করে শেষ পর্যন্ত তাকে না দেখেই ইগনোর করেছিলাম। যেদিন প্রথম মালতী'কে দেখতে গিয়েছিলাম, সেদিন কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম.....
-হ্যাভ ইউ বিন এংগেইজড সো পার?
-সরি, আই ডোন্ট আন্ডার্সট্যান্ড। হোয়াট ডিড ইউ মিন?
-না মানে, আপনি প্রেমটেম করেন না তো?
-না (কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে)।
বিয়ের আগে রিলেশন থাকলেও এভাবে হয়তো অনেক মেয়েই লাজ লজ্জা আর প্রেস্টিজের কথা চিন্তা করে "না"-ই বলে থাকে। এখন বুঝতে পেরেছি, আমার স্ত্রী মালতী'র ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। একদিন মালতী'র ফোনে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল আসে। ও কাছে না থাকায় আমিই কলটি ধরেছিলাম। পুরুষ কন্ঠ পেয়ে আমতা আমতা কী যেন বলে ফোনটা কেটে দেয়। মাঝে মাঝে অফিস থেকে ফিরে তাকে ফোনে কথা বলতে দেখতাম। তখন এতসব মাথায় ছিলোনা আমার। একদিন মাঝরাতে দেখি ওর ফোন বাজছে; আমার ঘুম ভেঙে যায় তবু আওয়াজ না করে শুয়ে আছি। একটু পরে দেখি ও বিছানায় নেই, ব্যালকনিতে গিয়ে কথা বলছে। আসার পর কী হয়েছে জানতে চাইলে বলে, একটা দু:স্বপ্ন দেখেছে, তাই ভয় পেয়ে পানি পান করতে গেছে। তখনই স্ত্রীর প্রতি আমার সন্দেহ হয়। এইভাবে তার আরো কিছু বিহেইভ দেখে বুঝতে বাকি রইলোনা যে আমার স্ত্রী পরপ্রেমে লিপ্ত। হায়! পোড়া কপাল আমার! স্ত্রীর গোপন প্রেমের জের ধরে তার সাথে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকতো আমার। আচরণে ও এমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করতো যেন ফণাধারী একটা বিষধর সাপ ফোঁস ফোঁস করছে। আমাকে যেন ছোবল মেরেই ছাড়বে। শেষ অবধি তা-ই হয়েছিলো। যাকে রাজকন্যা ভেবেছি, সে যেন আমার জীবনে রাজ অভিশাপ হয়েই হানা দিয়েছে। পারলামনা, সম্ভব হলোনা তার সাথে জীবন কাটানো। জানি, ভুলটা আমারই ছিলো। পাত্রী বাছাইয়ের উচ্চাভিলাষী চিন্তা আমাকে ধার্মিক, পতিব্রতা রমণী বিয়ে করা থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। এ অজ্ঞতা শুধু আমার নিজেরই। এমন পরিণতির জন্য আমি মোটেই ভাগ্যকে দায়ী করবোনা। আসলে ভাগ্য আমাদের নিয়ে সবসময় খেলেনা। আমরা নিজেরা ভাগ্যের যেমন বীজ বুনি, তেমন ফলই আমাদের জীবনে সত্য অথবা তিক্ত সত্য হয়েই দেখা দেয়। বিয়ে নামক সুখের বসন্ত আমাদের জীবনে সত্যিকারের বসন্ত না হয়ে বর্ষার বারি হয়ে আবির্ভূত হওয়ার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই দায়ী। কখনোই ভাবিনি, প্রথম বিয়ের দ্বিতীয় বছরে আমাকে আজ আবারো কোন নারীর বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।


বিঃদ্রঃ আমার লেখা প্রথম গল্প।

 
Top