প্রিয় সাহিত্য প্রেমী বন্ধুগণ
আশাকরি আপনার সকলে ভালো আছেন।
বন্ধুরা বিগত কয়েকটি পর্বের ফলাফল
ঘোষণা করতে পারিনি । বেশ কিছুদিন পরে হলেও আপনাদের জন্য ফলাফল নিয়ে এসেছি। আপনারা
সকলেই আন্তরিক ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনাদের প্রত্যেকের লেখাই ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে
। আপনাদের এই প্রচেষ্টা অব্যহত থাকলে আপনারা প্রিয় বাংলাদেশের মানুষকে একটি সুন্দর
সাহিত্যের ভান্ডার উপহার দিতে পারবেন। দেশের সেবায় নিজেকেসহ সমাজকে এগিয়ে নিতে
পারবেন।
বন্ধুরা , ১৬৫তম পর্বে সন্তসজনক
লেখা না পাওয়ায় কাউকেই বিজযী করা হয়নি এবং গত নানা ভাইকে উৎসর্গ করে যে পর্বটি
হয়েছে । সেখানে সকলের লেখা সুন্দর হয়েছে। সে পর্বটি বিশেষ পর্ব হওয়ায় বিজযী ঘোষণা
করা হয়নি।
আপনারা নানা ভাইয়ের জন্য দোয়া
করবেন।
সকলেই ভালো থাকবেন।
#সাহিত্য আসরঃ ১৬৪
বিষয়ঃ লেখক পরিচিতি
নার্গিস
নাহার রুনু
.
স্মৃতির
পাতায় কাজী ইমদাদুল হক
আমি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া একজন লেখকের পরিচিতি তুলে ধরতে চাই যার কথা বর্তমান
প্রজন্ম তেমন জানেনা। সেই লেখকের নাম কাজী ইমদাদুল হক।তিনি বৃটিশ ভারতের একজন বাঙালী লেখক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি খুলনা জেলার গদাইপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৮৮২
সালের ৪
নভেম্বর জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবা আতাউল হক প্রথম জীবনে আসামে জরিপ বিভাগে
চাকরি করতেন। পরে খুলনা ফৌজদারি আদালতের মোক্তার হন। বাল্যকাল হতেই তিনি লেখাপড়ায় মেধাবী
ছিলেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ১৯০০সালে বি. এ
পাস করেন এবং দীর্ঘকাল পরে ১৯১৪সালে তিনি বিটি পাস করেন। তাঁর একমাত্র ছেলে কাজী আনোয়ারুল হক। (শিক্ষামন্রী ছিলেন)
সরকারি চাকরি ও শিক্ষকতা করেই তাঁর জীবন কেটে
যায়।তাঁর কর্মময় জীবন শিলং,কলকাতা ও
ঢাকা। এর
মাঝেই তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনা চালিয়ে যান। তিনি যে
মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন সে পরিবারে
কঠোর শাসন প্রচলিত ছিল। বলতে গেলে মেয়েদের সূর্যের মুখও দেখা হতোনা। মেয়েরা ঘরের মা চাচীদের
কাছে কোরান শিক্ষাগ্রহণ করতো। রোগে, শোকে মারা
গেলেও ডাক্তার দেখানোর হুকুম ছিলনা। ঘোর পর্দাপ্রথা
আর ধর্মীয় গোড়ামী তাঁর মনে রেখাপাত করে। হয়তোবা
তিনি সেজন্যই আব্দুল্লাহর মতো উপন্যাস লিখতে পেরেছন। এতে তৎকালীন মুসলিম সমাজের নানা দোষত্রুটি অতিশয় দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন।
বাঙালী মুসলমান সমাজের কল্যান সাধন করাই ছিল
তাঁর সাহিত্য সাধনার মূল লক্ষ্য। তিনি বম্গীয় মুসলমান
সাহিত্য পত্রিকা(১৯১৮)প্রকাশনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় মাসিক নবনূর পত্রিকা (১৯০৩-১৯০৬)ও শিক্ষাবিষয়ক পত্রিকা মাসিক শিক্ষক
(১৯২০-১৯২৩)প্রকাশিত হতো যা তিনবছর করে চালু
ছিলো। তিনি বহু কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ,শিক্ষা ও
নীতিমূলক শিশু সাহিত্য রচনায় খ্যাতি অর্জন করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্হ সমূহ --আঁখিজল,মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা, ভূগোল শিক্ষাপ্রণালী, নবীকাহিনী,
প্রবন্ধমালা, কামারের কান্ড,আলেক্সজান্দ্রিয়ার প্রাচীন
পুস্তকাগার, আব্দুর রহমানের কীর্তি,ফ্রান্সে মুসলিম অধিকার,
আলহামরা, পাগলখলিফা, আব্দুল্লাহ প্রভৃতি।
১৯২১সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শিক্ষাবোর্ডের প্রথম কর্মাধাক্ষ হয়ে জীবনের শেষ দিনটি
পর্যন্ত বহাল ছিলেন। তিনি ১৯২৬সালে কলকাতায়
মৃত্যু বরন করেন। মাত্র ৪৩-৪৪বছরের তাঁর জীবনের
পরিসমাপ্তি ঘটে। তিনি দক্ষতা ও
নিষ্ঠার সাথে তাঁর কর্মজীবন সমাপ্ত করেন। সরকার তাঁর কাজে খুশি হয়ে
তাঁকে"খান সাহেব "ও"খাঁন বাহাদুর"উপাধি দান করেন।
তিনি জীবদ্দশায় তাঁর আবদুল্লাহ উপন্যাসের কাজ শেষ
করতে পারেন নাই।১৯৬৮সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন
বোর্ড(বর্তমানে বাংলা একাডেমি) তাঁর পুস্তিকাগুলি
সংরক্ষন করে। (কবি আব্দুল কাদির)
কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এই লেখকের পরিচিতি
অল্প পরিসরে লিখতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে
করছি। রকমারিতে তাঁর বই আছে। আমি প্রজন্মের
নবীন লেখকদের অনুরোধ করবো পূর্ববর্তীদের লেখা
পড়ুন নিজেদের ঞ্জানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধি
করুন।
আল্লাহ হাফিজ।
#সাহিত্যাসর -১৬৬
বিষয়ঃ শিশুতোষ
.
১.
ইচ্ছা খুকুর
নার্গিস নাহার রুনু
চাঁদকে ডাকে মামনিটা
আয় দিয়ে যা টিপ,
আকাশ গাঙে জোছনা ঝরাস
জ্বেলে আলোর দ্বীপ।
সন্ধ্যা হলেই চাঁদ যে মায়ের
ঘুমপাড়ানীর গান
চাঁদের বুড়ীর গল্প শুনে
ভাঙ্গে খুকুর মান।
খুকুর মনে ইচ্ছে
নদী
যাবেই চাঁদের দেশ,
চরকাকাটা দাদুর সাথে
ভাব জমাবে বেশ।
মেঘপরীদের ডানায় চড়ে
আকাশ ছোঁবে নীল,
মেঘের ভেলায় ভাসবে ভেবে
হেসেই সে খিলখিল।
ইচ্ছাটা আর হয় না পূরন
চোখে নামে ঘুম,
চাঁদের আলো চন্দ্রমুখে
যায় দিয়ে যায় চুম।
.
২.
ঋতুকাব্য
নাসিমা বিনতে মালেক
বইছে হাওয়া ফাল্গুনে ওই
ঝুমকোজবা ফুলে,
সেই হাওয়াতে খোকাখুকুর
প্রাণটা যেন দোলে।
শালবনে ওই দেখো চেয়ে
বসলো পাখির মেলা,
চলো সবাই জুটবো গিয়ে
খেলবো মজার খেলা।
খেলার সাথী দোয়েল কোয়েল
ময়না ঘুঘু টিয়ে,
সাঁঝের বেলায় শিমুলতলায়
দেবো পুতুল বিয়ে।
বর আসবে নিতে বধূ
পঙ্খিরাজে চড়ে,
পুতুলবউয়ের সারাটি গায়
গয়না দেবো গড়ে।।
#সাহিত্যাসর ১৬৭
বিষয়ঃ শীত
১.
দাড়াই ওদের পাশে
নার্গিস নাহার রুনু
ঘোর কুয়াশায় আকাশ ঢাকা
যায় না দেখা চাঁদ,
গলির ধারের টোকাই ছেলের
নেইতো বাড়ীর ছাদ।
দারুন শীতে কাতর তবু
ঘুমায় পথের ধার,
টোকাই নামের লেবাস পরা
খোঁজ নেই বাপ ও মার!
ছালার চট আর পলিথিনে
ছাউনি দেয়া ঘর,
জন্ম কোথায় তাও জানেনা
ভাবনা নিরন্তর।
কোথায় পাবে গরম কাপড়
একটু শীতে ওম,
ঠকঠকিয়ে কাঁপছে দেহ
শীতটা যেনো যম।
এসো ওদের পাশে দাড়াই
করি সবাই দান,
বাড়তি গরম পোশাক থেকে
দিয়ে দেই একখান।
.
২.
শীতের বুড়ি
রশীদ
রওশান
বরফগলা হীম বাতাসে
ঠান্ডা
কী যে বহে,
গাঁয়ের বু্ড়ি-কুঁড়ে ঘরে
কেমন করে সহে।
.
ঘরের ছানি বেন্নাপাতা
আকাশটা যায় দেখা,
সূর্যিমামা উঁকি দিলেই
হয় যে কাঁথা ছ্যাকা।
.
বুড়ি মা-টা বস্ত্র চাইলো
পাইলো দশেক টাকা,
এমনি করে চলছে বুড়ি
চলছে জীবন চাকা।
.
কু্ঁড়ে ঘরের দুঃখ মাগো
বুঝবে কী আর শীত?
চাইলে পারে বিত্তশালী
ছেদ করে সব ভীত।