মো. গোলাম মোস্তফা টুটুল
ভূত মামার উপহার ( শিশুতোষ গল্প)
মোঃ গোলাম মোস্তফা টুটুল
১৩/১১/১৬
--------------------
রিফা। বয়স মাত্র ১০ বছর। সুন্দর সুশ্রী, হালকা পাতলা
গড়নের অমায়িক চেহার অধিকারী রিফা কে প্রথম
দেখাতে কেউ চোখ ফেরাতে পারবে না।
আল্লাহ তায়ালা রিফাকে বাহ্যিক দিক দিয়ে যেমনন
শ্রেষ্ট রুপে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক তেমনি তার
মনটাও সুন্দর। স্পষ্টভাষি,সত্যবাদী, অন্যায় অনিয়ম
মিথ্যের বিরুদ্ধে এক নির্ভিক সৈনিক হিসেবে এত
অল্প বয়সেই রিফা পরিবার কে ছাড়িয়ে গ্রামের
সবার মন জয় করে নিয়েছে।
.
নুরপুর গ্রামের ওর বয়সী সকল ছেলেদের
কাছে রিফা রোল মডেল। সদা সত্য কথা,
পড়ালেখায় ভাল ফলাফল করা আর অসত্যের
বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে রিফা সকলের কাছে
যেমন হয়েছে অতিপ্রিয়, ঠিক তেমনি গ্রামের
কিছু কিছু বদমায়েশ দুষ্ট ছেলেদের কাছে রিফা
যেন গলার কাঁটা! যে কোন মুল্যে রিফা থামিয়ে
দিতে হবে। ওর মুখ থেকে সত্য বলা বন্ধ
করতে হবে। রিফাও পাড়ার দুষ্ট ছেলেদের
স্পষ্টভাষায় বলে দিয়েছে ওর দেহে প্রান
থাকতে সত্য কথা বলে যাবে, কোন মুল্যে তার
মুখ বন্ধ করা যাবে না। দুষ্ট ছেলেদের সকল
দুষ্টামি খারাপ কাজের
মুলউৎপাটন করবে। রিফা ঘোষনা দিয়েছে নুরপুর
গ্রামে কেউ খারাপ কাজ করতে পারবে না,
অন্যের থেকে চুরি করে মিথ্যে বলে কিছু
নিতে পারবে না। কারো বাগানের ফুল ছিরতে
পারবে না।
.
রিফার এসব কথা শুনে দুষ্টদের দুষ্টমির মাত্রা যেন
বেড়ে গেল! দুষ্টছেলেদের সরদার গিটু মিয়া
একদিন রিফাকে স্কুল থেকে ফেরার পথে
শাসিয়ে বললো, শোন রিফা তুই ভাল ছেলে
ভালই থাক আমাদের কাজে বাধা দিতে আসিস না ,
আমরা চুরি করবো, মিথ্যে বলে ধোকা দিয়ে
অন্যের থেকে খাবার কেড়ে খাবো তুই
আমাদের বাধা দিতে আসিস না, আসলে তোর
খারাপ হবে! রিফাও গিটু কে বলল আমার চোখের
সামনে কোন খারাপ কাজ, চুরি করা এসব মেনে
নেব না। এ বলে রিফা বাড়ি চলে আসে।
.
তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে আজকের
ঘটনার জন্য রিফার মনটা খারাপ! রিফা ওদের বাড়ির
পিছনের শতবছর বয়সী শিমুল গাছটার নিচে বসে
ভাবছে ভাল কাজ করলে সত্য কথা বললে
অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে এত হুমকির মুখে
পড়তে হয়?
এমন সময় শিমুল গাছের একটা মরা ডাল ভেঙ্গে
রিফার পাশে ধপাস করে পড়লো। অনমনা রিফা ডাল
পড়ার ধপাস শব্দে কিছুটা ভিতু হলো। এমন সময় রিফা
গাছের উপড়ের দিকে তাকালো রিফা দেখলো
ওদের শিমুল গাছটা কাপঁছে! মনে হচ্ছে ভুমিকম্প
শুরু হয়েছে! রিফার ভয়ের মাত্রা কিছুটা বেড়ে
গেল। রিফা পাশে তাকিয়ে দেখলো সাদা ধবধবে
কাপড় পড়া এক লম্বা দেহি ব্যক্তি দাড়িয়ে আছে
তার পাশে! রিফা এবার ভয়ে চুপসে গেল, কিছু
বলার আগেই লম্বা দেহী ভয়ংকার লোকটি রিফায়
মাথায় হাত রেখে বললো ভয় পেও না। আমি
তোমার কোন ক্ষতি করবো না.। আমার নাম
ল্যাংড়া ভূত অনেক বছর থেকেই তোমাদের এই
গাছে আমি বসবাস করে আসছি, ছোট থেকেই
তোমাকে দেখে আসতেছি, তোমার অনেক
প্রশংসাও শুনেছি পাড়ার সবার থেকে। তুমি নাকি
সত্যবাদী ছেলে। মিথ্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার
থাকো সবসময়। আজ তোমার মন খারাপ কেন?
তোমার মন খারাপ দেখে আমি গাছ থেকে
নেমে এলাম তোমার সাথে দেখা করতে। এবার
বলো তোমার কি হয়েছে? রিফার ভয় এবার
পুরপুরি কেটে গেল, রিফা ল্যংড়া ভুত কে সব
বললো। ভুত সব শুনে রিফা কে শান্তনা দিয়ে
বললো শোন রিফা সত্য কথা বললে, সৎ পথে
চললে তোমার বিরুদ্ধে সবাই লাগবেই
তোমাকে দামিয়ে রাখার জন্য হাজার চেষ্টা
করবে, কিন্তু তোমার মন খারাপ করা চলবে না, সব
কষ্ট ভুলে সঠিক কাজ করতে হবে।
.
এই দেখ আজ আমি ল্যংড়া ভূত! কেন এমন হয়েছি
জানো?? আমিও তোমার মতই এরকম অন্যায়
অসত্য মিথ্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, আমার
সমাজের কতিপয় দুষ্ট মানুষ আমাকে মেনে
নিতে পারে নি। ওরা আমাকে আমার পা কেটে
ল্যংড়া করে মেরে ফেলেছে।
.
তুমি ভয় পেও না তোমার কাজ তুমি চালিও যাও। ভুতটা
এবার তার ঝোলা থেকে একটা রুপার পুতুল বের
করে রিফা কে উপহার দিলো এবং বললো,
আজ থেকে তুমি আমাকে ভূত মামা বলে
ডেকো আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো,
তুমি যখনই আমাকে ডাকবে আমি তোমার পাশে
যাব, তোমাকে সাহায্য করবো।
রিফা ভূত মামার আচরনে খুব খুশি হয়। এবং ভাল কাজ
করার আরো বেশি উৎসাহো পায়। তখন প্রায় রাত
নেমে এসেছে রিফা এবার ভূত মামাকে বিদায়
জানিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়।
.
পরদিন সকালে রিফা স্কুলে যাবার পথে দেখে
গিটু মিয়া সহ আরো কয়েকজন ছেলে ফজলের
আম গাছ থেকে চুরি করে আম পেড়ে
খাচ্ছে! রিফা দেখে তাদের কে বাধা দেবার
চেষ্টা করে, কিন্তু গিটু মিয়ারা রিফা কে এখান
থেকে সরে যেতে বলে। রিফা নাছড়বান্দা রিফা
ফজল মিয়াকে বলে দেবে বলে গিটু কে
বলে। গিটু মিয়ে রেগে রিফাকে মারতে আসে।
রিফা এবার আল্লাহকে স্বরন করে সাহায্য চায় এবং
ভুত মামাকে পাশে ডাকে । রিফার ডাকে ভুত মামা
ভয়ংকর রুপে হাজির হয়। ভুত দেখে গিটুরা ভয়ে
পালাতে থাকে কিন্তু ভুত মামা তাদের কে ধরে
ফেলে। এবার গিটুরা প্রান বাচাতে রিফার কাছে
হাতজোর করে,রিফা তাদের কে শর্ত দিয়ে
বলে আজ থেকে আর কখনো মিথ্যে কথা
বলতে পারবে না কোন খারাপ কাজ করতে
পারবে না কারো জিনিস চুরি করে নিতে পারবে না।
গিটুরা শর্ত মেনে নিয়ে ভাল হয় যায়।
/
শিক্ষাঃ সব সময় সত্য কথা বলবো, কখনো
মিথ্যের আশ্রয় নেব না। শত বাধা পেরিয়ে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবো
ইনশাআল্লাহ।
 
Top