লেখক পরিচিতি
.এইপর্যন্ত অনেকের লেখক পরিচিতই প্রকাশ করেছি। কমবেশি সবার ক্ষেত্রেই বারেবারে ম্যাসেজ দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চেয়েছি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সময় নিয়েছি যার পরিচিতি লিখতে! তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় নানাভাই কবিআব্দুস সামাদ স্যার। ব্যক্তিজীবনে আব্দুস সামাদ স্যার পরিচিত হওয়ায় লেখকপরিচিতি লিখতে সুবিধার চেয়ে যেন অসুবিধায় বেশি হয়েছে। আমার বারেবারে মনে হয়েছে সম্ভবত আরো কিছু বাদ রয়ে গেলো। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার জীবনের সকল বিষয়ই নিজে জানার পরও আবার জিজ্ঞেস করেছি। আমি যা জেনেছি তার কিছুঅংশ বাদে চেষ্টা করেছি পরিচিতিটা পূর্ণাঙ্গ করার। হ্যাঁ প্রিয় লেখক-লেখিকা বন্ধুগণ আজকে আপনাদের সামনে হাজির হলাম আমাদের সকলের প্রিয় নানাভাই কবি আব্দুস সামাদ স্যারের পরিচিতি নিয়ে। আশাকরি আপনাদের জানার আগ্রহের কিঞ্চিৎ হলেও পূরণ হবে।
আবদুস সামাদ (নানাভাই)
.
সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধানবান্ধি গ্রামে ১৯৬৬ সালের ১৭ ই এপ্রিল মোতাবেক ১০ ই মহরম শুক্রবার ভোর ৫ টা ২০ মিনিটে মরহুম হারুন অর-রশীদ সরকার এবং মরহুমা তছিরন্নেছা কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে একসন্তান। পিতা হারুন অর-রশীদ তার বড়ছেলে আব্দুস সালাম এর সাথে মিল রেখে পুত্রের নাম রাখলেন আব্দুস সামাদ। সেইদিনের আব্দুস সামাদই সময়ের ব্যবধানে আমাদের এখনকার নানাভাই হিসেবে খ্যাত কবি আব্দুস সামাদ।
.
বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে প্রমত্তা যমুনা। তৎকালীনসময়ে ধানবান্ধি গ্রাম ছিল একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। বাড়ীর পাশে ছিল বি.এল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, জেলখানা, হেলিপ্যাড, মহুকুমা প্রশাসকের কার্যালয় এবং তাদের বাস ভবন, ডাকবাংলোসহ ঐতিহ্যবাহী নৌবন্দর। এক সময়ে গোটা বিশ্বের যোগাযোগের একমাত্র এলাকা ছিল ধানবান্ধি গ্রাম । ১৯৮৫ সালে যমুনার করাল গ্রাসে এলাকাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় । সেই থেকে আজ অবধি তা জেগে উঠেনি। শুকনোমওসুমে জাগলেও তা বসবাসের অনুপোযোগী হয়েই থাকে ।
শৈশবে কবি খুব শান্তপ্রিয় এবং ভাবুক ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের সুবাধে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের গরু, ছাগল ও ভেড়া প্রতিপালনে বেশ আগ্রহী ছিলেন। এই কারণেই বেশীরভাগ সময় প্রকৃতি, শস্য পরিচর্চায় সময় অতিবাহিত হয়েছে। বর্ষার সময় নৌকা নিয়ে মাছ ধরা, গরু ছাগলের জন্য ঘাস সংগ্রহ করতে গিয়ে স্কুল বন্ধের দিনে দিনমান কেটে যেতো হৈহুল্লুর করে। তিনি পাঁচভাই , তিনবোনের মধ্যে সকলের ছোট হওয়ায় বেশ আদরেই কাটতো। লেখাপড়ায় ভালো থাকায় পরিবারের কেউই কোন কাজে বাধা দিতো না। কবি আব্দুস সামাদ ছোটবেলায় ভৌতিক কর্মকান্ডে বেশ কৌতুহল ছিল এবং তার জীবনে এক আনন্দময় ভৌতিক ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে, যা খুবই রহস্যময় ।
.
তিনি ১৯৮২ বি.এল সরকারী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি, সিরাজগঞ্জ সরকারী ইসলামীয় কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালে এইস.এস.সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে বি.এ পাশ করেন । বাবা,মা মারা যাওয়া এবং যমুনা নদীর করাল গ্রাসে বাড়ী, জমি, জমা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় আর পড়ালেখার সুযোগ হারিয়ে যায় এবং কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয় । তিনি বরাবরই কর্মদ্যোমী ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করেই দারুল ইসলাম একাডেমীতে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। অবক্ষয়মান সামজিক দুরাবস্থতার কথা ভেবে এবং বেকারত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠিান গঠন করেন এবং তারই মাধ্যমে হতদরিদ্র ও অবহেলিত এলাকায় একটি কিন্ডার গার্টেন, এতটি হাই স্কুল, একটি ইয়াতিম খানা, একটি মক্তব, একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে নিরক্ষর এলাকায় ব্যাপক ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তার সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সামাজিক সেবা প্রতিষ্ঠান লন্ডনের মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে লন্ডনসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন এবং ওমরা পালন করেন। সেইসাথে একবার হজ্বব্রত পালন করেন। তিনি দৈনিক সংগ্রামের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা পেশাতেই নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। স্ত্রীর জেসমিন আক্তার নাসিমা, একপুত্র এবং এককন্যা নিয়েই কবির পরিবার।
.
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থাতেই কবির লেখালেখির যাত্রাশুরু । ১৯৭৮ সনে কবি আব্দুস সামাদ নানাভাইয়ের বাবা কবির লেখাগুলো দিয়ে একটা কবিতার বই করে দিয়েছিলেন যার নাম ছিল “সিয়াম”। দৈনিক সংগ্রামের নগরসম্পাদক এনামুল হকের সম্পাদনায় “ফুল কলিদের গান” নামে একটি কবিতার বই বের করেছিলেন যা খুব সমাদৃত হয়েছিল। চাহিদা থাকলেও পরবর্তিতে আর বের করা সম্ভব হয়নি। তবে গত ২১শে বইমেলা-২০১৬ বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলানূর হোসাইনের সম্পদানায় এবং প্রজন্মের উদ্যোগে একটি কাব্যসংকলন “প্রত্যাশা’ প্রকাশিত হয়।
এছাড়া সাপ্তাহিক সমযুগ, সাপ্তাহিক লালপাতা, দৈনিক কলম সৈনিক, সোনার বাংলা, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক মিল্লাতে বর্তমানে মাসিক খুতবায় অসংখ্য লেখা ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। কবির ব্যস্ততা কারণে অনেক লেখাই সংরক্ষণ করা হয়নি। আবার নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়ায় অনেক কিছু খোয়া গেছে। তিনি ছড়া/ কবিতা লেখার পাশাপাশি বেশকিছু গল্পও লিখেছেন। যেগুলো সোনার বাংলায়, দৈনিক সংগ্রাম, তুলি সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মানুষ, মানবতা, প্রকৃতি এবং সমাজ নিয়েই লেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
.
কবির ইচ্ছা এমন একটি যুগোপোযোগী সমন্বয় গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা যার মাধ্যমে সহজেই উন্নতমানের নৈতিকশিক্ষা শিশুদের দোরগোরায় পৌছে দেওয়া যাবে। তিনি সবসময়ই বলেন- একটি দেশের নুতন প্রজন্মের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সাহিত্যের বিকল্প নেই। এর জন্য পত্রিকা, ছোটগল্প, কবিতা, কবিতার আসর অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ। আমার লেখা একটি গান আমার স্কুলের শত শত ছেলেমেয়েরা যখন গায় তখন ভাবি সৃজনশীল মানুষের গান কবিতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দৃষ্টি ভঙি বদলে দিতে পারে । কবির অবসর নেই বললেই চলে বিশেষ করে সামাজিক কাজে বেশী জড়িত থাকায় অবসর অবসর বলতে কিছু থাকে না। তবে তিনি ভোররাতে একটু সময় বের করে অর্থসহ কোরআন, সুন্নাহ অধ্যায়ন ও ইসলাম নিয়ে গবেষনার চর্চার চেষ্টা করেন।
.
তিনি অত্যান্ত সদালাপী এবং পরউপকারী একজন মানুষ। তার সাথে কেউ কথা বললে অতিসহজে উঠতে চাইবেন না। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্যোস্যাল রিফর্মার ক্লাব, সুস্থ্যসংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন সিরাজগঞ্জ ব্যতিক্রম সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদেরও একজন সন্মানিত উপদেষ্টা এবং রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
.
আমরা কবির সার্বিক জীবনের মঙ্গল কামনা করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবিকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন। যেন তিনি আমাদের মাঝে থেকে প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে পারেন। সুসাহিত্যের ময়দানে রাখতে পারেন নতুন পথের দিশা দেখাতে, এইকামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি, আগামীদিন হাজির হবো অন্যকোন লেখক পরিচিতি নিয়ে। ততদিন ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, প্রজন্মের সাথেই থাকুন।