অনার্স পরীক্ষার পরে সোনালীব্যাংকে কেরানীর চাকুরী নিয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসেন নবাবপুর ব্রাঞ্চে! সাতমাস চাকুরী শেষে কাউকে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে মাস্টার্সের ফরমপুরণের জন্য গেলেন তৎকালীন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড: সুব্রত মজুমদারের কাছে ! তিনি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় কেরানীকে বিশ টাকা চা খেতে বকশিশ দিলে স্যারের কাছে পাঠিয়ে দেয় ! স্যার তো না জেনেই সই দেন ! খুশীতে স্যারের কদমবুসী করতেই প্রশ্ন করেন, “কেন এই কদমবুসী ?” তিনি স্যারের দোয়া চাইতেই কেরানীকে ডেকে ধমক দিলেন! তিনি বললেন , “জীবনে এটাই প্রথম ছাত্র, যাকে সারাবছর ক্লাশ না করে গণিতের মতো বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষার অনুমতি দিলাম”। তিনি স্যারকে আশ্বাস দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া চাইলেন ! স্যার তাকে দোয়া করে দিলেন। এই অবস্থায় পরীক্ষা দিয়ে অস্থায়ী চাকুরী ম্যানেজারের বদৌলতে টিকে ছিলো ! সাতমাসের ছুটি মঞ্জুর ও বেতনও পেয়ে যান! আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিটাও হাতছাড়া হয় নি। যেন সোনায় সোহাগা ! পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো , দুইজন প্রথমশ্রেণী চারজন আপারসেকেন্ড ক্লাশ আর বাকি চারজন সেকেন্ড ক্লাশ ! তিনি পেলেন আপার সেকেন্ড ক্লাশ চতুর্থ ! অথার্ৎ দশজনের মধ্যে ষষ্ঠ ( বিশুদ্ধ গণিত ) ! পরে আবার স্যারের কদমবুসী করেন। স্যারের জন্য নিয়ে যান মিষ্টির প্যাকেট আর স্যারকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা। উনি এখনও সেই কবিতা অন্যকে পড়ে শুনিয়ে বলেন , “আমার এক পাগল ছাত্রের কাজ !”
হ্যাঁ প্রিয় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুগণ এতক্ষণ যার কথা বললাম তিনি আমাদের সবার প্রিয়কবি মোহাম্মাদ ময়েজ উদ্দিন। আজকে আমাদের লেখক পরিচিতিতে থাকছেন বিশিষ্ট লেখক এবং ছড়াকার মোহাম্মাদ ময়েজ উদ্দিন ।
মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত নামোশংকরবাটি গ্রামে ৩০শে নভেম্বর ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রইসউদ্দিন মন্ডল এবং মাতা জয়নাব বিবির নয় সন্তানের মধ্যে কবি সবার ছোট। বর্তমানে তিনি ১৯৭১ সালে রাজারামপুর হামিদুল্লাহ হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞানে প্রথম বিভাগ এসএসসি , ১৯৭৩ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এইচএসসি , ১৯৭৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে বিএসসি ( অনার্স ), - একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে বিশুদ্ধ গণিতে দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এমএসসি শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি ১৯৭৭ সালের ১৭ জুলাই ফেরদৌস আরার (গৃহিণী) সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৬৩/১ এ, সোনালীবাগ, মগবাজার, ঢাকায় বসবাস করছেন।
কর্মজীবনের প্রথমেই সোনালী ব্যাংকের নবাবপুর ব্রাঞ্চে কেরানি হিসেবে জোগদান করেন( ১৯৭৮--১৯৮০ সাল )। পরবর্তীতে ১৯৮০-১৯৮৯ পর্যন্ত বি এ এফ শাহিন কলেজ এ গণিত প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ ১৯৮৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত মগবাজারস্থ ন্যাশনাল ব্যাংক পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
ব্যাক্তি হিসেবে যেমন একজন সফল মানুষ। তেমনি পিতা হিসেবেও একজন সফল মানুষ। তিনি চার সন্তানের জনক। মেয়ে এনসিসি ব্যাংকের অফিসার। বড় ছেলে সামিট কমিউনিকেশনের ম্যানেজার। মেজছেলে ব্র্যাক বিশববিদ্যালয়ের লেকচারার। বর্তমানে স্কলারশিপ নিয়ে অ্যামেরিকার লুইসিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। ছোটছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এতকিছু করার পরেও তিনি এখনপর্যন্ত ঢাকা বা নিজ জেলায় বাড়ি করেন নি। নিজের শ্রম এবং অর্থ সন্তানদের মানুষ করতেই ব্যয় করেছেন। সততা এবং বিশ্বাসপরায়নতা জীবন সংগ্রামে শূন্য থেকে উঠে এসেছেন উন্নতির চুড়ায়। শৈশবে তিনি শান্ত, সরল, সত্যবাদী, ধর্মভীরু, বাগ্মী ছিলেন। দরিদ্রতার মোকাবেলা করে মেধার জোরে বৃত্তি নিয়ে টিউশনি করে লেখাপড়া করেন।
তার প্রথম লেখা প্রকাশ পায় ১৯৮১ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে। মাঝখানে অনেক বছর অনিয়মিত ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ফেওসবুকের মাধ্যমে আবার নিয়মিত হয়েছেন। এরই মধ্যে যৌথকাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে- শতমঞ্জরী কাব্যগ্রন্থ –(২, ৩, ৪, ৬, ৭), হৃদিপদ্ম , আলোছায়া , সিকক।
একক কাব্যগ্রন্থ -- ষড় হৃষীক ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমীর বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।
আগামী ২০১৭ বইমেলায় কবির “গোধূলির সোনারোদ” নামে একটি বই প্রকাশ হবে।
বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাতেও তিনি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। এরমধ্যে- ভোরের প্রতিভা , সাময়িকী, তুলি বিডিনিউজ ডট কম, বাংলা কবিতা অনলাইন।
কবি সততা, ইসলাম, সৎজীবনযাপন করতে অভ্যস্থ। তিনি অনৈতিকতা, অনিয়ম, অসত্যের বিরুদ্ধে। আর নি:স্ব-অসহায় মানবতার পক্ষে লিখতে বেশি ভালবাসেন।
কবির অনেক লেখায় পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়-
“পচাত্তরে শোক বিরহ সব সয়েছে প্রাণে
একাশিতে আরেক কাণ্ড হৃদয় ছিঁড়ে টানে ।
নব্বই সালে একনায়কের তুমুল বাড়াবাড়ি
নব্বই সালে একনায়কের তুমুল বাড়াবাড়ি
বারো-তেরো কোন সালই যায়নি নয়ন ছাড়ি”।
(ভাগ্য ছালা,মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন)
কবির জীবনের বয়ে আসুক অনাবিল শান্তি এবং সমৃদ্ধি। কলম জ্বলে উঠুক সত্য এবং ন্যায়ের পথে। এইকামনায় বিদায় নিচ্ছি। আগামীতে হাজির হবো অন্যকোন লেখকের লেখক পরিচিতি নিয়ে। ভালো থাকবেন, সুন্দর থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ