গণতন্ত্রের উত্থান পতন : প্রাসঙ্গিক বিষয়
-আবু বকর মুহাম্মদ সালেহ
এক. হিটলার, মুসোলিনী, নিরো, স্টালিন, নমরুদ ও ফেরাউন সমাচার :
উপরে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তারা ছাড়াও এরকম অনেক বিশ্বনিন্দিত ও কুখ্যাত লোক ছিলেন বা এখনও আছেন তারাও কিন্তু দেখতে শুনতে চলতে বলতে সাধারণ মানুষের মতই। এই লোকগুলোর ইতিহাস বয়ান করা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। সে ইতিহাস মোটামুটি সকলেরই জানা। আমরা একটি বিষয় আলোচনা করতে চাই তা হলো এই মানুষগুলো ক্ষমতা পেয়ে সেই ক্ষমতার চরম অপব্যবহার কেন করেন? এই ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে সর্বোচ্চ তার জীবদ্দশা পর্যন্ত। এরা কেউ শারীরিকভাবে অমর হয়নি বরং ইতিহাসের পাতায় তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি এখনও বমি উদ্রেককারী দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং সভ্যতা যতদিন টিকে থাকবে ততদিনই সেই দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে সন্দেহ নেই।
এদের এই অসীম ক্ষমতার উৎস কি? এক কথায় উত্তর হলো, জনগণ। বর্তমান বিশ্ব পরিচালনা করার সর্বশেষ দর্শন গণতন্ত্রও যেটার স্বীকৃতি দিয়েছে। গণতন্ত্রের মতে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আগে রাজা বাদশাহরা ভোটে নির্বাচিত হত না এটা ঠিক কিন্তু তাদের কি কেউ সমর্থন (ভোট) দিত না? ইতিহাস খুঁজে দেখলে উত্তর পেয়ে যাবেন। এদের কারো ৪টা হাত ৩টা পা কিংবা ২টা করে মাথা ছিলনা। তা সত্তে¡ও একজন মানুষ কোটি মানুষের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসত আর বেচারা কলুর বলদ জনগণ সেই বোঝা টেনে চলত অবিরাম। শুধু বোঝাই টানতনা বরং টানতে টানতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ত তখন পিঠের উপর পড়ত রাজা-বাদশাহদের চাবুক। সেই চাবুকের আঘাতে জনগণের পিঠের চামড়া কেটে গিয়ে রক্ত ঝরত। কিন্তু জনগণের কিছুই করার ছিলনা। রাজা বাদশারা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হলেও জনগণের চোখ আছে কিন্তু দেখতে পায়না, কান আছে শুনতে পায়না, মুখ আছে বলতে পারেনা, হাত আছে কিন্তু সালাম ঠোকা আর রাজার ভান্ডার ভর্তি করার জন্য ফসল ফলানো ছাড়া অন্য কোন কাজেও যে হাত ব্যবহার করা যায় তা জানেনা, মাথা আছে কিন্তু তা উঁচু করে রাখার চেয়ে কুর্নিশ করতেই ব্যবহার হত বেশি।
এই জনগণ মনে করত এটাই তাদের ভাগ্য লিপি। সভ্যতা উন্নত হওয়ার পর সভ্যতার কর্মচারীরা একবারও ভাবল না এটা অন্যায়। তারা জনগণকে আরও বেশী ক্ষমতা দিতে চাইল। তাই তারা দিল একটি ব্যবস্থা। তারই নাম গণতন্ত্র। এখানে বলা হলো রাজা বাদশারা ঠিকই তোমাদের শাসন করবে কিন্তু তাদেরকে তোমরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল আগের রাজা বাদশারা মানুষকে শাসন করত এবং বর্তমানের নির্বাচিত রাজা-রানীরাও জনগণকে শাসন করে। তাই তো তাদেরকে বলা হয় শাসক। আগে মানুষ ছিল প্রজা এখন আমাদের পদন্নোতি হয়েছে এখন আমরা হয়েগেছি জনগণ। রাজা বাদশা, রানী আর বর্তমানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শাসকই রয়ে গেছেন। মজার বিষয় হল তারা যেমন আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ আমরাও তেমনি আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ। তাহলে একজন মানুষ কেন লক্ষ কোটি মানুষকে শাসক করবে? যে সভ্যতা বা দর্শন এই অধিকার তাদেরকে দিল সেই সভ্যতা বা দর্শনকে সভ্যতা বলা যায় নাকি এটা সবচেয়ে বড় অসভ্যতা? বিবেকবান পাঠকই নির্ধারণ করুন কোনটা সঠিক?
আর একটি বিষয় হল তারা যে অধিকার বলে মানুষকে শাসন করে তাঁকে বলা হয় আইন বর্তমানে যার নাম সংবিধান, সেটাও তারা নিজেরা নিজেদের সুবিধা ও ইচ্ছেমত বানিয়ে নেয়।
তারা যদিও বলে জনগণই ক্ষমতার উৎস। কিন্তু ক্ষমতার উৎস জনগণ এই জ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগেও জানেনা কেন তারা শাসিত হবে আর তাদের স্বাধীনভাবে মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি-না? সেই শিক্ষাটা তারা সবাই কি আজও পেয়েছে?
নীচের দিকে আমরা জনগণ আমাদের উপরে শাসক শ্রেণি। লক্ষ করুন জনগণের মধ্যে ভ্যান চালক, কুলি, মজুর ও মুদী দোকানী থেকে শুরু করে সবাইকে নিজের পরিশ্রমে আয় রোজগার করে খেতে হয়। এমন কি একজন ভিক্ষুককেও নিজের গতর খাটিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। তার মানে জনগণ খায় জনগণেরটা তা হলে শাসন করার গোসাই কেন সরকার, রাজা, বাদশাহ বা রানীর হবে?
এই যে কতিপয় লোক আমাদেরকে শাসন করছে আর জনগণ করছে রাজা রানী ও বাদশাদের দাসত্ব বা গোলামী। ইসলামী পরিভাষায় এটাকেই বলা হয় “ইবাদত”। মজার বিষয় হল এটা মেনে নিয়েছে আলেম ওলামা ইমাম মাশায়েখ ও পীর সাহেবগণ। যদি বলা হয় আপনাদেরকে সরকার শাসন করছে তাহলে আপত্তি নেই কিন্তু যদি বলা আপনারা সরকারের ইবাদত করছেন তাহলে এটা কিন্তু কেউই মানবেন না।
পরিষাভায় কারুকার্যতায় আমরা প্রকৃত পক্ষে সরকারের সত্ত¡ার ও তাদের মনগড়া আইনের দাসত্ব করছি। কেউ চেষ্টা করে দেখতে পারেন যে কোন একটা আইনকে অস্বীকার করলে কি হয়? আর বাংলাদেশের সংবিধানে সংবিধান লঙ্ঘণকারীদের মৃত্যুদন্ডের বিধানও রয়েছে।
গণতন্ত্রও অবশেষে পরাজিত। প্রবক্তাগণ একটু ভেবে দেখবেন কি?
সাম্রাজ্যবাদ, রাজা বাদশা ও রানীদের শাসন কুখ্যাত এক নায়কদের যুগ পেরিয়ে আমরা সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করে পৌঁছেছি গণতন্ত্রের যুগে। পৃথিবীর অনেক দেশে মান সম্পন্ন গণতন্ত্র রয়েছে এবং অনেক দে
-আবু বকর মুহাম্মদ সালেহ
এক. হিটলার, মুসোলিনী, নিরো, স্টালিন, নমরুদ ও ফেরাউন সমাচার :
উপরে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তারা ছাড়াও এরকম অনেক বিশ্বনিন্দিত ও কুখ্যাত লোক ছিলেন বা এখনও আছেন তারাও কিন্তু দেখতে শুনতে চলতে বলতে সাধারণ মানুষের মতই। এই লোকগুলোর ইতিহাস বয়ান করা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। সে ইতিহাস মোটামুটি সকলেরই জানা। আমরা একটি বিষয় আলোচনা করতে চাই তা হলো এই মানুষগুলো ক্ষমতা পেয়ে সেই ক্ষমতার চরম অপব্যবহার কেন করেন? এই ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে সর্বোচ্চ তার জীবদ্দশা পর্যন্ত। এরা কেউ শারীরিকভাবে অমর হয়নি বরং ইতিহাসের পাতায় তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি এখনও বমি উদ্রেককারী দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং সভ্যতা যতদিন টিকে থাকবে ততদিনই সেই দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে সন্দেহ নেই।
এদের এই অসীম ক্ষমতার উৎস কি? এক কথায় উত্তর হলো, জনগণ। বর্তমান বিশ্ব পরিচালনা করার সর্বশেষ দর্শন গণতন্ত্রও যেটার স্বীকৃতি দিয়েছে। গণতন্ত্রের মতে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। আগে রাজা বাদশাহরা ভোটে নির্বাচিত হত না এটা ঠিক কিন্তু তাদের কি কেউ সমর্থন (ভোট) দিত না? ইতিহাস খুঁজে দেখলে উত্তর পেয়ে যাবেন। এদের কারো ৪টা হাত ৩টা পা কিংবা ২টা করে মাথা ছিলনা। তা সত্তে¡ও একজন মানুষ কোটি মানুষের ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসত আর বেচারা কলুর বলদ জনগণ সেই বোঝা টেনে চলত অবিরাম। শুধু বোঝাই টানতনা বরং টানতে টানতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ত তখন পিঠের উপর পড়ত রাজা-বাদশাহদের চাবুক। সেই চাবুকের আঘাতে জনগণের পিঠের চামড়া কেটে গিয়ে রক্ত ঝরত। কিন্তু জনগণের কিছুই করার ছিলনা। রাজা বাদশারা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হলেও জনগণের চোখ আছে কিন্তু দেখতে পায়না, কান আছে শুনতে পায়না, মুখ আছে বলতে পারেনা, হাত আছে কিন্তু সালাম ঠোকা আর রাজার ভান্ডার ভর্তি করার জন্য ফসল ফলানো ছাড়া অন্য কোন কাজেও যে হাত ব্যবহার করা যায় তা জানেনা, মাথা আছে কিন্তু তা উঁচু করে রাখার চেয়ে কুর্নিশ করতেই ব্যবহার হত বেশি।
এই জনগণ মনে করত এটাই তাদের ভাগ্য লিপি। সভ্যতা উন্নত হওয়ার পর সভ্যতার কর্মচারীরা একবারও ভাবল না এটা অন্যায়। তারা জনগণকে আরও বেশী ক্ষমতা দিতে চাইল। তাই তারা দিল একটি ব্যবস্থা। তারই নাম গণতন্ত্র। এখানে বলা হলো রাজা বাদশারা ঠিকই তোমাদের শাসন করবে কিন্তু তাদেরকে তোমরাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল আগের রাজা বাদশারা মানুষকে শাসন করত এবং বর্তমানের নির্বাচিত রাজা-রানীরাও জনগণকে শাসন করে। তাই তো তাদেরকে বলা হয় শাসক। আগে মানুষ ছিল প্রজা এখন আমাদের পদন্নোতি হয়েছে এখন আমরা হয়েগেছি জনগণ। রাজা বাদশা, রানী আর বর্তমানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শাসকই রয়ে গেছেন। মজার বিষয় হল তারা যেমন আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ আমরাও তেমনি আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ। তাহলে একজন মানুষ কেন লক্ষ কোটি মানুষকে শাসক করবে? যে সভ্যতা বা দর্শন এই অধিকার তাদেরকে দিল সেই সভ্যতা বা দর্শনকে সভ্যতা বলা যায় নাকি এটা সবচেয়ে বড় অসভ্যতা? বিবেকবান পাঠকই নির্ধারণ করুন কোনটা সঠিক?
আর একটি বিষয় হল তারা যে অধিকার বলে মানুষকে শাসন করে তাঁকে বলা হয় আইন বর্তমানে যার নাম সংবিধান, সেটাও তারা নিজেরা নিজেদের সুবিধা ও ইচ্ছেমত বানিয়ে নেয়।
তারা যদিও বলে জনগণই ক্ষমতার উৎস। কিন্তু ক্ষমতার উৎস জনগণ এই জ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগেও জানেনা কেন তারা শাসিত হবে আর তাদের স্বাধীনভাবে মৌলিক চাহিদা পূরণ করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি-না? সেই শিক্ষাটা তারা সবাই কি আজও পেয়েছে?
নীচের দিকে আমরা জনগণ আমাদের উপরে শাসক শ্রেণি। লক্ষ করুন জনগণের মধ্যে ভ্যান চালক, কুলি, মজুর ও মুদী দোকানী থেকে শুরু করে সবাইকে নিজের পরিশ্রমে আয় রোজগার করে খেতে হয়। এমন কি একজন ভিক্ষুককেও নিজের গতর খাটিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। তার মানে জনগণ খায় জনগণেরটা তা হলে শাসন করার গোসাই কেন সরকার, রাজা, বাদশাহ বা রানীর হবে?
এই যে কতিপয় লোক আমাদেরকে শাসন করছে আর জনগণ করছে রাজা রানী ও বাদশাদের দাসত্ব বা গোলামী। ইসলামী পরিভাষায় এটাকেই বলা হয় “ইবাদত”। মজার বিষয় হল এটা মেনে নিয়েছে আলেম ওলামা ইমাম মাশায়েখ ও পীর সাহেবগণ। যদি বলা হয় আপনাদেরকে সরকার শাসন করছে তাহলে আপত্তি নেই কিন্তু যদি বলা আপনারা সরকারের ইবাদত করছেন তাহলে এটা কিন্তু কেউই মানবেন না।
পরিষাভায় কারুকার্যতায় আমরা প্রকৃত পক্ষে সরকারের সত্ত¡ার ও তাদের মনগড়া আইনের দাসত্ব করছি। কেউ চেষ্টা করে দেখতে পারেন যে কোন একটা আইনকে অস্বীকার করলে কি হয়? আর বাংলাদেশের সংবিধানে সংবিধান লঙ্ঘণকারীদের মৃত্যুদন্ডের বিধানও রয়েছে।
গণতন্ত্রও অবশেষে পরাজিত। প্রবক্তাগণ একটু ভেবে দেখবেন কি?
সাম্রাজ্যবাদ, রাজা বাদশা ও রানীদের শাসন কুখ্যাত এক নায়কদের যুগ পেরিয়ে আমরা সভ্যতার উৎকর্ষ সাধন করে পৌঁছেছি গণতন্ত্রের যুগে। পৃথিবীর অনেক দেশে মান সম্পন্ন গণতন্ত্র রয়েছে এবং অনেক দে