বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ

লেখিকা পরিচিতি 

.
প্রিয় সাহিত্যপ্রেমীবন্ধুগণ,
আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] সুস্থধারার নবীনলেখকদের প্লাটফর্ম । পরিষদ সাপ্তাহিক এবং মাসিক বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করেছে লেখক/লেখিকা পরিচিতি। এরই সাথে বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] যাদের পরিশ্রম, মেধায়, পরামর্শে পরিষদ এতদূর এসেছে, আমরা চাচ্ছি সবার মাঝে তাদের পুরিচিতিও তুলে ধরতে। এইক্ষেত্রে আমরা যেমন একজন নবীনলেখকসম্পর্কে জানতে পারবো। তেমনই লেখকদের উৎসাহিতও করা যাবে। আমাদের আজকের লেখক পরিচিতিতে থাকছেন কবি জয়নব জোনাকি।
.
কবি জয়নব জোনাকি।
গ্রামে বেড়াতে গিয়ে অবসর সময়ে বাগানের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। চাচাতো বোনদের সাথে নিয়ে বাগান করার জন্য দাদির বাঁশঝাড় থেকে বড় বড় অনেকগুলো বাঁশ একাএকাই কেটে এনে খুব অল্পসময়ে ফেন্স বানিয়ে বাগানে লাগাতে লাগলেন। এমন সময় তার দাদি দেখে ফেলেন। তখন আর যায় কোথায়? আচ্ছামতো বকা শুরু করলেন। মেয়ে মানুষ হয়ে বাঁশঝাড়ের বাঁশ কেটে বাগানের বেড়া বানাচ্ছে? যদি বাঁশ কাটতে গিয়ে হাত-পা কেটে যেতো তখন? এমনভাবে শৈশব কেটেছে কবি জয়নব জোনাকির। সেইবাগানের একটি বাগান বিলাস ও গন্ধরাজ ফুলের গাছ এখনও স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবির ছোট্টবেলার সেইবাগানে। অবশ্য এখন বাগানে সেই বাঁশেরফেন্সের পরিবর্তে লোহার গ্রীলের রেলিং হয়েছে ।
.
পুরোনাম সাবিহা তাবাসসুম জয়নব। তবে তিনি জয়নব জোনাকি নামেই লিখে আসছেন। পিতা-আলহাজ্ব মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, মাতা- মিসেস সেলিনা আবেদিন। পাঁচভাই আর তিন বোন। বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। পৈতৃকভূমি লক্ষ্মীপুর জেলার অন্তর্গত রামগঞ্জ থানার নিচহরা গ্রামে হলেও জন্মথেকেই তিনি ঢাকায় বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মিশুক ছিলেন। অন্যদিকে চুপচাপ থাকাও পছন্দ করতেন। মনের কথাগুলোকে খাতায় সুন্দর করে লিখে রাখতেন। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্পষ্টভাষী। নিজের মনের কথা এবং পারিবারিক বিভিন্ন অবস্থার প্রতিবাদ নিয়েই তার লেখালেখি শুরু।
.
তিনি রামগঞ্জ থেকে এস এস সি শেষ করেন। এখন বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি ( BIU) থেকে ইসলামিক স্টাডিজ-এ অধ্যয়নরত।
প্রচারবিমুখ হওয়ার কারণে তিনি তার কোন লেখা-ই পত্রিকায় প্রকাশ করার চেষ্টা করেননি। এইপর্যন্ত ২/৩টি ম্যাগাজিন ও যৌথকাব্যগ্রন্থে তার লেখা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি একজন বিপ্লবীধারার লেখিকা। এইলেখিকার কাছে সমাজের অসঙ্গতি ও জীবনঘনিষ্ঠ লেখা-ই প্রাধান্য পায় বেশি। সমাজকে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়েই তিনি তার লেখার ধারা অব্যাহত রাখতে চান। লেখার সন্মাননা স্বরূপ তিনি পেয়েছেন ঝাল সৃজনশীল ছড়াচর্চা কেন্দ্রের শ্রেষ্ঠ ছড়াকারে পুরস্কার।
.
মানুষের জীবনের হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ নিয়ে তিনি লিখেছেন অসাধারণ সব লেখা। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে মানুষের হৃদয়ের গভীরের কথা। যেন মনে হবে এইপ্রেম আমারই। এইব্যথা আমারই। তেমনই একটি লেখা হল-
.
দ্রোহের জীবন চলছে কারো করছে সুখের অভিনয়,
হাসির মাঝেই কষ্টলুকায় রংমাখানো ছবি নয়।
সবার সুখে সুখখুঁজে নেয় পাথর বুকে চাপিয়ে,
মনের চোখের অশ্রু ঝরে হৃদয়টাকে কাঁপিয়ে।
(কবিতা-পাথর চাপা বুক,-জয়নব জোনাকি)
.
গদ্যকবিতাতেও কবির হাত বেশ পাকা। তিনি লিখেছেন-
.
হঠাৎ যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে
নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না
কোথাও যেন খুব নৃশংস কিছু ঘটে চলেছে
জানালার সব কপাট খুলে দিয়েছি
তবুও যেন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়েই আসছে।
মুহূর্তেই তোমাদের সবার কথা মনের আয়নায়
ভেসে উঠছে। সবাই ভালো আছোতো !
নাহ ! কোন ভাবেই টিকতে পারছিলাম না
একটু নিঃশ্বাস নিতে নির্মলবায়ু পেতে
খোলাআকাশের নিচে ছুটে গিয়েছি
কিছুদুর যেতেই দেখি পৃথিবীর দেয়ালের
ঠিক মাঝখানেএক বিশাল ফাটল ধরেছে
শ্যাওলা জন্মেছে।
স্যাঁতস্যাঁতে একটা ভূতুড়ে পরিবেশ
সবুজ ঘাসের উপর রক্তের প্রলেপ
(কবিতা-ফাটল,জয়নব জোনাকি)
.
অণুকথা সিরিজে তিনি লেখেন দারুণ দারুণ সব ছড়া। তিনি কুরবানি নিয়ে লিখেছেন-
.
কুরবানিকে ভাবছে যারা শুধুই কেবল উৎসব,
দেখতে মানুষ হলেও তারা বিবেকহারা ভূত সব।
কুরবানি নয় গরু-খাসী জবাই করে খাওয়া,
ত্যাগের পথে খুনঝরিয়ে প্রভুর দিদার পাওয়া।
জানতে হবে মানতে হবে কুরবানি কী কারণ,
লোকদেখানো ইবাদতে করতে হবে বারণ।
.
মানুষের কথা ও কাজের অসঙ্গতি নিয়ে তিনি লিখেছেন—
.
যেধরা সেজেছিলো স্রষ্টার বুননে,
সেধরা কড়াই আজ জ্বলন্ত উনুনে।
মশগুল হয়ে আছে অশান্ত ফাগুনে।
ফাটল ধরেছে ঠিক পৃথিবীর দেয়ালে,
রক্তে হোলিখেলে স্বার্থের খেয়ালে।
(ছড়া--স্বার্থের খেয়ালে,জয়নব জোনাকি)
.
তিনি বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ[BPSP] এর একজন এডমিন। পরিষদের প্রায় সূচনালগ্ন থেকে পাশে আছেন। পরিষদকে এগিয়ে নিতে দিয়েছেন অনেক শ্রম। বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের পক্ষথেকে আপুর জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
আজ এই পর্যন্তই আগামীতে আমরা হাজির হবো অন্যকোন লেখক পরিচিতি নিয়ে। ততদিন ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের সাথেই থাকুন।

 
Top