’২১শে বইমেলা২০১৭’ কাব্য সংকলনের জন্য কবিতা আহ্বান !!!! ______________________ প্রিয় নবীন প্রবীণ কবি ভাই বোন বন্ধ...
সেরা ছড়াকার :: বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর পর্ব-১০৫
পন্ডশ্রমের ছড়া
মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন
চলো লিখি ছড়াআবুজার গিফারী নাঈম
খুকুর বিয়ে
আব্দুল আজিজ মিঞাজী
★ফলাফল★ প্রিয় লেখকলেখিকা বন্ধুগণ, আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ, আশারাখি সবাই ভাল আছেন। হাজির হলাম বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য ...
তরুণ গল্পকার মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন এর গল্প ঈদের কেনাকাটা
উৎসর্গ: (পৃথিবীর সকল মধ্যবিত্তদের)
মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন
-------------------------------------------
ঈদ আসতে আর তেমন দেরি নাই । হাতেগোনে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি । পরিবারের সবাই বায়না ধরল, আমাদের ঈদের কাপড় চাই । সবাই কাপড় ক্রয় করে ফেলেছে । এমনকি পাশের ফ্লাটের ছোট্ট মেয়েটির সহ সবার জামা ক্রয় করা হয়ে গেছে । তাদের গুলো কই ?
রাতে বাসায় আসলে পাশের ফ্লাটের ছেলে-মেয়েদের কথাগুলো কান দিয়ে শুনে । দিন যত গনিয়ে আসছে চিন্তা ততই বাড়তে লাগল ।
'
সাখাওয়াত বাবু একটি রেষ্টুরেন্টে চাকরি করে । অল্প বেতন (৫,০০০-৬,০০০) হাজার টাকা । গত মাসে রেষ্টুরেন্ট চুরি হওয়াই, হয়ত এবার ঈদের বোনাসও কপালে জুটবেনা ।
আবার আদরের ছোট্ট ছেলেটি নির্দিষ্ট করে দিছে তার নীল পাঞ্জাবী লাগবে । ছোট ছেলেটির কথা শুনে বুকটা যেন দুরুদুরু করতে লাগল । ছোট ছেলটির বায়না অন্যদিকে পরিবারের প্রয়োজনীয় সকল খরচ কিভাবে সামান্য বেতন দিয়ে সামাল দিবে তা ভাবছে ।
পরদিন, অল্প বেতনের টাকা নিয়ে বাসায় ফিরল ।
বাসায় আসলে ছেলেটি জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে ।
আব্বু, আমার পাঞ্জাবী কই ?
সাখাওয়াত বাবু লজ্জিত কন্ঠে বলতে থাকে, আব্বু আজকে অনেক কাজ ছিল । তাই ক্রয় করা হল না । কালকে অবশ্যই নিয়ে আসব । এই বলে শান্তনা দেই ছেলেকে । অল্প টাকা দিয়ে কিভাবে সবার চাহিদা পূরণ করা যায় তা বসে বসে ভাবতে লাগল ।
স্বামীর দিকে তাকানোর পর স্ত্রী বুঝতে পারল, স্বামীর করুণ অবস্থা । স্ত্রী ও তার স্বামীকে আর কিছু বলেনি । চারদিকে উৎসবের আমেজ ।
সন্ধ্যার পর, রাত্রে চাঁদের আলোতে আলোকিত পুরো পৃথিবী । আকাশে মেঘের লুকোচুরি খেলা । চারদিকে নিস্তব্ধ । জোনাকিরা এলোমেলো করে চারদিকে আলো দিতে থাকে । জোনাকিরা তাদের মত করে চারদিকে ঘুড়ির ন্যায় ঘুরতে লাগল । পুরো পৃথিবী ঘুমের শহরে আচ্ছন্ন । চারদিকে কারও কোন সাড়া নেই । সাখাওয়াত বাবু এখনও জেগে আছে । আর এখন টিকটিকি আর ভয়ঙ্কর কালো মশা তার একমাত্র সঙ্গী । ভাবতে থাকে, কালকে কিভাবে সবার বায়না পূরণ করবে । ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েন সাখাওয়াত বাবু ।
সকাল হতে না হতে মুয়াজ্জিনের মধুর আযানের ধ্বনির সাথে সাথে ছেলে বলে ওঠল । আব্বু পাঞ্জাবী কিনতে যাবেন না ।
আর একটু সময় হোক । তারপর আমি, তোমার আম্মু, তুমি আমরা সবাই একসাথে বিকালবেলা বের হব ।
'
বিকালবেলা, মাথার উপরে সূর্যের ৩৫ (ডিগ্রি) তাপমাত্রা আস্তে পরছে । পায়ের নিচে চকচকে শুকনো বালিকণা । পায়ে একজুড়া ছেঁড়া চামড়ার জুতো । পরনে, গায়ে ময়লা একটা সাদা রঙের শার্ট আর ঝলছে যাওয়া একটা গাঢ় নীল রঙের একটি প্যান্ট । পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, পরিবারের সকলের জন্য জামা ক্রয়ের উদ্দেশ্য । পাশের মার্কেটের প্রথম দোকান থেকে দেখতে শুরু করল । দু'একটি দোকান দেখতে দেখতে ৩ নাম্বার দোকানে প্রবেশ করল । সেখানে গিয়ে ছেলেটির একটি নীল পাঞ্জাবী পছন্দ হল । ছেলে পাঞ্জাবীটি খুব পছন্দ করেছে । সবাই অনেক খুশি ছেলের পছন্দের জামা পাওয়া গেল । সাখাওয়াত বাবু জিজ্ঞেস করল,
- জামাটার দাম কত ?
- ২,০০০ টাকা এটি ।
দাম শুনে, সাখাওয়াত বাবুর মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মত ।
- কম হবেনা ভাই ?
- কত দিবেন আপনি ?
- ১,০০০ টাকা দেই ।
দোকানি পাশের অন্য দিক থেকে একটি জামা দেখিয়ে বলল.......
- এটা নেন । ১,০০০ টাকা রাখবো ।
- কেন ভাই এটা দেওয়া যাবে না ?
- এটা নিলে ১,৫০০ টাকা লাগবে ।
সাখাওয়াত বাবুর মুখটি শুকিয়ে গেল, সাথে তার স্ত্রীর ও ।
সাখাওয়াত বাবু আবার জিজ্ঞেস করল.....
- ভাই, এটা কি আর একটু কম হবে না ।
- না, একদাম ।
ছেলেটির মা অশ্রুমাখা কন্ঠে ধর্মের দোহায় দিয়ে ছেলেকে বলে উঠল.....
বাবা, জামাটা তোমার গায়ে মানাবেনা । আর ঈদের সময় কি মুসলমানের ছেলেদের হিন্দুদের দোকান থেকে কাপড় কিনে ঈদ করা যাবে । তখন ছেলেটির কাছে তার এক কুসংস্কারে বিশ্বাসী বন্ধুর কথা মনে পড়ল, সে বারবার বলত হিন্দুদের গায়ের সাথে লাগলেও মানুষ অপবিত্র হয়ে যাই । পরে আবার নতুন ভাবে গোসল করে পবিত্র হতে হয় । তাই হিন্দুদের দোকান থেকে কিভাবে কাপড় কিনে কিভাবে মুসলমানদের ঈদ করা যাই । এই বলে, শান্তনা দিয়ে মাথা নিচু করে মা ও সাখাওয়াত বাবু বের হয়ে যাই ।
চলো, আমরা অন্য দোকানে গিয়ে দেখি । তবুও ছেলেটি বারবার পিছনে পছন্দের জামার দিকে তাকিয়ে অন্য দোকানে প্রবেশ করল । সাখাওয়াত বাবু ছেলেটিকে বলল, দেখ এখান থেকে তেমার কোন জামা পছন্দ হয় কিনা ।
ছেলেটি মায়ের পাশ গিয়ে বলে, মা তুমি পছন্দ করে দাও । তখন পৃথিবীর অমূল্য ধন, বেহেস্তের প্রাপ্ত স্থান, দুঃখনী মায়ের আর বুঝতে বাকি রইল না । ছেলেটি ঐ পাঞ্জাবীকে অনেক পছন্দ করেছে । তবু মা বলে ওঠল, ভাই জামাটা দেখান ?
দোকানি জামাটিকে হাতে নিয়ে দিল । ছেলেটির মা জিজ্ঞেস করল.....
- দাম কত জামাটার ?
- ১,৫০০ টাকা দেন আপা !
- কম কত ?
- ১০০ কম দিয়েন ।
- না, ১,০০০ টাকা দিই ।
- না, আপা । আপনি আমাদের ক্যাশমেমো দেখতে পারেন । এই দামে আমাদের ক্রয়মূল্য নেই । এটা নিলে আপনার জন্য একদাম ১,৩০০ টাকা রাখব ।
- আর, কম হবে না ?
-না ।
তখন ছোট্ট ছেলেটির ও আর বুঝার জন্য সময় রইল না, বাবার পকেট শূণ্য ।
ছেলেটির মা জামা দেখিয়ে বলল....
- এটা তোর পছন্দ ।
- না, মা ।
- ছেলেটি পাশ থেকে অন্য জামা দেখিয়ে বলল, এটা নিব ।
- ছেলেটির মা জিজ্ঞেস করল, এইটার দাম কত ?
- ১,০০০ টাকা ।
- এটা তোমার পছন্দ হয় ।
- হুম ।
- আচ্ছা, মা বোকা কন্ঠে বলে উঠল....
- এটা প্যাক করেন ।
ছেলেটি বুঝতে পারে, কি কারণে পছন্দের জিনিস মানুষের কপালে জুটে না । বাবার অল্প টাকা দিয়ে বাসার সবাইকেও জামা দিতে হবে । তাই সে নিজেই কম দামী জামা ক্রয় করল ।
পরে, বড় মেয়ের জন্য একটা ১,০০০ টাকার থ্রি- পিস ও জুতো কিনলো ৫০০ টাকার । কথা বলতে বলতে পকেটের কথা চিন্তা করছে সাখাওয়াত বাবু ।
তার অনেক দিনের ইচ্ছে, এবার ঈদে বউটাকে দামি সুন্দর একটি শাড়ি কিনে উপহার দিবে । তিনি বাবা, আপনজনের মুখে হাসি ফুটাতে নিজ সুখকে মাটি চাপা দিয়ে দিল । মুহূর্তে তার নতুন শার্ট কেনার স্বপ্নকে মাটিতে মেরে ফেলল ।
স্ত্রীকে বলল.....
- দেখ ও, শাড়ি দেখ ।
- শাড়ি লাগবেনা বললাম না,
- বাবু সাহেব, একটু জোর দিয়ে বলল । যেটা বলছি সেটা শোন ।
সাখাওয়াত বাবু নিজেই স্ত্রীকে পছন্দ করে ২,৪৯০ টাকার একটি শাড়ি কিনে দিল । জামা-কাপড় সব শপিন করা শেষ ।
- স্ত্রী বলে উঠল.....
- তুমি শার্ট নিবে বললে না, নিবে না ।
- আমি পরে নিব ।
- টাকা নাই ?
- আছে তু । ছেলের জুতো কিনে বাঁচলে কিনবো ।
অন্য দোকানে গিয়ে দরকষাকষি করে ছেলের জন্য ৪৬০ টাকা দামে এক জুড়া জুতো ক্রয় করল । অবশিষ্ট পকেটে আর কত টাকা বাকি রইল সেটা চিন্তা করতে লাগল সাখাওয়াত বাবু । পকেটে আর মাত্র ৫৫০ টাকা অবশিষ্ট রইল ।
'
তখন রাত । যাবার গাড়ি ভাড়া চিন্তা করতেছে । ভাবছে, বাকি টাকা দিয়ে ঈদের আয়োজনটা ছেড়ে নেবে ।
নতুন মাস শুরু । বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এসে হাজির ।
ঈদের কেনাকাটা উৎসর্গ: (পৃথিবীর সকল মধ্যবিত্তদের) মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন ------------------------------------------- ঈদ আসতে আ...
তরুণ গল্পকার শিহাব এর গল্প অন্তরাত্মা
---
আলিফের বাবা জম্মুল শেখ আজি একখানা মোবাইল ফোন ক্রয় করিয়া আনিয়াছে,মোবাইল ফোন দেখিয়া আলিফের ফ্যাকাশে মনমরা চেহেরায় যেন অদ্ভুত এক আলোর বিচ্ছুরণের প্রচেষ্টা। স্কুলের পড়ার সময়ে বন্ধুদের অনেকের হাতে মোবাইল দেখিয়াছে কিন্তুু কখনো ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য তাহার হয় নাই।
আলিফ শেখ আজ জীবনেই প্রথম হয়তো কোন এক অপ্সরার সহিত মুক্ত কথনের যুদ্ধ করিলো।
অন্তরত্মা (পর্বঃ১)/ শিহাব আজি আলিফ শেখের মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হইয়াছে। বাড়ির পিছনের ঐ বটগাছের নিচে বসিয়া আলিফ শেখ একান্ত চিত্তে কি...
সেরা তিন গল্পকার ও তাদের গল্প :: বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর পর্ব ১০৪
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুরা আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
একটু দেরী হলেও নিয়ে আসলাম সাহিত্য আসর ১০৪তম পর্বের ফলাফল নিয়ে। গত পর্ব ছিলো গল্পের আসর আগের তুলনায় এই আসরের গল্পগুলো অনেকটা ভালো হয়েছে। আশা করি সামনে আরো ভালো হবে। আপনারা যারা লিখেননি সামনের পর্ব থেকে লিখবেন।সেরা তিনটি গল্পের লিংক দেয়া হলো। পরিষদের পক্ষ থেকে সেরা তিনজনসহ অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা।
-
শুভেচ্ছান্তে,
জয়নব জোনাকি।
এডমিন,
বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ।
-------------
১৭-১০-২০১৬ ইং
-মাহবুব এ রহমান
- - - - - - -
প্রতিদিনের মতো আজও দ্রুত বেডরুমে চলে গেল আফহাম।
'নাতিটা ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে। আগের মতো আর তেমন মেশেনা আমার সাথে। গল্প শোনার জন্য বায়নাও ধরেনা আজকাল' আফহামের নিরবে বেডরুমে চলে যাওয়া দেখে এসব ভাবছেন আফহামের দাদুমণি। পুরোনাম তানভির মোরশেদ আফহাম। পড়ে রাজধানীর একটি কেজি স্কুলে।সবে মাত্র ক্লাস ফোরে উঠেছে।বাসায় ওর আম্মু,দাদুমণি আর আব্বু।আগে গ্রামেই থাকতো ওরা। ঢাকায় আসার বছরখানেক হয়েছে। আব্বু চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে আর আম্মু প্রাইমারি স্কুলে। আব্বুর ঢাকায় বদলি হওয়ায় চলে আসেন সবাই। আম্মুও ট্রান্সফার হয়ে আসেন রাজধানীর একটি স্কুলে। ক্লাস টু পর্যন্ত গ্রামেই পড়ালেখা করেছে আফহাম। বরাবরই ভালোছাত্র ছিলো সে। কখনো পড়ালেখাতে কেউ তাকে পিছনে ফেলতে পারতো না। সব ক্লাসেই ১ম রোলটা ছিল আফহামের দখলে। গ্রামের আলো-বাতাসে বড়ো হয়েছে ও। গ্রামের বিকেলের চিত্রটা শহরের মতো নত মোটেই।গ্রামে আসরের পর শেষবিকেলে যখন মাথার উপর সূর্যটা ছড়াতো মিষ্টিরোদ। সবুজঘাসে চিকচিক মুচকিহেসে জানান দিতো বিদায় নেওয়ার। তখন রাখালেরা প্রস্তুতি নিতো বাড়ি ফেরার। গাঁয়ের সকল ছেলেরা বেরিয়ে পড়তো মাঠে।
কেউ ফুটবল কেউ ক্রিকেট আর কেউ গোল্লাছুট ইত্যাদি খেলায় মেতে উঠতো সবাই। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পূর্বেই বাড়ি ফিরতো সবাই। আফহামও মাঠে বেরুতো বিকেলে। আফহামের আম্মু ছেলেকে মাঠে যেতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু ওর দাদুমণির বকা দিতেন আম্মুকে। 'ছোটো একটা মানুষ ও। বিকেল হয়েছে একটু মাঠে যাবে, খেলবে, ঘুরবে। তা না করে সারাদিন শুধু পড়া পড়া। এমন করে ছেলেকে একঘেয়ে বানাবে। কারো সাথে মিশতে চাইবেনা পরে। নিজের মতো করে একটু না খেললে, ঘোরলে মানুষের সাথে মিশবে কেমন করে। সামাজিকতা শিখবে কেমনে!' দাদুমণির এমন বকুনিতে আম্মু মাঠে যেতে দিতে বাধ্য হোন।
আফহাম আর ওর বন্ধুরা মাঠের পাশের পুকুর পাড়ে দলবেঁধে গোল্লাছুট খেলতো। কিন্তু শহরে এমন নেই মোটেও। যে দিকে চোখ যায় শুধু যান্ত্রিক ব্যস্ততা। শহরে প্রথম আসার পর মোটেই ভালো লাগতো না আফহামের। চব্বিশ ঘন্টাই চার দেয়ালের ভেতর বন্দী। দাদুমণিই ওর একমাত্র সাথী। মাঝে মাঝে একা একা বাসার ছাদে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকতো ও। ছাদে টবের ফুলগাছে প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখতো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাশতা সেরে আম্মু দিয়ে যান স্কুলে। দুপুর দু'টোয় স্কুল বাস এনে নামিয়ে দিয়ে যায় বাসার নিচে। আম্মুর স্কুল ছুটি হয় বিকেল চারটায়। তাই বাসায় এসে দাদুমণির হাতে খাবার খেয়ে গল্প জুড়তো দাদুমণির সাথে। দাদুমণি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতেন ওকে। বাসার পাশে ছোট্ট একটু খালি জায়গা। দেখতে ছোটোখাটো একটি মাঠের মতো। বিকেলে বস্তির ছেলেরা বেরুতো ফুটবল নিয়ে। আফহামও যেতে চাইতো কিন্তু ওর আম্মু ওদের সাথে মিশতে দিতেন না ওকে। ধীরেধীরে মিশতে থাকে নতুন স্কুলের বন্ধুদের সাথে। জানতে পারে ওরা প্রত্যেকেই কেউ টিভি দেখে, কেউ ট্যাব অথবা ল্যাপটপে গেম খেলে বিকেলের সময়টা পার করে। তাই আফহাম আব্বুর কাছে বায়না ধরে তাকে একটি ট্যাব কিনে দেওয়ার জন্য। অনেক ভেবেচিন্তে এবং শেষে ওর দাদুমণির কথায় মাঝারি দামের একটি ওয়ালটন ট্যাব কিনে দেন ওকে। প্রতিদিন বিকেলে আসরের পর আম্মু ট্যাব বের করে দিতেন। গেম খেলত আফহাম। আবার সন্ধ্যার আগে নিয়ে নিতেন। এমন করেই চলছিলো। আফহামের ছোটোচাচ্চু আমেরিকায় থাকেন। একদিন ফোনে কথা বলতে আফহামকে বলেন 'শহরে এসেছো। আরো ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। যদি থ্রীতে তোমার ক্লাসে ফার্সট হতে পারো তাহলে একটা ল্যাপটপ পাঠাবো তোমার জন্য' আফহাম আরো মনদিয়ে শুরু করলো লেখাপড়া। বার্ষিক পরীক্ষা এলো। ভালো করে পরীক্ষা দিলো। এবং রীতিমতো অবাক করে দিয়ে ফার্সট হলো আফহাম। গ্রাম থেকে এসে নতুন একটি ছেলের এমন রেজাল্ট! তাই বিস্মিত ও খুশি শিক্ষকরাও। চাচ্চুও কথামতো ল্যাপটপ পাঠালেন আমেরিকা থেকে। আফহামের আম্মু ল্যাপটপটিও আগের মতো বিকেলে একটু ব্যবহার করতে দিতেন।
একদিন আফহাম স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে স্কুলে নিয়ে যায় ল্যাপটপটি। বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নতুন নতুন গেম। ল্যাপটপটা রাখা ছিলো বেডরুমেই। ওর আম্মু সিকিউরিটি লক লাগিয়ে রাখতেন। কিন্তু কেমন করে কোডটি জেনে জায় আফহাম। তাই আগের মতো স্কুল থেকে এসে দাদুমণির সাথে গল্প করে ঘুমোয় না। দুপুরের খাবার খেয়ে দ্রুত চলে যায় বেডরুমে। ঘুমের ভান করে ল্যাপটপে পড়ে থাকে গেম নিয়ে। দাদুমণি তেমন খেয়াল করেন না বেডরুমে। ভাবেন ও বড় হচ্ছে, নিজে নিজে ঘুমোতো শিখছে। এভাবে ঘুমকে ফাঁকি দিয়ে গেম খেলে সময় পার করে আফহাম। গেমের প্রতি দারুণ রকমের আসক্ত হয়ে পড়ে। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহটা কমতে থাকে দিন দিন। এমন করে চলে আসে ফোরের বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা দেয় আফহাম। রেজাল্ট বেরুনোর দিন ওর আব্বুও সাথে যান স্কুলে। এবারও ছেলে ফার্সট হবে এই আশায় এসেছিলেন স্কুলে। রেজাল্ট বেরুলো। আফহামের রোল সাত। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আফহামের আব্বুর। তাকান ওর মুখের দিকে। মনমরা হয়ে ছেলেকে নিয়ে পথ ধরেন বাসার।
আব্দুর রহিম
.
ধোঁয়াচ্ছন্ন একটা রুমের এক কোণে খালি টেবিলে একা বসে আছে মামুন। বারবার তাকাচ্ছে তার হাতঘড়ির দিকে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মাগরিবের নামাজ অনেক আগেই পড়েছে। এই অপেক্ষায় অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে সে। তারওপর অন্য তিন টেবিলে লোকজনের গ্যাদারিং আর মাথার উপরে ফ্যানটার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ বিরক্ত করছে তাকে। চোখে শুন্য দৃষ্টি।
.
টেবিলে ‘খট’ করে শব্দ হওয়ায় মামুন বুঝল নেহেরি এসে গেছে। চকিতে ওয়েটারের দিকে তাকালো সে। ওয়েটারও মিষ্টি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বললো- ফার্স্টক্লাস বস। খেয়েই দেখো ! মামুনও রাজ্যের সমস্ত মনোযোগ খাবারের দিকে নিবিষ্ট করতে চাইলো। কিন্তু পরমুহূর্তে মনে হলো এ ছেলেকে সে চেনে ! যেন তার সাথে বহুদিনের সম্পর্ক রয়েছে মামুনের। তাকে জিজ্ঞেস করার জন্য মুখ তুলে দেখে সে চলে গেছে। অপলক দৃষ্টিতে ওয়েটারের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।
.
হঠাৎ মামুনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এখন থেকে ৫ বছর আগের একটা পরিচিত মুখ ভেসে উঠলো তার সামনে। সদা হাস্যোজ্জল আতিক তার এক বছরের জুনিয়র। ক্লাস সিক্সের কথা। আতিক এতিম, মামার কাছে থাকতো আর একটা মাদ্রাসায় পড়ত। সে যেমন মিশুক ছিল তেমনি মামুনও মিশুক। তাই অন্য ক্লাসের হয়েও দুজনের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দুজনে অনেক সময় শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়াত। মামুন যেন স্বচক্ষে দেখছে সেই ইতিহাস ! একদিন আতিক মামুনকে বলল, খুব ক্ষিদে পেয়েছে, চলো দুজনে খেয়ে আসি। মামুন না করতে পারলোনা। গেটম্যানকে ফাঁকি দিয়ে পালাল দুজনে। ঘুরে ঘুরে জেলা স্কুলের সামনে চটপটিওয়ালার কাছে থামলো। এতক্ষণ নানা গল্প করেছে তারা। আতিক দুজনের জন্য চটপটি নিল। খেতে খেতে বলল, মামুন ! এ কয়দিনে আমার অনেক কলম হারিয়েছে। এজন্য মামার কাছে বকা খেয়েছি। কিন্তু আজকে যে কলমটা হারাল সেটা মামা রেজাল্টের দিন গিফট করেছিল। অনেক দামি।
.
কোন শালা যে চুরি করছে ! এর আগের কলমগুলো একটাও পাইনি কিন্তু এটা না পেলে আর ক্লাসে আসবোনা।
সেদিন মামুন কিছু বলতে পারেনি। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিল শুধু। কি বলবে তাকে ! তার কলম খোয়ানোর কারন অন্য কেউ নয়, মামুনই।
তার মাসখানেক আগের কথাও মনে পড়ল মামুনের। বিকালে প্রাইভেট টিউটরের রুমে মামুন সহ ফাইভের কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছে। আসলে অংক করতে দিয়ে স্যার গেছে নামাজ পড়তে। অংক করছে আর হাবিজাবি গল্পে মেতে আছে ওরা। ফাইভের জীবন মামুনকে বলল-
: তোমাকে একটা কাজ দিব। করে দিবে ?
: কি কাজ ?
: এই একজনের কলম লুকিয়ে ফেলতে হবে।
: কলম ? এটা কোন ব্যাপার হলো ??
: করবে তাহলে ?
: হ্যা, কিন্তু কার ?
: নিপুনের।
: তোমারই তো বন্ধু !!
: হ্যা, কিন্তু শালাকে মজা দেখাব ! খুব বেড়ে গেছে। স্যার অংক করতে দিলে ওর কলম থাকবেনা। আর আমরা ওকে কলম দিবনা। স্যার সাইজ করে দিবে ওকে।
: ঠিক আছে। দেখে নিও, কয়েকদিন ওর ব্যাগে কোন কলমই থাকবেনা !
: কি হয়েছে নিপুন ?
: আমার টাকা কে চুরি করেছে !
নিপুনের অশ্রুসজল চোখ দেখে মামুন খুব ব্যাথা পেল ! এ সে কি করেছে !! দুদিন আগে নিপুন এক ক্লাসমেটের কাছে টাকাটা ধার নিয়েছিল।
.
আজ ফেরত না দিলে তারা কয়েকজন মিলে খুব মারবে তাকে। পিরিয়ড শেষে অতি সন্তর্পণে মামুন টাকাটা তার ব্যাগে রেখে চলে এসেছিল। সেদিনই চুরি করেছিল আতিকের কলমটা। সেটা নিতে চায়নি কিন্তু দামি কলম হওয়ায় লোভ সামলাতে পারেনি।
.
তারপরে আর আতিককে কলমটা দিতে পারেনি মামুন। তাকে না জানিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এ সুযোগ আর পেলনা ! আতিকের ক্লাস আসা বন্ধ হয়ে গেল। দু' সপ্তাহ পর জানতে পারল আতিক খুব অসুস্থ।
সে হতাশ হয়ে গেল ! আতিকের কথা কি সত্যি হল ? আর আসবেনা ক্লাসে ? দেখা হবেনা কোনদিন ?
.
কিন্তু আজ আতিককে সামনাসামনি দেখে খুব লজ্জা করছে মামুনের। পরিচয় দিতেও মন সায় দিচ্ছেনা। যেন তার কৃতকর্ম তাকে পরিচয় দিতে বাঁধা দিচ্ছে ! খাবার শেষে উঠে দাঁড়ালো মামুন। বিল পরিশোধ করে বেরিয়ে গেল হোটেল থেকে।
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুরা আশা করি আপনারা ভালো আছেন। একটু দেরী হলেও নিয়ে আসলাম সাহিত্য আসর ১০৪তম পর্বের ফলাফল নিয়...
উম্মে হাবিবা রাহনুমার হেমন্তের দিনগুলো
হেমন্তের দিনগুলো
দুর্বাঘাসে জমা হওয়া শিশিরে পা চুবিয়ে কেটে যেতো শৈশবের হেমন্ত।
শরতের শেষের দিকে চাষীরা ধানের কচি চারায় ভরিয়ে রাখতো ক্ষেতের পর ক্ষেত। ঘন সবুজে মনে হতো খালি মাঠে বুঝি কেউ সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে।শরৎ শেষ হতে হতে ধানক্ষেতের সবুজ শিশুরা দুলতে দুলতে এগিয়ে যেতো পূর্ণ যৌবনের দিকে। মাঝে তাদের কৈশর। সেই কিশোরী ধানগাছগুলো প্রতিটি পাতার মাথায় কী সুন্দর শিশির নিয়ে বাতাসে দোল খেতো! প্রতি দুলনিতে শিশির বিন্দু গড়িয়ে পড়তো কিশোরীর গা বেয়ে,যেন নববধুর ঘোমটা দুলে পড়ছে মাথা থেকে।
অবাক হয়ে যেতাম যখন দেখতাম ধানক্ষেতে চিকচিক করে জ্বলতো লক্ষ সূর্য। পুরো ধানক্ষেতটাই যেনো আলোয় সজ্জিত।
তারপর ঘরে এসে শিশিরমাখা ঠোঁটে কুরান তেলাওয়াতে অন্তরটা এতো শীতল হয়ে যেতো!
প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ার কারণে আম্মাও রোজ এমন করতেন।
.
সকালের কাজ সেরে যখন মাদরাসায় ছুটতাম,তখন ইচ্ছে করেই ধানক্ষেতের আল দিয়ে দৌড়াতাম। ড্রেস ভিজত,ভিজে যেতো দুই পা,আর ধানগাছ ছুঁয়ে ভিজত দু'হাত।
পায়ে রাজ্যের ময়লা নিয়েও সে কি উচ্ছ্বাস আমাদের!
.
দুপুর থেকে দেখা যেতো ঝকঝকে মিঠা রোদ।
শীতের আঁচ থেকে বাঁচার জন্য পুকুরের যেখানে সবচেয়ে বেশী রোদ থাকতো সেখানে ২/৩ টা গাছ দিয়ে ঘাট বানাতাম।
বিকেলের রোদে আবার ছুটোছুটি,হৈ-হুল্লোড়।
.
ছোট্ট কাজিনের খেলার সাথী নেই বলে প্রায়ই মামার বাড়ী চলে যেতাম। ওখানকার বিস্তৃত মাঠ-ঘাট,খাল-বিল হয়ে উঠেছিল আমাদের চারণভূমি।
সকালে সূর্যোদয় আর সন্ধ্যায় পাখির নীড়ে ফেরা দেখতে ছুটে যেতাম মাঠের কাছে,বিলের কাছে। রাতের জোছনায় উঠোনে পাটি বিছিয়ে নানীর কাছে কত্তরকম গল্প শুনতাম!পান চিবুতে চিবুতে নানী শোনাতো যুদ্ধের কথা,দেশের কথা,গ্রামীন ঐতিহ্যের কথা।
নানীর পানের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে যেতাম।গল্পের ফাঁকে ফাঁকে দূরের দলবাঁধা কুকুরের ঘেউ-ঘেউ শব্দ শুনতে পেতাম। মাথার উপরে আমের বড়ো ডালটাতে বসে থাকা কাকাতুয়া লেজ নেড়ে উড়ে যেতো অপর ডালে,একটা কাঠবিড়ালী কুটুস-কাটুস ডাকতে ডাকতে ডুমুরগাছে ছুটে যেতো।পাশের ঝোঁপ থেকে আচমকা দৌঁড়ে পালাতো একটা শেয়াল,তারপর দূরের পাটিবনে গিয়ে ৪/৫ টা শেয়াল মিলে হুক্কা-হুয়া রবে চিৎকার জুড়ে দিতো। ততক্ষণে নানী একটা পান শেষ করে আরেকটা পানে চুন লাগাত জোছনার আলোয়।
একসময় পুকুরের দিক থেকে একটা শীতল হাওয়ায় দুলে উঠতো পেয়ারাগাছ।ঘুমিয়ে পড়তো ছোট্ট কাজিনটা। ঘন কুয়াশার আবরণ পড়তো নানীর চশমায়।গল্প শেষ হত। একটা বাদুড় ডানা ঝাপটিয়ে হারিয়ে যেতো দূরে কোথাও। ততক্ষণে দুয়ার এঁটে গভীর ঘুমে হারিয়ে যেতাম আমি ও। . . . .
হেমন্তের দিনগুলো উম্মে হাবিবা রাহনুমা . দুর্বাঘাসে জমা হওয়া শিশিরে পা চুবিয়ে কেটে যেতো শৈশবের হেমন্ত। শরতের শেষের দিকে চাষীরা ধা...
তরুণ কবি মাহবুব এ রহমানের ছোট গল্প :: ল্যাপটপ
-মাহবুব এ রহমান
- - - - - - -
প্রতিদিনের মতো আজও দ্রুত বেডরুমে চলে গেল আফহাম।
'নাতিটা ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে। আগের মতো আর তেমন মেশেনা আমার সাথে। গল্প শোনার জন্য বায়নাও ধরেনা আজকাল' আফহামের নিরবে বেডরুমে চলে যাওয়া দেখে এসব ভাবছেন আফহামের দাদুমণি। পুরোনাম তানভির মোরশেদ আফহাম। পড়ে রাজধানীর একটি কেজি স্কুলে।সবে মাত্র ক্লাস ফোরে উঠেছে।বাসায় ওর আম্মু,দাদুমণি আর আব্বু।আগে গ্রামেই থাকতো ওরা। ঢাকায় আসার বছরখানেক হয়েছে। আব্বু চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে আর আম্মু প্রাইমারি স্কুলে। আব্বুর ঢাকায় বদলি হওয়ায় চলে আসেন সবাই। আম্মুও ট্রান্সফার হয়ে আসেন রাজধানীর একটি স্কুলে। ক্লাস টু পর্যন্ত গ্রামেই পড়ালেখা করেছে আফহাম। বরাবরই ভালোছাত্র ছিলো সে। কখনো পড়ালেখাতে কেউ তাকে পিছনে ফেলতে পারতো না। সব ক্লাসেই ১ম রোলটা ছিল আফহামের দখলে। গ্রামের আলো-বাতাসে বড়ো হয়েছে ও। গ্রামের বিকেলের চিত্রটা শহরের মতো নত মোটেই।গ্রামে আসরের পর শেষবিকেলে যখন মাথার উপর সূর্যটা ছড়াতো মিষ্টিরোদ। সবুজঘাসে চিকচিক মুচকিহেসে জানান দিতো বিদায় নেওয়ার। তখন রাখালেরা প্রস্তুতি নিতো বাড়ি ফেরার। গাঁয়ের সকল ছেলেরা বেরিয়ে পড়তো মাঠে।
কেউ ফুটবল কেউ ক্রিকেট আর কেউ গোল্লাছুট ইত্যাদি খেলায় মেতে উঠতো সবাই। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পূর্বেই বাড়ি ফিরতো সবাই। আফহামও মাঠে বেরুতো বিকেলে। আফহামের আম্মু ছেলেকে মাঠে যেতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু ওর দাদুমণির বকা দিতেন আম্মুকে। 'ছোটো একটা মানুষ ও। বিকেল হয়েছে একটু মাঠে যাবে, খেলবে, ঘুরবে। তা না করে সারাদিন শুধু পড়া পড়া। এমন করে ছেলেকে একঘেয়ে বানাবে। কারো সাথে মিশতে চাইবেনা পরে। নিজের মতো করে একটু না খেললে, ঘোরলে মানুষের সাথে মিশবে কেমন করে। সামাজিকতা শিখবে কেমনে!' দাদুমণির এমন বকুনিতে আম্মু মাঠে যেতে দিতে বাধ্য হোন।
আফহাম আর ওর বন্ধুরা মাঠের পাশের পুকুর পাড়ে দলবেঁধে গোল্লাছুট খেলতো। কিন্তু শহরে এমন নেই মোটেও। যে দিকে চোখ যায় শুধু যান্ত্রিক ব্যস্ততা। শহরে প্রথম আসার পর মোটেই ভালো লাগতো না আফহামের। চব্বিশ ঘন্টাই চার দেয়ালের ভেতর বন্দী। দাদুমণিই ওর একমাত্র সাথী। মাঝে মাঝে একা একা বাসার ছাদে গিয়ে মনমরা হয়ে বসে থাকতো ও। ছাদে টবের ফুলগাছে প্রজাপতির ওড়াওড়ি দেখতো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাশতা সেরে আম্মু দিয়ে যান স্কুলে। দুপুর দু'টোয় স্কুল বাস এনে নামিয়ে দিয়ে যায় বাসার নিচে। আম্মুর স্কুল ছুটি হয় বিকেল চারটায়। তাই বাসায় এসে দাদুমণির হাতে খাবার খেয়ে গল্প জুড়তো দাদুমণির সাথে। দাদুমণি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতেন ওকে। বাসার পাশে ছোট্ট একটু খালি জায়গা। দেখতে ছোটোখাটো একটি মাঠের মতো। বিকেলে বস্তির ছেলেরা বেরুতো ফুটবল নিয়ে। আফহামও যেতে চাইতো কিন্তু ওর আম্মু ওদের সাথে মিশতে দিতেন না ওকে। ধীরেধীরে মিশতে থাকে নতুন স্কুলের বন্ধুদের সাথে। জানতে পারে ওরা প্রত্যেকেই কেউ টিভি দেখে, কেউ ট্যাব অথবা ল্যাপটপে গেম খেলে বিকেলের সময়টা পার করে। তাই আফহাম আব্বুর কাছে বায়না ধরে তাকে একটি ট্যাব কিনে দেওয়ার জন্য। অনেক ভেবেচিন্তে এবং শেষে ওর দাদুমণির কথায় মাঝারি দামের একটি ওয়ালটন ট্যাব কিনে দেন ওকে। প্রতিদিন বিকেলে আসরের পর আম্মু ট্যাব বের করে দিতেন। গেম খেলত আফহাম। আবার সন্ধ্যার আগে নিয়ে নিতেন। এমন করেই চলছিলো। আফহামের ছোটোচাচ্চু আমেরিকায় থাকেন। একদিন ফোনে কথা বলতে আফহামকে বলেন 'শহরে এসেছো। আরো ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে। যদি থ্রীতে তোমার ক্লাসে ফার্সট হতে পারো তাহলে একটা ল্যাপটপ পাঠাবো তোমার জন্য' আফহাম আরো মনদিয়ে শুরু করলো লেখাপড়া। বার্ষিক পরীক্ষা এলো। ভালো করে পরীক্ষা দিলো। এবং রীতিমতো অবাক করে দিয়ে ফার্সট হলো আফহাম। গ্রাম থেকে এসে নতুন একটি ছেলের এমন রেজাল্ট! তাই বিস্মিত ও খুশি শিক্ষকরাও। চাচ্চুও কথামতো ল্যাপটপ পাঠালেন আমেরিকা থেকে। আফহামের আম্মু ল্যাপটপটিও আগের মতো বিকেলে একটু ব্যবহার করতে দিতেন।
একদিন আফহাম স্কুল ব্যাগে লুকিয়ে স্কুলে নিয়ে যায় ল্যাপটপটি। বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নতুন নতুন গেম। ল্যাপটপটা রাখা ছিলো বেডরুমেই। ওর আম্মু সিকিউরিটি লক লাগিয়ে রাখতেন। কিন্তু কেমন করে কোডটি জেনে জায় আফহাম। তাই আগের মতো স্কুল থেকে এসে দাদুমণির সাথে গল্প করে ঘুমোয় না। দুপুরের খাবার খেয়ে দ্রুত চলে যায় বেডরুমে। ঘুমের ভান করে ল্যাপটপে পড়ে থাকে গেম নিয়ে। দাদুমণি তেমন খেয়াল করেন না বেডরুমে। ভাবেন ও বড় হচ্ছে, নিজে নিজে ঘুমোতো শিখছে। এভাবে ঘুমকে ফাঁকি দিয়ে গেম খেলে সময় পার করে আফহাম। গেমের প্রতি দারুণ রকমের আসক্ত হয়ে পড়ে। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহটা কমতে থাকে দিন দিন। এমন করে চলে আসে ফোরের বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা দেয় আফহাম। রেজাল্ট বেরুনোর দিন ওর আব্বুও সাথে যান স্কুলে। এবারও ছেলে ফার্সট হবে এই আশায় এসেছিলেন স্কুলে। রেজাল্ট বেরুলো। আফহামের রোল সাত। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আফহামের আব্বুর। তাকান ওর মুখের দিকে। মনমরা হয়ে ছেলেকে নিয়ে পথ ধরেন বাসার।
-------- ল্যাপটপ -মাহবুব এ রহমান - - - - - - - প্রতিদিনের মতো আজও দ্রুত বেডরুমে চলে গেল আফহাম। 'নাতিটা ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে...
ছোটগল্প লেখার নিয়মকানুন :: সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ছোটগল্প
ছোটগল্প লেখার নিয়মকানুন মাহবুব আলী সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ছোটগল্প। এর মাধ্যমে লেখক মানব জীবনের সেই অংশ তুলে ধরেন যা শাশ...
তরুণ কবি আনিচ আরমানের পাঁচটি কবিতা
তরুণ কবি আনিস আরমানের পাঁচটি কবিতা
বেঁচে থাক কবিতা
কবিরাই কাণ্ডারী
মন চায়
কবিতা আমার প্রাণ
কিশোরী
বেঁচে থাক কবিতা _______________ কবিতা আমার কবিতা তোমার কবিতা সবার জন্য কবিতার মাঝে কাটুক সময় তবেই জীবন ধন্য। আঘাতের পর আ...