চেতনা ব্যাবসা, ধর্ম ব্যাবসা, রাজনীতি
ব্যাবসা বলতে কি বুঝি, কোন কিছুকে পুঁজি করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের অাশায় সেই পুজিকে বিক্রি করা। সে পুঁজি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের। ব্যাবসা কি কীভাবে করে সকলেই বুঝি। কিন্তু ধর্ম ব্যাবসাটা কী? অর্থাৎ ধর্মকে ব্যাবহার করে বা পুঁজি করে কোন মুনাফা অর্জন করা, বা লাভবান হওয়া বা ফায়দা হাসিল করা।
চেতনা ব্যাবসাটা কী? কোন চেতনা / সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে বা ব্যাহার করে ফায়দা হাসিল করা। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে শব্দ দুটি বেশ আলোচিত। আমাদের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন যারা ধর্মীয় বা ইসলামী রাজনীতি করেন তারা ধর্ম ব্যাবসায়ী। তারা ধর্মকে পুঁজি করে বা ব্যাবহার
করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেন। তাদের মতে রাজনীতির সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা জিনিস। কিন্ত যারা এটা বলেন তারাও কোন না কোন রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার, প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। সবাই তাদের আলাদা আদর্শের জন্য সংগ্রাম করেন, ক্ষমতায় যেতে চেষ্টা করেন। এজন্য সবাই রাজনৈতিক পথ ব্যাবহার করেন। ইসলামও একটি মহান আদর্শ। এই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একদল মানুষও তো রাজনৈতিক পথ ব্যবহার করতে পারে। তাহলে তারা কেন ইসলামিক রাজনীতি করতে পারবে না। তাদেরকে কেন ধর্ম ব্যাবসায়ী বলা হয়। তারা তো আগা গোরাই ইসলামিক রাজনৈতিক দল। তাহলে যারা জিয়ার আদর্শ, মুজিব আদর্শ, লেনিন আদর্শ, মার্কস আদশ, চেতনা আদর্শ ইত্যাদি ধারণ করে রাজনীতি করেন তাদের কেন ঐসবের ব্যাবসায়ি বলা হয় না। তাহলে ধর্ম ব্যাবসা আর চেতনা ব্যাবসা কারা করে? যারা মূলত অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ দুটিকে ব্যাবহার করেন। কিছু রাজনৈতিক নেতা সারা বছর অাকাম কুকাম করে, ভোটের সময় পাঞ্জাবি, টুপি, তজবি হাতে নিয়ে মানুষকে ধোকা দিয়ে এই ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে ব্যাবহার করে ভোট চায়। এটা একটা ধর্ম ব্যাবসা। সে যে মানুষ না সেই মানুষের অভিনয় করা বা ভাব ধরা বা আশ্রয় নেয়া। আবার, একটি মাজার খুলে, বিভিন্ন ধোঁকাবাজি করে, ধর্মীয় সুরতে মানুষের থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কাজ। যার প্রকৃত ইসলামে কোন সম্পর্ক নাই। এটাও ধর্ম ব্যাবসা। অনেক পীর আছেন, তাদের দরবার ঘিরে ব্যাবসা করেন, তার দরবারে দান সদকা করলে বালা মসিবত দূর হবে বলে সরলমনা মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করেন। এটা ধর্ম ব্যাবসা। ইসলামের সাথেও এসবের সম্পর্ক নাই। দোকানে নাম দিয়েছে ইসলামিয়া স্টোর, বিক্রি হয় সব মদ। এটাও ধর্ম ব্যাবসা।
এবার আসি চেতনা ব্যাবসা। চেতনা বলতে সাধরণত মুক্তি যুদ্ধের চেতনাকে বুঝায়। এটার ব্যাবসা এখন বৈধ। যে কেউ মুক্তিযুদ্ধের বা চেতনার নাম দিয়ে দোকান খুলে বসেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অাবেগ দেশের প্রতিটি মানুষের। কিন্তু এই আবেগ, সেন্টিমেন্টকে ব্যাবহার করে যারা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করে তারাই হলো চেতনা ব্যাবসায়ি। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের নাম দিয়ে চলে অসামাজিক কর্মকান্ড, এটাই হলো চেতনা ব্যাবসায়ী, বিরুধী পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের বিরুধী শক্তি বলে, মানুষের সেন্টিমেন্ট নিজের পক্ষে নেয়া এটাও চেতনা ব্যাবসা। যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবহার করে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেন সেটাও চেতনা ব্যাবসা। অনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য চেনতা ব্যাবহার করাও চেতনা ব্যাবসা। অথচ এসব অনৈতিক দাবি বা ব্যাবসার সাথে মুক্তিযুদ্ধের কোন সম্পর্ক নাই।
অতএব আমাদের বুঝতে হবে কোনটা ইসলাম আর চেতনা। আর কোনটা ব্যাবসা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন