বাংলা সাহিত্যের নায়িকারা : পদ্মা নদীর মাঝির কপিলা – মুর্তজা বশীর
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি কালজয়ী উপন্যাস। এর পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। এই উপন্যাসের দেবীগঞ্জ ও আমিনবাড়ি পদ্মার তীরবর্তী গ্রাম। উপন্যাসটি কলকাতা থেকে সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা মাসিক পত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ ১৩৪১ থেকে শ্রাবণ ১৩৪২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নয় কিস্তি ছাপার পর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এক বছর পর ১৯৩৬-এর মে মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। পূর্বাশা পত্রিকায় ছাপার সময় দেবীগঞ্জ ও আমিনবাড়ির এই দুটি স্থানের নাম ছিল যথাক্রমে গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী।
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কৃত প্রথম ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে যথাক্রমে পদ্মা নদীর মাঝির সুইডিশ ও চেক ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়। তা ছাড়া হাঙ্গেরী, জার্মান ও ডাচ ভাষায়ও উপন্যাসটির অনুবাদ হয়। বাংলাদেশে দুবার পদ্মা নদীর মাঝির চলচ্চিত্র রূপ দেওয়া হয়। ঢাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত এফডিসি প্রাথমিক পর্যায়ে উর্দু ভাষায় নির্মিতব্য যে ছবি করার অনুমতি দেয় তা ছিল এ জে কারদার পরিচালিত জাগো হুয়া সাভেরা (ডে শ্যাল ডন)। এই চলচ্চিত্রটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝিকে অবলম্বন করে নির্মিত হয় ১৯৫৮ সালে। কিন্তু লেখক যেহেতু হিন্দু ও ভারতীয়, তাই লেখকের নাম ব্যবহূত হয়নি। কাহিনিকার হিসেবে বিশিষ্ট উর্দু ভাষার কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের নাম উল্লেখ করা হয়। এ জন্য ফয়েজ আহমদ ফয়েজকে প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি অবশ্য গান ও সংলাপ বলার দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে গৌতম ঘোষ ১৯৯২ সালে পদ্মা নদীর মাঝির চলচ্চিত্রে রূপ দেন।
স্বামী পরিত্যক্তা কপিলা কুবেরের শারীরিক পঙ্গু স্ত্রী মালার ছোট বোন। মালার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন সে ছিল কিশোরী, বড় দুরন্ত। তারপর তার বিয়ে হয়েছে, একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর আঁতুড়ে মারা গেছে। স্বামী শ্যামাদাস আবার বিয়ে করায় কপিলা চলে এসেছে তার বাবা-মার বাড়িতে। কিন্তু তাদের গ্রাম অকস্মাৎ বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় সে এসেছিল কুবেরের সঙ্গে তার জন্ম থেকে খোঁড়া বোনের সংসারকে দেখতে। সন্ধ্যার অন্ধকারে পদ্মা নদীর নির্জন তীরেই নতুনভাবে কপিলার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয় কুবেরের কাছে। পদ্মার বিস্তৃত রহস্যময়তাই যেন কপিলা। পদ্মার জলের স্রোতের মতোই কুবেরের মনে কপিলা যেন বয়ে যায়। কপিলার ছলনাভরা হাসি, রহস্যঘন সংলাপ কুবেরের মনে পদ্মার বিচিত্র বৈশিষ্ট্যই ধরা পড়ে। কপিলা যেন বর্ষার পদ্মার মতো। এই পদ্মার তীরেই গভীর রাতে কপিলা কুবেরকে জানাতে এসেছিল দুঃসংবাদ—কুবেরের প্রতি চুরির অপবাদ। তাই কুবের চলে যেতে চায় সুচতুর, মিষ্টভাষী হোসেন মিয়ার সমুদ্রবুকের উপনিবেশ ময়নাদ্বীপে। সন্ধ্যাকাশে আলোর হাতছানি। পাড়ভাঙা নদীর ঘাট, যেন কপিলার জীবনগাথা। পারের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া ঘাটে বাঁধা নৌকার মতোই নিঃসঙ্গ সে। লাল ডোরাকাটা নীল শাড়ির লালপাড় কোমর জড়িয়ে বাঁ হাত মাথার ওপর রেখে অধীর আগ্রহে খুঁজছে ময়নাদ্বীপ। দূরে দুপাল দেওয়া নৌকা। নিচের অংশটি শূন্যতারই সাদা রং, ওপরের অংশ কপিলার পরনের শাড়ির যৌবনের প্রতিরূপ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৫, ২০১১
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কৃত প্রথম ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে যথাক্রমে পদ্মা নদীর মাঝির সুইডিশ ও চেক ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়। তা ছাড়া হাঙ্গেরী, জার্মান ও ডাচ ভাষায়ও উপন্যাসটির অনুবাদ হয়। বাংলাদেশে দুবার পদ্মা নদীর মাঝির চলচ্চিত্র রূপ দেওয়া হয়। ঢাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত এফডিসি প্রাথমিক পর্যায়ে উর্দু ভাষায় নির্মিতব্য যে ছবি করার অনুমতি দেয় তা ছিল এ জে কারদার পরিচালিত জাগো হুয়া সাভেরা (ডে শ্যাল ডন)। এই চলচ্চিত্রটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝিকে অবলম্বন করে নির্মিত হয় ১৯৫৮ সালে। কিন্তু লেখক যেহেতু হিন্দু ও ভারতীয়, তাই লেখকের নাম ব্যবহূত হয়নি। কাহিনিকার হিসেবে বিশিষ্ট উর্দু ভাষার কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের নাম উল্লেখ করা হয়। এ জন্য ফয়েজ আহমদ ফয়েজকে প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। তিনি অবশ্য গান ও সংলাপ বলার দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে গৌতম ঘোষ ১৯৯২ সালে পদ্মা নদীর মাঝির চলচ্চিত্রে রূপ দেন।
স্বামী পরিত্যক্তা কপিলা কুবেরের শারীরিক পঙ্গু স্ত্রী মালার ছোট বোন। মালার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন সে ছিল কিশোরী, বড় দুরন্ত। তারপর তার বিয়ে হয়েছে, একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর আঁতুড়ে মারা গেছে। স্বামী শ্যামাদাস আবার বিয়ে করায় কপিলা চলে এসেছে তার বাবা-মার বাড়িতে। কিন্তু তাদের গ্রাম অকস্মাৎ বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় সে এসেছিল কুবেরের সঙ্গে তার জন্ম থেকে খোঁড়া বোনের সংসারকে দেখতে। সন্ধ্যার অন্ধকারে পদ্মা নদীর নির্জন তীরেই নতুনভাবে কপিলার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয় কুবেরের কাছে। পদ্মার বিস্তৃত রহস্যময়তাই যেন কপিলা। পদ্মার জলের স্রোতের মতোই কুবেরের মনে কপিলা যেন বয়ে যায়। কপিলার ছলনাভরা হাসি, রহস্যঘন সংলাপ কুবেরের মনে পদ্মার বিচিত্র বৈশিষ্ট্যই ধরা পড়ে। কপিলা যেন বর্ষার পদ্মার মতো। এই পদ্মার তীরেই গভীর রাতে কপিলা কুবেরকে জানাতে এসেছিল দুঃসংবাদ—কুবেরের প্রতি চুরির অপবাদ। তাই কুবের চলে যেতে চায় সুচতুর, মিষ্টভাষী হোসেন মিয়ার সমুদ্রবুকের উপনিবেশ ময়নাদ্বীপে। সন্ধ্যাকাশে আলোর হাতছানি। পাড়ভাঙা নদীর ঘাট, যেন কপিলার জীবনগাথা। পারের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া ঘাটে বাঁধা নৌকার মতোই নিঃসঙ্গ সে। লাল ডোরাকাটা নীল শাড়ির লালপাড় কোমর জড়িয়ে বাঁ হাত মাথার ওপর রেখে অধীর আগ্রহে খুঁজছে ময়নাদ্বীপ। দূরে দুপাল দেওয়া নৌকা। নিচের অংশটি শূন্যতারই সাদা রং, ওপরের অংশ কপিলার পরনের শাড়ির যৌবনের প্রতিরূপ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৫, ২০১১