খাব্বাব, আমার উপন্যাসের নায়ক, অতপর...
।। নাসীমুল বারী।।
তখনও সমুদ্রে বোটে নেভির দুজন ডুবুরিসহ আমি। নেভির স্পেশাল পাম্পস্পিড বোটে লেফেটেন্যান্ট কমান্ডার রায়হান আল বেরুনি একজন ডুবুরি নামিয়ে খুঁজছেন ওকে। এটাই শেষ প্রচেষ্টা। তারপর কী হবে জানি না। কান্না আসছিল বার বার। চাপিয়ে রাখছি; কষ্ট হচ্ছে খুব। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- নেভি উদ্ধার অভিযান শেষ করলেও আমি আরো দুদিন এখানে থেকে ওকে উদ্ধার করে যাব। ওকে তো আমাকে উদ্ধার করতেই হবে। ওতো আমার শুধু ভাগিনা নাকীব মোহাম্মদ খাব্বাবই নয়- আমার উপন্যাসের নায়কও।
এই তো কানে এখনো ভাসছে ঈদের ক'দিন আগের কথাটা। চুয়েট থেকে এসেছে ঈদের ছুটিতে। ওদের বাসায় আমার দেখা হলো। আমাকে দেখেই বল, মামা আমি বড় হয়ে গেছি, এ জন্যেই মনে হয় খোঁজও রাখেন না, আদরও পাই না।
আমি একটু ধমকের সুরে বললাম, কে বলল এ কথা। তোর মাকে জিজ্ঞস কর, আমি তোর নিয়মিত খোঁজ রাখি কিনা। তোকেই তো আমার উপন্যাসের নায়ক বানিয়েছি। আর কাউকে করছি?
আসলেও তাই। আমার কিশোর রহস্যোপন্যাস 'দানবের কবলে ওরা'। এর প্রধান চরিত্র, নায়ক 'খাব্বাব'।
ও ছিল চঞ্চল। ছিল বুদ্ধিদীপ্ত। ভুত-প্রেতে কোনো ভয় ছিল না। আর আমার কাছে অনেক বায়নার একটি ছিল ভয়ংকর ভূতের গল্প যেন শুনাই। কৈশোরিক তার এ চরিত্রগুলো আমার ভাল লাগত। তাকে গল্প শোনাতে আর আমার ভাল লাগাকে মিলিয়ে লিখে পেললাম 'দানবের কবলে ওরা'। নায়ক তাই সে।
আজ, এই তো এখন খব্বাব আমার সামনে। নেভির স্পিডবোটে নিথর দেহে পড়ে আছে। উহ্...। হাউমাউ কাঁদতে পারলাম না; অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলাম। লেফেটেন্যান্ট কমান্ডার রায়হান আল বেরুনি ডেকে বলেন, মামা কোথায়?
আমি শান্তকণ্ঠে বলি, এই তো।
-দেখেন তো আপনার লোক কিনা?
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলি, হাঁ, হাঁ ওই তো খাব্বাব।
চোখের নোনাজল পড়ছে বেয়ে। সমুদ্রের নোনা জল এগুলো- যেখানে খাব্বাবের চোখের সব নোনা জল মিশে আছে তাতে। আর বেরুবে না কখনো।
তারপর....
না, তারপরের কথা আর বলতে পারব না। আজ সকালে আমার উপন্যাসের নায়ক 'খাব্বাব'-এর সমাপ্তিটা অনেকের সাথে আমিও করে এলাম। সারাদিন মনটা গুমরে কেটেছে। খুব একটা কথা বলি নি কারো সাথে।
আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে। সবার কাছে তার জন্য চাওয়া এখন দোয়া।
#
(পারিবারিক এলবাম থেকে কিছুক্ষণ পর ছোটবেরার ছবি দেব)