১০০ মনীষীর জীবনী
১০০ মনীষীর জীবনী
জর্জ বার্নার্ড শ
আইরিশ নাট্যকার এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ’ ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পর তিনিই হলেন সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার। তার মতো সাহিত্য সমালোচক বিশ্বে বিরল। যে কোনো সাহিত্য সৃষ্টিকে তিনি সুনিপুণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতেন।
উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের পর জর্জ বার্নার্ড শ’ই হলেন সেরা ব্রিটিশ নাট্যকার। কেউ বলেন, তার মতো সাহিত্য সমালোচক বিশ্বে দুর্লভ। যে কোনো সাহিত্য সৃষ্টিকে তিনি সম্পূর্ণ নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। স্বচ্ছ পরিষ্কার মননের অধিকারী। কেউ বলেন, তিনি একজন মহান সামাজিক চিন্তক। তার চিন্তার মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ অঙ্কুরিত হয়। পচাগলা সমাজের বিরুদ্ধে তিনি তীক্ষভাবে প্রতিবাদ জানান। ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ’। যিনি সমকালীন সমাজকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন, তাকে তুলনা করা হয় মহান-চিন্তানায়ক ভলতেয়ারের সঙ্গে, ছোটবেলার দিনগুলো তার কেটেছিল কঠিন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে। সময়মতো পড়াশোনা করতে হতো তাকে। চার্চে যেতে হতো সবসময়। খেলাধুলার সময়টার ওপরেও টেনে দেয়া হয়েছিল লক্ষণরেখা।
এভাবে ছোট থেকেই শ’কে বলা হয়েছিল ভবিষ্যতে তোমাকে একজন কেউকেটা হতে হবে। তুমি জন্মালে, আর কিছুদিন কাটিয়ে গেলে এই পৃথিবীর বুকে, তা হবে না। এভাবেই বোধহয় শ’-এর মন ইস্পাত-কঠিন হয়ে ওঠে।
পরবর্তীকালে তিনি যে ধারালো গদ্যের জন্য সবার হৃদয় জয় করেছেন, তার বীজ এভাবেই উত্তপ্ত হয়েছিল তার কিশোরকালে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বারে বারে তার মা-বাবা এবং গৃহশিক্ষকদের কথা স্মরণ করেছেন। তাদের সমবেত প্রভাবেই শ’ এক স্বচ্ছ মনের অধিকারী হয়ে ওঠেন। শ’-এর হাতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল ১৯২৫ সালে। বলা হয়েছিল যে, তিনি একদিকে যেমন আদর্শবাদের ধ্বজাকে ওপরে তুলে ধরেছেন, এরই পাশাপাশি চিরন্তন মানবিকতার জয়গান গেয়েছেন। অসাধারণ কৌতুকসম্পন্ন বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছেন সবার অশান্ত হৃদয়কে। তার লেখনীর মধ্যে কাব্যিক সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকত সবসময়।
জর্জ বার্নার্ড শ’ ছিলেন হালকা-পাতলা গড়নের মানুষ। আর তার বন্ধু বিশ্বখ্যাত চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচকক ছিলেন মোটা ও বিশাল ভুঁড়ির অধিকারী। একবার শ’-কে ঠাট্টা করে হিচকক বললেন, ‘তোমাকে দেখলে মনে হয় ইংল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ চলছে।’ জবাবে শ’ বললেন, আর তোমাকে দেখলে বোঝা যায় দুর্ভিক্ষের কারণটা কী!’ জর্জ বার্নার্ড শ’ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না। নিজের লেখা বইও কাউকে কখনো উপহার দেননি। তবে বিশ্বখ্যাত বাঙালি জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণ শুনে শ’ মুগ্ধ হয়ে যান।
পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে তিনি জগদীশচন্দ্রের বাসায় গিয়ে হাজির। তখন জগদীশচন্দ্র বাসায় ছিলেন না। উপহারের বইগুলোতে শ’ লেখেন জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন।
একবার এক তরুণ সম্পাদক একটি সংকলনে জর্জ বার্নার্ড শ’-র একটি লেখা ছাপার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখল। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, সম্পাদকের বয়স কম তাই তার পক্ষে সম্মানী পাঠানো সম্ভব নয়। জবাবে শ’ লিখলেন, তরুণ সম্পাদকের বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন।
একদিন এইচ জি ওয়েলসের সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন শ’। ওয়েলস তার হাতের লাঠিটা ঘোরাচ্ছিলেন। আর তা শ’-র নাক ছুঁই ছুঁই করছিল। জর্জ বার্নার্ড শ’ তাকে বললেন, তোমার লাঠি ঘোরানো বন্ধ কর। যে কোনো সময় এটা আমার নাকে লাগতে পারে। তারপর ওয়েলস যুক্তি দেখালেন, ‘লাঠি ঘুরিয়ে হাঁটা আমার নাগরিক অধিকার।’ তারপর জবাবে জর্জ বললেন, ‘মানলাম। তবে এটাও ঠিক আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ, তোমার নাগরিক অধিকার সেখান থেকে শুরু।’
তিনি সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শ’র লেখার বিষয়বস্তু। অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ’ অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন।
বার্নার্ড শ’এমন ব্যক্তিত্ব যিনি যুগপৎ সাহিত্যে নোবেল (১৯২৫) এবং অস্কার (১৯৩৮) পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার গ্রহণে অনাগ্রহ থাকলেও স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত তা তিনি গ্রহণ করেন। তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার নেননি।
নবীজী সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ
হযরত মুহাম্মদ (সা.), যাকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ্তা’য়ালা আর কিছুই সৃষ্টি করতেন না, তার পবিত্রতা চরিত্র, দেশপ্রেম, বুদ্ধি, ব্যবহার, কৌশল, পান্ডিতব নিয়ে সব মুসলিমের অন্তরে সুউচ্চ বিশ্বাস থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিশ্বের ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দার্শনিক, রাজনৈতিক, মনীষীদের যে গবেষণাপ্রসূত সুউচ্চ মতামত রয়েছে তা এখানে সূত্রসহ উল্লেখ করা হল।
‘মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খৃষ্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে।’
‘আমি বিশ্বাস করি তাঁর মতো ব্যক্তির কাছে যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সঙ্গে সমাধান করতেন যা বহু প্রতীক্ষিত শান্তি ও সুখ আনয়ন করত। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি যে, মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতিমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ভ করেছে।’
‘যদি কোন ধর্মকে ইংল্যান্ড তথা সমগ্র ইউরোপকে শাসন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে যে ধর্মটি পরবর্তী ১০০ বছর ধরে পারবে, তা হল ইসলাম।’
Sir George Bernard Shaw in The Genuine Islam, Vol. 1 No. 8, 1936.
সূত্র : দ্য জেনুইন ইসলাম, ভলিউম-১, নং- ৮, সন- ১৯৩৬
জর্জ বার্নার্ড শ' কথা বলায় বেশ পটু ছিলেন। একবার এক ইংরেজ লর্ড বার্নার্ড শ’কে হেয় করার উদ্দেশ্যে বললেন,
-- আচ্ছা মি. শ’ আপনার বাবা নাকি দর্জি ছিলেন?
বার্নার্ড শ’--হ্যাঁ।
লর্ড -- তাহলে আপনি কেন দর্জি হলেন না?
বার্নার্ড শ’--আপনার পিতা নাকি ভদ্রলোক ছিলেন?
লর্ড --নিশ্চয়ই!
বার্নার্ড শ’--তাহলে আপনি কেন তার মতো হলেন না।
 
Top