আলানূর হোসাঈন

বৈশাখী পূজাসহ সকল মহামারী থেকে বাঁচার উপায়

মো. আলানূর হোসাঈন

আমাদের প্রত্যেক সচেতন মানুষকে এ বিষয়ে চিন্তা করা দরকার। আমরা যদি চিন্তার গভীরতায় প্রবেশ না করি তাহলে অপসাংস্কৃতির মহামারী আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না। বিশেষ করি লেখক সমাজ ও প্রজ্ঞাবানদের এগিয়ে আসতে হবে।এই মহামারী চড়ম আকার ধারণ করবার আগেই কিছু করতে হবে। 
একটা কথা মনে রাখতে হবে রোগের কারন নির্ণয় না করে রোগ দেখে ঔষধ প্রয়োগ করলে সেই রুগী সাময়ীক ভালো হলেও তা বার বার দেখা দেবে এবং নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি করবে । এই মহামারী থেকে জাতিকে সুস্থ করতে হলে সঠিক কারন খুঁজে বেড় করতে হবে।আমাদের ভাবনা খুবই দূর্বল, আমরা উপরে উপরে ভাবি, সাময়িক ভাবনা ভাবি, ভাবনার গভীরতা আমরা যাই না, ফলে আমাদের এলোমেল ভাবনা কাজে লাগাতে পারি না। 
শুধু বৈশাখ বলে কথা নয় বাঙগালীর যত উৎসব আছে তাতে অংশগ্রহণ করে আনন্দিত হবার কারন ? খেলা দেখে আনন্দিত হওয়ার কারন ? নাচ, গান, নাটক, চলচ্চিত্র, সাংস্কৃতিক যত অনুষ্ঠান এসবে মানুষ কেন আকৃষ্ট হয় তার কারন ? বর্তমান মহামরি থেকে বাঁচতে হলে এসব কিছু নিয়ে ভাবতে হবে।
একটা কথা মনে রাখতে হবে এসব কিছুর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া মানুষের একটা প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য।মানুষ চাইলেও এসব থেকে দূরে থকতে পারবে না । এসব মানুষের মনের ক্ষুধা , মনের ক্ষুধা তাকে দিতেই হবে । এজন্যই মানুষ আনন্দ ভালোবাসে, বিনোদন ভালোবাসে । এখানে দ্বিমত করবার কোনো উপায় নেই। বলতে পারেন মসজিদের ইমাম সাহেব সে কি মানুষ নয়? সে তো আনন্দ ফুর্তি করে না, উৎসব করে না , বিনোদন পছন্দ করে না। কথাটি সঠিক নয়। যত বড় বুজুর্গ হোক প্রথমে ধরে নিতে হবে সে একজন মানুষ সে ফেরেস্তা নয়! মানুষ বলতেই অনেক দূর্বলতা তার থকবে। ইমাম সাহেবের কানে যদি ইসলামী সঙ্গীত মধুর সুরে আসে সে কান খারা করে শুনতে চাইবে। সে ঈদে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করবে। সে একজন ইমাম সে জানে বিনোদনের নামে যা হচ্ছে তা পাপ, অন্যায় এই জানার কারনে ভয়ের কারনে সে নিজেকে এই পাপ থেকে দূরে রেখেছে নতুবা সেও এই পাপে জড়িয়ে পরতো । কিন্তু এই জাতির সবাই তো ইমাম বা বুজুর্গ নয়। তারা তো এই অপসাংস্কৃতিকে রক্তের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। তাদের রক্তকে দূষিত করে ফেলেছে।কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ এগুলো জাতি ভাবে না , বৌশাখী উৎসব পালোনের নামে তারা যে মূর্তি পূজা করছে , বিনোদনের নামে অশ্লীল ও পাপে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে তা তারা হিসেব করে দেখে না । 
একটু আগেই বলেছি এসব মানুষের রক্তের সাথে মিশে গেছে । এখন কি এই দুষিত রক্ত মানুষের শরীর থেকে ফেলে দিবেন ? যদি ফেলে দেন তাহলে তো তারা মারা যবে। তাহলে কী করবেন ? আমাদের যা করতে হবে তা হলো একদিক থেকে ভালো রক্ত প্রবেশ ঘটাতে হবে অন্য দিক থেকে দুষিত রক্ত সমান তালে বেড় করতে হবে। যদি অধৈর্য হয়ে এক দিনে দুষিত রক্ত ফেলে দিয়ে এক দিনেই বিশুদ্ধ রক্ত প্রবেশ করাতে চান তাহলে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যার্থ হবেন। কারন এতদিন যেই রক্ত তাকে চালিত করেছে সেখানে হঠাৎ করে অপরিচিত রক্ত শরীরের সাথে মিশতে এবং খাপ খেতে সময় লাগবে। এজন্য ধীরে ধীরে কৌশলে এগোতে হবে। অনুরুপ ভাবে এই জাতির দেহ থেকে অপসাংস্কৃতির এই মহামারী দূর করতে চাইলে দুষিত রক্তের মত একদিনে ফেলে দিতে চাইলে জাতি মারা যাবে বা রিএকশন করবে । ঐ রক্তের মতই এক দিক থেকে ভালো বিনোদন, সাংস্কৃতি ঢুকাতে হবে ঠিক সেই তালে মন্দটা দূর করতে হবে। আপনি মানুষের মনকে বিকল্প খাবার না দিয়ে বর্তমান মন্দ খাবার কেড়ে নিতে চাইলে তারা আপনার বিরুদ্ধে দাড়াবে, বিদ্রোহ করবে। আপনি এভাবে তাদের ভালো করতে গিয়ে খারাপটাই বেশি কর ফেলবেন । এই জন্যই রাসূল স. আগে বলেছেন সৎকাজের আদেশ দাও তার পর অসৎ কাজের নিষেধ করতে বলেছেন। তিনি আগে নিষেধ করতে বলতে পারতেন। অসৎকাজের বিকল্প সৎকাজ। বিকল্প আগে দিতে হবে তারপর মন্দটি সে ভুলে যাবে বিকল্পটি পেয়ে। 
এই জন্য দীর্ঘ্য মেয়াদী পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে এগোতে হবে। বিনোদনের যতোগুলো শাখা প্রশাখা আছে, উৎসবে যা কিছু করা হয়, মনের ক্ষুধা মিটানোর যতগুলো মাধ্যম আছে, সব কিছুতেই বিকল্প প্রবেশ করাতে হবে। 
প্রথমেই বলেছি কৌশলে আগাতে হবে, বুঝতে দেয়া যাবে না। তাহলে আপনার প্রতিপক্ষের এই বিশাল রাজ্যে যারা অশুভ দিয়ে মানুষের হৃদয় দখল করে রেখেছে, মানুষের খাবরের প্রতি দূর্ব লতা দেখে যা খুশি তাই খেতে দিচ্ছে তারা আপনাকে ভালো কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে দিবে না। পদে পদে বাধাঁর সৃষ্টি করবে, অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিবে সকল প্রচেষ্টা। আপনারা যদি আশা করেন কয়েকদিনেই সব পরিবর্তন করে ফেলবেন তাহলে সম্পূর্ণ ব্যার্থ হবেন।
একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উদহরণ দিচ্ছি, আমি যখন কোটালীপাড়া পড়শুনা করতাম , তখন সেখান প্রাইভেট পড়ার একটা মহামারী আকার ধারন করেছিল। ক্লাস ছুটি হলেও বুঝা যেত না ছুটি হয়েছে । রাত ৮টা পর্যন্ত চলত প্রাইভেট পড়া। তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে বিএ পর্যন্ত। প্রাইভেট পড়া ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কখনও শুভ নয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ছাত্রদের জন্য হতে পারে। আমি প্রতিটি ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের প্রাইভেট পড়তে নিষেধ করতাম। তারা আমার কথা শুনতোই না বরং বলতো আপনি কি চান আমরা ফেল করি বা খারাপ রেজাল্ট করি ? যারা প্রাইভেট পরে তারা তো এ প্লাস পেয়েছে। পরে আমি বুঝতে পারছি আমি যতই তাদের নিষেধ করি কাজ হবে না। আমার যতটুকু সম্মান আছে সেটুকুও যাবে। তখন ভেবে আবিষ্কার করলাম এই প্রাইভেট বন্ধ করতে হলে আমাকে বিকল্প কিছু ছাত্রদের সামনে দিতে হবে। আমার ভাবগুলো কয়েক বন্ধু ও সমমনা দুই শিক্ষকের সাথে শেয়ার করলাম। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম একটা কোর্চিং সেন্টারের মাধ্যমে এর সমাধান করবো। নাম দিলাম ’বিকল্প স্টুডেন্ট কোচিং সেন্টার’ । যেখানে প্রাইভেটে ৩০০ টাকা দিতে হতো, সেখানে আমরা নিবো মাত্র ১০০ টাকা এবং দরিদ্রদের ফ্রী পড়াবো। ক্রমশ প্রাইভেট ছেড়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হচ্ছে ছাত্র ছাত্রী। প্রাইভেট শিক্ষকরা হতাশ হচ্ছে। আমরা সবাই বিনা বেতনে ক্লাস দিচ্ছি। ওদের বেতন ওদের কাজেই লাগাচ্ছি। এখন ঐসব শিক্ষরা আমাদের সাথে জিদ করে ক্লাসে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে পড়াচ্ছেন। ছাত্ররাও নিজে নিজে পড়তে পারছেন এখন তাদের কোচিং দরকার হয় না । কয়েক মাস পর আমরাও কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিলাম। পরবর্তিতে পরিক্ষায় প্রারাইভেট ছাড়াই আগের চেয়ে অনেক ভালে ফলাফল অর্জন করছে। আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।আমরা চেয়েছি শিক্ষক যেনো ঠিক ভাবে ক্লাসে পড়ায় । আমাদের উদ্দেশ্য ছাত্র ছাত্রীদের উপর চাপিয়ে দেইনি। চাপিয়ে দিতে গেলে এটা সম্ভব হতো না । অতএব আমাদের ক্ষণিকের চিন্তা করলে হবে না। আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বসে থাকলে চলবে না । সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলেই হবে না । আল্লাহ আমাদের যে মেধা এবং জ্ঞন দিয়েছেন তাকে কাজে লাগাতে হবে। অন্যের যায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবতে হবে।তাহলেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবো । মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব দেশ, জাতি, মানুষ ও মানবতার কল্যাণে কাজ কারা এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমস্ত রকম অন্যায় ও অপসাংস্কৃতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখা ।সবাই এগিয়ে আসুন আমরা আমাদের মার্তৃভূমির জন্য কিছু করি ।
 
Top