১০০ মনীষীর জীবনী

মার্টিন লুথার কিং


ইতিহাসে ব্যক্তিই সব নয়, কিন্তু যদি বলা হয় জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকাকে স্বাধীন করেছেন, আব্রাহাম লিংকন এনেছেন গণতন্ত্র, তবে মার্কিন দেশকে সভ্য করেছেন মার্টিন লুথার কিং। তাঁর নেতৃত্বে কালো মানুষ পেয়েছে সাদা মানুষের সমান অধিকার, আর সাদা নাগরিকেরা পেয়েছে বর্ণবাদের অভিশপ্ত অহংকার থেকে মুক্তি।
তিনি ছাড়া আমেরিকার বড় অংশ সাবেক বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার দশায় পড়ে থাকত। যে দেশে একসময় কালো শিশুরা সাদা শিশুদের সঙ্গে পড়তে পারত না, যেখানে সাদা যাত্রীকে দেখে বাসের আসন ছেড়ে দিতে হতো কোনো কালো মহিলাকে, কোনো শ্বেতাঙ্গিনীকে ভালোবাসার অপরাধে যে দেশে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে কেটে কুটিকুটি করা হতো, মার্টিন লুথারের নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের জের ধরে আজ সেই দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ বারাক ওবামা।
মার্টিন লুথারের মাধ্যমেই আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী ২০০ বছরের লড়াই পরিণতি পায়। কিন্তু সংগ্রামের শীর্ষ মুহূর্তেই আততায়ীর গুলি কেড়ে নেয় এই মহাপুরুষের জীবন। ১৯৬৮ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে শ্বেতাঙ্গ ঘাতকের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর জন্ম ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি। আটলান্টার বুকার টি ওয়াশিংটন হাইস্কুলে তার স্কুল জীবন শুরু,১৯৪৮ সালে মোরহাউজ কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান এর উপর স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ।১৯৫৫ সালে কিং বষ্টন ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শন এর উপর পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন ।
ছিলেন পাদ্রি কিন্তু হয়েছেন অহিংস মুক্তি আন্দোলনের দিশারি। আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধের তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। ছিলেন দারিদ্র্যমুক্তি আন্দোলনের নেতা। আজ বিশ্বে তাঁর স্থান মানবাধিকারের কিংবদন্তি হিসেবে। সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্মান তাঁরই। অমর তাঁর মহান সংগ্রাম। একইভাবে অমর তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতা ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’।
যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর ইতিহাসে যে সব ব্যক্তিত্বরা নির্যাতিত, অত্যাচারিত নিপিড়ীত আর অধিকার বঞ্চিত মানুষদের জন্যে সংগ্রাম করে গেছেন, সেই সংগ্রামে নিজের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন মার্টিন লুথার কিং ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারী আমেরিকার জর্জিয়া ষ্টেইটের আটলান্টা সিটিতে মার্টিন লুথার কিং জন্মগ্রহন করেন ।
একসময় আমেরিকাতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের সাথে চরম বৈষম্য করা হত । একটা উদহারন দিলে কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন বৈষম্যের পরিমাপটা কতটুকু ছিল । সাদা মানুষ বাসে উঠলে কালো মানুষদের সিট ছেড়ে দিতে হত । ১৯৫৫ সালে রোসা পার্ক নামের এক কালো মেয়েকে সাদা চামড়াওয়ালা একজনকে সিট ছেড়ে না দেয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ।
সেই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্যে মন্টোগোমারিতে বাস বয়কটের ডাক দেওয়ার মাধ্যমে মার্টিন লুথার কিং আমেরিকায় কালো মানুষদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন শুরু করেন ।
মার্টিন লুথার কিং ই প্রথম মানুষ যে আমেরিকায় কালো মানুষদের প্রতি বৈষম্যের জন্যে প্রতিবাদ শুরু করেন ।১৯৫৭ সালে রেফ এবারনেথি এবং অন্যান্য সিভিল রাইট নেতাদের সহযোগিতায় স্হাপন করেন সাউদার্ন লিডারশীপ কনফারেন্স ( এসসিএলসি )।
আমেরিকার সিভিল রাইট নেতা হাওয়ার্ড থমসন এবং ভারতের নন ভায়োলেন্স এর জনক গান্ধীর মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিং অত্যান্ত যোগ্যতার সাথে আমৃত্যু এই সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্টার পাশাপাশি তাদের নৈতিক চরিত্র গঠন নিশ্চিত করাও ছিল এই সংগঠনটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন কাজ ।
১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির সমতা অর্জন এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার লক্ষ্যে কিং বেয়ারড রাস্তিন এবং আরো ছয়টি সংগঠনের সহায়তায় এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেন । প্রায় তিন লক্ষ মানুষের উপস্হিতিতে কিং তাঁর সেই বিখ্যাত " আই হেভ এ ড্রিম" প্রদান করেন যা এখন ও পর্যন্ত আমেরিকার ইতিহাসে শ্রেষ্ট ভাষনগুলির মধ্যে একটা বিবিচিত হয় ।
১৯৬৫ সালে ৭ মার্চ কিং তার এসএলসি সংগঠনের সহায়তায় সেলমা থেকে মন্টগোমারির রাজধানীতে এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করেন ।কিন্তু পুলিশ আর সরকারী গুপ্তচরদের মিছিলের উপর অমানবিক নির্যাতনের কারনে সেই মিছিলটি শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় । উল্লেখ্য যে আমেরিকার সিভিল রাইট মুভমেন্টের ইতিহাসে সেই দিনটি এখনো 'ব্লাক সান ডে' হিসাবে গন্য করা হয় ।
ভিয়েতনামের সাথে আমেরিকার যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আর নিন্দা প্রকাশ করেন । ১৯৬৭ সালের ৪ এপ্রিল নিউইয়র্কে দেওয়া এক ভাষনে তিনি এই যুদ্ধের তীব্র সমালোচনা করে বলেন " আমেরিকানরা ভিয়েতনামকে তাদের কলোনি বানানোর যে বাসনা করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য আর বর্বরোচিত একটা অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকবে"।
এর ঠিক এক বছর পর ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল মেম্ফিসের লরিয়েন মোটলে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ।
মার্টিন লুথার কিং তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নির্যাতিত মানুষের জন্যে লড়াই করে গেছেন ।
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনে লাখ লাখ মানুষের মিছিলের শেষে দেওয়া এই বক্তৃতা কখনো ভুলার নয়। এখানে তাঁর সেই বক্তৃতার সংক্ষেপিত অংশ অনুবাদ করে দেওয়া হলো:
এই দিনে আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে খুশি। ইতিহাস এই দিনটি মনে রাখবে, আমাদের জাতির ইতিহাসে মুক্তির মহান সমাবেশ হিসেবে।
যে মহান আমেরিকানের প্রতীকী ছায়াতলে আজ এখানে আমরা দাঁড়িয়ে, শতবর্ষ আগের এই দিনে তিনি মুক্তির সনদে স্বাক্ষর করেছিলেন। অবিচারের আগুনে ঝলসে যাওয়া নিযুত নিযুত নিগ্রো দাসের সামনে সেই যুগান্তকারী ঘোষণা আশার মশাল হয়ে জ্বলে ছিল। বন্দিত্বের দীর্ঘ রাতের পর সেটা ছিল এক আনন্দময় সকাল।
কিন্তু ১০০ বছর পর মর্মান্তিক সত্য হচ্ছে, নিগ্রো আজও মুক্ত নয়। শতবর্ষ পরও নিগ্রোরা আজও দুঃখজনকভাবে বিচ্ছিন্নতার শেকলে আর বৈষম্যের জিঞ্জিরে বাঁধা। শতবর্ষ পরও নিগ্রোদের জীবন যেন ধন-সম্পদের বিরাট সমুদ্রের মাঝখানে এক নিঃসঙ্গ দারিদ্র্যের দ্বীপ। শতবর্ষ পরও নিগ্রোরা মার্কিন সমাজের এক কোণে নির্জীব দশায় পড়ে আছে, হয়ে আছে নিজভূমে নির্বাসিত। তাই আজ আমরা এখানে আমাদের দুর্দশাকে তুলে ধরতে এসেছি।
এক অর্থে আমরা আমাদের রাজধানীতে এসেছি একটা চেক ভাঙাতে। আমাদের প্রজাতন্ত্রের স্থপতিরা যখন সংবিধানের সেই দারুণ কথাগুলো লিখছিলেন এবং দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা, তখন তাঁরা এমন এক চেকে সই করছিলেন, প্রতিটি আমেরিকান যার উত্তরাধিকারী। সেটা ছিল সব মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, মুক্তি ও সুখসন্ধানের নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি।
আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে, আমেরিকা সেই প্রতিশ্রুতিপত্র খেলাপ করেছে, অন্তত তার কালো নাগরিকদের বেলায়। সেই পবিত্র দায়িত্ব মান্য করার বদলে আমেরিকা নিগ্রো মানুষদের হাতে যে চেক ধরিয়ে দিয়েছে, তা ফেরত এসেছে, ‘তহবিল ঘাটতি’র চিহ্ন নিয়ে। কিন্তু ন্যায়বিচারের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে—এ আমরা বিশ্বাস করতে রাজি না।
আমরা মানতে রাজি না, এই জাতির সুযোগ ও সম্ভাবনার সিন্দুকে যথেষ্ট তহবিল নেই। তাই যে চেক চাইবা মাত্র মুক্তির দৌলত আর ন্যায়বিচারের নিরাপত্তা দেবে, আজ আমরা এসেছি সেই চেক ভাঙাতে।... এখনই সময় ঈশ্বরের সব সন্তানের জন্য সুযোগের সব দ্বার অবারিত করে দেওয়ার। এখনই সময় বর্ণবৈষম্যের চোরাবালি থেকে আমাদের জাতিকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনের পাথুরে জমিতে তুলে ধরার।
...যত দিন না নিগ্রোরা তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে, তত দিন আমেরিকায় বিরাম ও শান্তি থাকবে না। যত দিন না ন্যায়ের সুদীপ্ত দিন আসছে, তত দিন বিদ্রোহের ঘূর্ণিঝড় আমেরিকার ভিতকে কাঁপিয়ে দিতে থাকবে।...
বন্ধুরা, আজ আমি আপনাদের বলছি, বর্তমানের প্রতিকূলতা ও বাধা সত্ত্বেও আমি আজও স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নের শেকড় পোঁতা আমেরিকান স্বপ্নের গভীরে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জাগবে এবং বাঁচিয়ে রাখবে এই বিশ্বাস: ‘আমরা এই সত্যকে স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করছি: সব মানুষ সমান।’
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে সাবেক দাস আর সাবেক দাসমালিকের সন্তানেরা ভ্রাতৃত্বের এক টেবিলে বসতে সক্ষম হবে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন মরুময় মিসিসিপি রাজ্য, অবিচার আর নিপীড়নের উত্তাপে দম বন্ধ করা মিসিসিপি হয়ে উঠবে মুক্তি আর সুবিচারের মরূদ্যান।
আমি স্বপ্ন দেখি, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক জাতির মধ্যে বাস করবে, যেখানে তাদের চামড়ার রং দিয়ে নয়, তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে তারা মূল্যায়িত হবে।
আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আলাবামা রাজ্যে, যেখানকার গভর্নরের ঠোঁট থেকে কেবলই বাধানিষেধ আর গঞ্জনার বাণী ঝরে, একদিন সেখানকার পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যাবে যে কালো বালক আর বালিকারা সাদা বালক আর বালিকাদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো হাত ধরাধরি করবে।
আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন সব উপত্যকা উত্তীর্ণ হবে, সব পাহাড় আর পর্বত হবে আনত, এবড়ো-খেবড়ো জমিন মসৃণ হবে, আঁকাবাঁকা জায়গাগুলো সমান হবে এবং ঈশ্বরের জয় উদ্ভাসিত হবে এবং একসঙ্গে সব মানব তা চাক্ষুষ করবে।
এই-ই আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়েই আমি দক্ষিণে ফিরে যাব। এই বিশ্বাস নিয়ে হতাশার পর্বত থেকে আমরা সৃষ্টি করব আশার প্রস্তর। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আজকের এই বেসুরো কোলাহল থেকে জন্ম দেব ভ্রাতৃবন্ধনের সুন্দরতম সংগীতের। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব, প্রার্থনায় মিলব একত্রে, একদিন আমরা মুক্ত হব এই জেনে, একসঙ্গে শামিল হব সংগ্রামে।
সেটা হবে সেই দিন, যে দিন ঈশ্বরের সন্তানেরা গাইতে পারবে গান, ভাষায় দেবে নতুন অর্থ: ‘ও আমার দেশ, তুমি তো মুক্তির স্নিগ্ধ ভূমি। যে মাটিতে আমার পিতারা শায়িত, যে মাটি তীর্থযাত্রীদের গরিমা, তার প্রতিটি পাহাড়ের ঢাল থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান।’
এবং আমেরিকাকে মহান এক দেশ হতে হলে এটাই সত্য হতে হবে। তাই মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউ হ্যাম্পশায়ারের বিপুল পাহাড়চূড়া থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউইয়র্কের শক্তিমান পাহাড়গুলো থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক পেনসিলভানিয়ার ওই আকাশছোঁয়া আলেঘেনির শীর্ষ থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক কলোরাডোর তুষারমোড়া পাহাড় থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক ক্যালিফোর্নিয়ার বঙ্কিম চূড়া থেকে!
শুধু তা-ই নয়, মুক্তি ধ্বনিত হোক জর্জিয়ার স্টোন মাউন্টেইন থেকেও!
মুক্তি ধ্বনিত হোক টেনেসির লুকআউট পাহাড় থেকে!
মুক্তি ধ্বনিত হোক মিসিসিপির প্রতিটি টিলা ও পাহাড় থেকে। প্রতিটি পাহাড়ের খাঁজ থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান।
যখন আমরা মুক্তিকে ধ্বনিত হতে দেব; যখন প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বসতি, প্রতিটি রাজ্য এবং শহরে বাজবে মুক্তির গান; তখন আমরা সেই দিনকে আরও কাছে নিয়ে আসতে পারব, যেদিন কালো মানুষ ও সাদা মানুষ, ইহুদি ও জেন্টাইল, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক—সবাই হাতে হাত ধরে গাইবে সেই নিগ্রো মরমিসংগীত ‘এত দিনে আমরা মুক্ত হলাম! এত দিনে পেলাম মুক্তি! ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমাকে ধন্যবাদ, আমরা আজ মুক্ত!’
 
Top