পাঁচজন কবির চমৎকার ৫টি কবিতা
বুলেটের দহন
----শফিক রহমান
বুলেটটা'কে বেশ ক'বার
নেড়েচেড়ে দেখে নিলাম,
হয়তোবা কাল সকালে উঠবে
কোনো পত্রিকায় শিরোনাম।
বয়স আমার তেমন কী হবে
হতাশায় ভরা ছিল গ্লানি,
অনেক কিছুতেই মেধা ছিল
শুধু অর্থাভাব সংসারে জানি।
ভার্সিটিতে পড়া হলো না
বাবাকে ধরে নিয়ে গেল জেলে
পোয়াতি বোন বিধবা হলো
রাজনৈতিক নেতার গ্যাঁড়াকলে।
মাথার উপর ভীষণ বোঝা
বাবার নিঃশর্ত মুক্তি চাই,
যে দেশে নেতারা সর্বেসর্বা
সেখানে কি প্রতিকার নাই?
এখন আমার ঘরসংসার
প্রতিবেশীর করুণায় চলে,
আসামির ছেলে সেও অপরাধী
একই রক্তপ্রবাহ বলে।
বাবা ছিল আমার মুক্তি যোদ্ধা
ভাতা বা সনদ নেই তার ,
দেশের জন্য লড়েছে মাঠে
সদা মুখে উত্তর স্বাধীনতার।
বছর ঘুরে স্বাধীনতা দিবস আসে
ন'মাস পরে শুনি বিজয়ের শোর,
আমার স্বাধীনতা আসবে কবে
অমানিশার পরে হবে কাঙ্খিত ভোর।
রাত জেগে জেগে পথচেয়ে থাকি
এই বুঝি এলো বাবা ফিরে,
স্বাধীন দেশে মিথ্যা মামলায়
আদৌ বাবা আসবে কি ঘরে?
বিরোধীদের দলে নাম উঠেছে
মুক্তির দীপ নিভে গেলো,
হাত পা বাঁধা লাশ বুড়িগঙ্গায় ভাসে
বেওয়ারিশ হিসাবে এলো।
এখন আমার কী করণীয়
বলবে কি ঘুণেধরা সমাজ!
মানুষের জন্যই আইন হয়ে থাকে
বেআইনিরা করছে রাজ।
আমার আকাশে মেঘের ঘনঘটা
ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায় ধরন,
কতজন আসে সান্ত্বনা দিতে
তাতে কি কমে এ দহন ।
যে হাতে থাকবে বই খাতা কলম
গড়বে ভবিষ্যতের ধারক,
তারাই আজ পেশিবল দিয়ে
অর্থ,ক্ষমতা বুলেটের বাহক।
আলী আল সালেম এয়ার বেস
জাহারা, কুয়েত ।
হৃদয়ের ব্যাকুলতা
মো: জয়নুল আবেদীন মাহমুদ
রচনাকাল ২২/০৩/২০১৮
প্রভাত: ৬.৩০
তুমি হয়ত রেগে অস্থির কপালের চামড়ায় পড়েছে ভাঁজ,
ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট ফুলিয়ে
পায়চারাই পা দুলিয়ে
তোমার সামনে যেতেও যে আমার ভিষন ভিষন লাজ।
বুঁদ হয়ে আছ বসে জানালা দরজা বন্ধ অন্ধকার ঘরে
কাঁদছ ফুঁপিয়ে অশ্রু ঝরে
হেলান দিয়ে সোফার পরে
কারন আমি সত্যি করে দিব্বি দিয়েছিলাম কেন অমন করে।
আমি কথা দিয়েছিলাম সব ভুলে যাইনি শুধুই জঞ্জালে পড়ে আছি
সময় এখনো যায়নি ফুরে
যাই আমি দূর বহুদুরে
রয়েছি তো কাছাকাছি।
আমার মাথাটা ওলট পালট হয়ে বিকল হয়ে একেবারেই সুমসাম
আমি দিবা স্বপ্নে দেখি কত
তোমার সূরে বিমোহিত শত
চার দেয়ালের বন্ধ অবিরাম।
আজও দেখি তোমার অকরুন কান্নার মাঝে আমার গন্ডে চপেটাঘাত
তোমার পতিত মাটির বাড়ি
জলেনা যে আর উনুনে হাঁড়ি
মেঝেতে পিঁপড়া করে বাজিমাত।
দুপুরের রোদ্দুরে হাঁপিয়ে আসতে চিবুকের ঘামে মলিন মুখ
কাঁটা ঝোপ ঝাড়ে আঙিনা মাখা
ফুলের টবগুলো এলোমেলো রাখা
তুমি জীবন্ত চলচিত্রের ব্যর্থ সুখ।
পরশ্রীকাতর লোলুপের দৃষ্টি তোমাকে করেছে নি:শ্ব দিয়েছে চিরফাঁকি
শুভ্রতা বরণ করেছে কালো কেশ
বজ্রবাঁশির সূরে পাগল নেই শান্তির লেশ
মিথ্যে সাফাই গেয়ে বিকট দাঁড় কাকের মত ডাকি।
তোমার অগ্নী স্ফুলিঙ্গ থেমে।গেছে যেন এক ঝঞ্জা হাওয়া প্রগাঢ় বেদনার রেশ
যেন বিকল ইঞ্জিনের ধোঁয়া উদগিরণ
নিরব নিথর হয়ে হারানো সব বিচ্ছুরণ
ঘাটে এসে তরী ডুবিয়ে উড়ন চন্ডী আছে বেশ।
সরলা নারীর স্বত্ত্ব লাভে তাবৎ পুরুষনামের আস্কারা পাওয়া প্রাণীর আস্ফালন
নির্বিকার উদাস্যের শিশু সম দৃষ্টিপানে
চেয়ে চেয়ে দেখি কত উপহাস আনমনে।
কি ভুলে তব ললাটে এমন আকিঞ্চন।
স্বচ্ছন্দে প্রাণ খুলে কথা বলা মানে এক কেউটের মুখ ভ্যাংচানো নজর
অবয়বে চির উদারতার মেকি ছাপ
অভাগীর মনে দেখেছে নিঠুর কত পাপ
কৃত্তিম চমকদার আচরনে সতত ওজর।
আমি ভাঙতে চাই নিশিত রাতের রজনীর মৌন স্তব্দতা থাকব একা জেগে
সিংহ শাবকের মত হয়ে ক্ষীপ্র দূরন্ত
পৈশাচিক বিষদাঁত ভেঙে দেব অনন্ত
জানি এসব জেনেও তুমি ভিষন রকম রেগে।
দেখতে চেয়েছিলাম উড়ন্ত বিহঙ্গের মত উবে গেছে সে চেলাকোঠার স্বপ্নবাজি
ঈষাণ কোনের কালো মেঘ এসে
ঈষৎ উষ্ণতায় গেলে কেন ভেসে
চাইনা দিতে মিছে সান্তনা এখন শাস্তি নিতেও রাজি।
সুখে থাক প্রণয়ে!
- অভ্র ওয়াসিম
ফিরিয়ে দিতে হবে প্রেমের অধিকার
বসন্তে কিংবা গ্রীষ্মে বা বিরামহীন বর্ষণে।
তুমি ভেবেছো আগুনে পুড়িয়ে ফুঁ দেবে
আমি বাতাসে মিলিয়ে যাব নিঃশব্দ ক্রন্দনে।
তুমি বুঝতে পারনি সবকিছু পুড়ে ছাই হয় না
জলন্ত অনলেও দেখতে পাবে পুষ্পের হাসি।
বজ্রপাতের প্রচণ্ডতা জীবন সংহার করে
জানিয়ে দেয় প্রকৃতিকে করো না জীবন বিদ্বেষি।
আমার সৌন্দর্যে বুঁধ হয়ে নেশার পেয়ালায় ঠোঁট রেখে
চোখের ভাষায় বুঝাতে 'আমাকে ছাড়া বাঁচবে না'!
প্রেমিকও পরোকীয়ায় মজে নিষিদ্ধ শরীরে ডোবে
কত বাহানায় পবিত্রতার শপথে করেছো ছলনা।
হয়ত কোন কোন নারী নিজকে পণ্য করে দেহ
বিলিয়েছে দুঃশ্চরিত্র পুরুষের লালসার অন্ধকুপে।
তুমিও ভেসে গেছো পণ্যের বাজারে
নিষিদ্ধ গন্ধে আকণ্ঠ ডুবে বেশ আছো পাপে।
আমার ভালোবাসা মোটেও সস্তা ছিল না
তুমি নেশাগ্রস্ত হতে ফিরে যেতে মাদকতা নিয়ে।
তুমি দুর্বল নেশাখোর পৌরষহীন অপবিত্র
তুমি পাপের পঙ্কিলতায় ডুবে ডুবে সুখে থাক প্রণয়ে!
২৪.০৩.১৮, সকাল ৯:০৫
মুন্সিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা।
কলঙ্কিত ইতিহাস
মোঃআমির হামজা
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা,
মাতাল মস্তিষ্কে শাসকের আস্ফালন
জাতির সামনে সতর্ক বার্তা।
,
থমথমে রাজপথ
সমর সাজে সজ্জিত সৈনিক,
চৌকস পাহারাদার
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চতুর্দিক।
,
মানবতার মুল্লুকে হায়নার থাবা,
রক্তাক্ত মাটির আত্মচিৎকার,
মেঘের ওপিঠে নিষ্কৃয় সূর্য
চারিদিকেই বিদঘুটে অন্ধকার।
,
আদালত পাড়ায় শকুনের আনাগোনা
বিচারকের কণ্ঠ শিকলে বাঁধা,
অগনিত মানুৃষের বুকফাটা আর্তনাদ,
ৃৃছেঁড়া মানচিত্রে আবাধ্য স্বাধীনতা।
,
সচরাচর মানুষের পদচারণা
নীরব বিদ্রোহে বিক্ষিপ্ত আঘাত,
অজানা গন্তব্যে পথ ছুটে চলা
জানি না এ কেমন প্রতিবাদ।
,
পড়শির সাথে দেহ বিলাস
সাজানো সংসারে হট্টগোলের আভাস,
উলঙ্গ দেহে অনবরত আসা যাওয়া
এ যেন এক কলঙ্কিত ইতিহাস।
~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~~~~~~
সংস্কৃতি সংঘাত
--তাসনীম মাহমুদ
ঘর আমাকে ছুঁতে চায়
বিছানা বালিশ তোষক নিসঙ্গ!
অযত্ন- অনাদারে পড়ে রয়েছে
চক-সেলেট চেয়ার টেবিল বুকসেলফ।
বিষণ্ন হাওয়ায় দোদুল্যমান যে ছায়া;
সেখানে মাঝরাতের একলা ছাদ
রুয়োশুয়ো মেঘের খোঁজে অপলক
ফুলকি’রা সব উদ্ভ্রান্ত- আনমনা।
তবে কেন ব্যর্থ প্রেমিকের মতো ব্যর্থতা কাঁধে
দিনকে দিন পালিয়ে বেড়ানো?
ফেরারী’র জন্য কোন কবিতা নয়; যেমনটা
পরাজিতের জন্য নেই কোন ইতিহাস।
ঘর আমাকে ভালোবাসে;
ভালোবাসে জুতোর ফিতে- কাঠের চেয়ার।
সেখানে চেনা ঘামের গন্ধ জড়ানো কাপড়
আমাকে চায়।
সবুজ ঘাসের ডগায় প্রথম যে শিশির
সে আমাকে চায়।...
যে তার লাঙ্গল চিনতে পারেনি;
সে তার পিতা’কে চেনেনি।...
যে তার জন্মভূমি চিনতে পারেনি;
সে তার মা’কে চেনেনি।...
জেগে আছে প্রথা
জেগে আছে প্রগতি।
-- অদূরেই দাঁড়িয়ে সাংস্কৃতিক বিপ্লব
জীবনের আয়োজন; দর-কষাকষি।
বন্ধু! আমি কাকে দোষ দেবো--
স্বপ্নের খোলসে ঋজু
আমার আত্মা দহন জ্বালাকে; নাকি
গোয়েবেলসধারী বিপ্লবী নেতাকে?
অথচ; ঘর আমাকে ভালোবাসে
ঘর আমাকে ছুঁতে চায়।--
মোকাম বাজার, মৌলভীবাজার।
তাসনীম মাহমুদ
১৫.০৩.২০১৮