এবারের ঈদছুটিতে ঘুরে আসুন নাসিরনগরে।
ছবি ও লেখক:- শাহরিয়ার কাসেম
ছবি ও লেখক:- শাহরিয়ার কাসেম
ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে প্রাকৃতির গোলযোগে এখন আর ছয় ঋতুকে একেক ভাবে চিহ্নিত করা যায়না। অনুভব করা যায়না প্রতিটি ঋতুর স্পর্শ। রৌদ্রতাপ গ্রীষ্ম, টিনের ছালে টিপটিপ শব্দে বৃষ্টির আগমনে সজল বর্ষা, স্নেহময়ী শরৎ, সুমঙ্গলা হেমন্ত, ত্যাগব্রতী শীত এবং নন্দের অমৃত বসন্ত যেন এখন খুঁজে বের করতে হয়। তবে নাসিরনগর বড় বৈচিত্র্যময়। আকাশ নদীর সাথে চলে তাঁর মিতালি। ফসলি মাঠের সাথে কিষাণে দৃঢ় সখ্যতা। উজানের মাঝি মাল্লার নাউ ভাটিয়ালি গান গেয়ে পাল তোলে যায় নাইওরী নিয়ে। হইহুল্লোরে বুনোহাঁসের মত পানিতে গা ভাসায় দুষ্ট ছেলের দল। জেলেরা মাছ ধরছে রাত- বিরাতে।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিকে নাসিরনগর এক ধাপ এগিয়ে। কারণ শতবর্ষী জমিদারবাড়ী গুলোর স্হাপনা দেখলে তা হয়ত সহজেই বোধগম্য হয়। বিশেষ করে হরিপুর জমিদারবাড়ি ও বুড়িশ্বর সুকুমার দেব রায়ের জমিদারবাড়ির নকশা ও শৈল্পিক কারুকাজই সে সময়ের সাক্ষী দেয়। এবং রয়েছে মুগল আমলের মসজিদ, মন্দির।
ফান্দাউকের একপাশে নির্জন এলাকায় অবস্হিত কালীমন্দির। এই শতবর্ষী মন্দির বলভদ্র সেতুর উপড় থেকে দেখলে মনে হবে যেন কোন দ্বীপ ভেসে উঠেছে। শেষ বিকেলে এই মনোরম ব্রিজে সময় কাটায় বহু দর্শনার্থী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত রাজবাড়ী। এটি হরিপুর জমিদার বাড়ি বা হরিপুর রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। তিতাস নদীর পূর্বপাড়ে অবস্থিত বাড়িটি। এটি গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বে এবং নাসিরনগর সদর হতে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তথা নাসিরনগর উপজেলা ও মাধবপুর উপজেলার সংযোগ পথে অবস্থিত।
প্রাসাদটির ভৌগোলিক অবস্থান ২৪ ডিগ্রী ৬'২৯.৪১" উঃ,৯১ ডিগ্রী ১৫'২৬.৩৪" পূঃ। এটির মালিক এবং পরিচালকবর্গ হলো বাংলাদেশ সরকার। জানা যায়,১৮শ শতাব্দীতে প্রাসাদটি জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী (১৮৭০-১৯৩৬) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিলো। তবে কারো মতে এটি গৌরীপ্রসাদ রায় চৌধুরী' এবং কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী মিলিত ভাবে করেছেন।
প্রাকৃতিক দিক দিয়ে নাসিরনগরকে বিচার করলে শতভাগ প্রাপ্তি তাঁরই। ঋতুর পালা বদল যেখানে নিয়ম করে হয়। বর্ষায় খাল, বিল, নদী নালা, হাওর, বাওর পানিতে টলমল। চৈত্রের রোদে মাটি ফেটে খা খা।
সারা বাংলাদেশের মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিতি লাভ করে অাছে নাসিরনগরের কুন্ডা-ধরন্তী মধ্যবর্তী জায়গাটুকু। বিশাল হাওয়ারের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে এক সরু পথ। শেষ বিকেলে দল বেঁধে জমা হয় বহু দর্শনার্থী। তাঁরা গায়ে লাগায় নির্মূল বায়ু। বহুদূর থেকে ভেসে অাছে ঢেউ। ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে বেশ ভালই লাগে অাগত মানুষদের।
নাসিরনগরের ডাকাবাংলোর কথা জানে অনেকেই। লঙ্গনের তীরে অবস্হিত ডাকাবাংলো। সারি সারি গাছে বেষ্টিত এর পুরো এলাকা। এখান থেকে বসেই দেখায় রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা অশ্বত্থ। অশ্বত্থের পাশ দিয়ে বেয়ে যায় সারি সারি ছোট বড় নৌকা অার অাকাশে ডানা মেলে উড়ে চিল। যেন নৈসর্গিক সুন্দরের ভূমি।