চিত্রনায়ক 'শেখ আবুল কাসেম মিঠুন' স্মরণে
উম্মে হাবিবা রাহনুমা
-----------
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা নির্বাচিত হন 'শেখ আবুল কাসেম মিঠুন (শেখ মিঠুন).'
'১৪ সালের শেষের দিক থেকেই তাকে চিনি মোটামুটি। '১৫ সালে এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়তে থাকে ধীরে-ধীরে। উনি কখন কি লিখছেন,তাই পড়তে উন্মুখ হয় থাকতাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!অল্পকিছুদিন পরেই ২০১৫ সালের ২৫ মে তাঁকে হারাতে হলো চিরতরে....
----
১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার দরগাহপুরে জন্মগ্রহনকারী শেখ মিঠুন আমাদের নিকট নায়ক হিসেবেই সমধিক পরিচিত। প্রথম জীবনে তিনি যদি ও সাংবাদিক হতে চেয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে এফডিসিতে সংবাদ সংগ্রহের সুবাদে চিত্রপরিচালক হাফিজ উদ্দিন ও আলমংীর কুমকুমের আমন্ত্রণে অভিনয়ে প্রবেশ করেন। তাঁর প্রথন চলচ্চিত্র অভিনয় 'তরুলতা' নামক চলচ্চিত্রে। এরপর বহু সুপারহিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ঈদ মোবারক,নরম-গরম, সারেন্ডার, বাবা কেন চাকর,নিকাহ, গাড়িয়াল ভাই, ধনবান, ভেজা চোখ,অর্জন, বাদশাহ ভাই ইত্যাদি।
তিনি ছিলেন গীতিকার ও। খুলনা বেতারে একসময় নিয়মিত গীতিকার ছিলেন।
.
বিভিন্ন চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখার অদম্য ইচ্ছার ফলে প্রায় দু'শো স্ক্রিপ্ট লিখেন তিনি। তাঁর করা কয়েকটি চিত্রনাট্য মাসুম,অন্ধবধূ, দস্যু ফুলন, প্রেম-প্রতিজ্ঞা, দিদার, বিধাতা, পরিবর্তন,কসম ও আহবান।
.
১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র লেখক সমিতি, ফিল্ম ফেডারেশন সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের সাথে তিনি অত্যন্ত মেধা,বিচক্ষনতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জড়িত ছিলেন।
১৯৮৬ সালে এফডিসিতে অনুষ্টিত এক অনুষ্ঠানে শেখ মিঠুনকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সারাজীবন অবদানের জন্য তাঁকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়েছে।
.
তাঁর রচিত ৭৪-এর দূর্ভিক্ষ নিয়ে আঞ্চলিক উপন্যাস 'আমরাই' ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় গ্রন্থ 'শিক্ষা ও সংস্কৃতির নেতৃত্বঃ সংকট ও সংঘাত' ব'ইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে।
-----
জীবনের শেষ সময়ে এসে শেখ মিঠুন সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ সংস্কৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক হিসেবে শেষ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শ্রেষ্ঠ ইসলামী সংগীত রচয়িতা সংগঠক 'কবি মতিউর রাহমান মল্লিক' সহ আরো অনেক কবি,সাহিত্যিক, সু-লেখকের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারাদেশে প্রচার করেছেন সুস্থ সংস্কৃতি,যাতে ঐতিহ্য ধারা সংস্কৃতি মানুষের মনে গ্রোথিত হয়,তরুণ প্রজন্ম যাতে বিপথগামী না হয়,শিশুরা যাতে মূলেই বিনষ্ট না হয়। এ জন্য তিনি মাঠে ময়দানে বক্তৃতা করেছেন,মঞ্চ কাঁপিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তৈরি করেছেন সুস্থ ধারার টেলিফিল্ম,নাটক, গানের ভিসিডি। বাংলায় ডাবিং করেছেন আন্তর্জাতিক ইসলামী চলচ্চিত্রসমুহ।
সাংস্কৃতিক জগতে রোপন করেছেন শান্তির দীক্ষা সম্বলিত সুমিষ্ট ফসল,যার ধারাবাহিকতায় আজো বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিরলস সাধনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ ও 'শেখ মিঠুন' ভাই বিহীন এগিয়ে চলছে ধীরে ধীরে।কিন্তু তাঁর মতো বিজ্ঞজনের ন্যায় দিকনির্দেশনা আর কেউ দিতে পারয়েনা!
----
চলে যাওয়ার কিছুদিন আগেই তিনি তাঁর জীবনের কিছু ঘটনা লিখেছিলেন ধারাবাহিকভাবে। আমি ফেসবুকে আসলেই তাঁর পেজ এ আগে ঘুরে আসতাম নতুন কি লিখেছেন তা দেখার জন্য।খুব কষ্ট লাগত তার শারিরীক ও
পারিবারিক অবস্থা জেনে।
যেদিন তিনি মারা গেছেন বলে জেনেছি,অজান্তেই চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু করল।
.
তাঁর কর্মের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন,কেবল মাদ্রাসায় পড়লেই ইসলাম প্রচার করা যায়না,এর জন্য ইচ্ছা ও চেষ্টা দরকার।
----
আমার ক্ষুদ্র চিন্তায় আর কি'ইবা লিখব আজ। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা,তিনি যেন এই মহান ব্যাক্তিকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দেন।আমীন।
-------
২৫-০৫-২০১৬ ইং
.
লেখিকাঃ উম্মে হাবিবা রাহনুমা।
সদস্যাঃ বাংলাদেশ প্রজন্ম সাহিত্য পরিষদ।
Post a Comment
Post a Comment